রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৪৯ am
আব্দুস সবুর, তানোর : দরিদ্র কৃষক আব্দুল্লাহ। এবারে প্রথম বারের মত দু্ই বিঘা জমিতে আলু করবেন। এজন্য পটাশ সার নিতে যান রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার তালন্দ বাজারের বিসিআইসির সাব ডিলার গনেশের কাছে। গত ১৩ নভেম্বর রোববার ছিল তালন্দ বাজারে হাটের দিন। অনেক কৃষক গনেশের দোকানে সার কীটনাশক কিনতে এসেছেন। আব্দুল্লাহ দাড়িয়ে আছেন দোকানের সামনে।
এই প্রতিবেদকসহ আরেক জনকে বলেন ৩ বস্তা পটাশ সারের দরকার। তার করুন আকুতি। তিন বস্তা পটাশ সারের দাম চায় গণেশ চায় ৪ হাজার টাকা। এতেই মাথায় হাত পড়ে আব্দুল্লাহর। কারণ সরকারি মূল্য ৭৫০ টাকা। আর সেই পটাশ গণেশ ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। ইচ্ছেমত গণেশ প্রকাশ্যে দিবালোকের মত সিন্ডিকেট করে কৃষকের পকেট কাটলেও নিরব অবস্থায় কর্তৃপক্ষ।
আবার তালন্দ ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার সুমনের ম্যানেজার রতন কৃষকদের সার না দিয়ে রাতের আধারে গনেশকে নিয়ম বহির্ভুত ভাবে সার দিয়েই যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেন। ফলে সার নিয়ে কারসাজি কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। এতে করে কৃষকদের মাঝে সারের দূর্ভীক্ষ শুরু হয়েছে। সেই সাথে কৃষকের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, গত রোপা-আমন মৌসুম থেকে শুরু হয় সার নিয়ে মহা কারসাজি। প্রায় এক বছরেও দূর হয়নি সার নিয়ে মহাসিন্ডিকেট। সরকারি মূল্যের চেয়ে দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে পটাশ ও ডিএপিসহ সব ধরনের সার।
গত সোমবার উপজেলার কামারগাঁ ইউপির বিসিআইসি সার ডিলার বিকাশ দোকানে শতাধিক কৃষককে দাড়িয়ে রেখে সার দেননি। এক কৃষকের আঙ্গুল কেটে যায়। তারপরও পাননি সোনার হরিন নামক সার।
তালন্দ ইউপির বিসিআইসি ডিলার সুমন। কিন্তু সার দিচ্ছেন তার ম্যানেজার রতন। তার দোকান নারায়নপুর মোড়ে গুদাম আছে। আর গ্রামে এনামুলের বালাইনাশক দোকানে মেমো দিচ্ছেন রতন। সেখানেও শতাধিক কৃষক সারের জন্য অপেক্ষা করলেও রতন সার দিবে না বলা মাত্রই উত্তেজিত হয়ে পড়েন কৃষকরা। তাকে দোকান থেকে বের হতে দেননি কৃষক।
কৃষকদের অভিযোগ, রতন বিভিন্ন নেতার ফোন পেয়ে যেখানে ইচ্ছে সার দিচ্ছেন। তার গুদামে সার থাকার পরও দিচ্ছেন না। অথচ রাতের আধারে তালন্দ বাজারের সাব ডিলার গনেশকে বস্তার বস্তা সার দিচ্ছেন। কেন আমাদের সাথে এতো প্রতারণা। কৃষকের সার নিয়ে কেন এতো ধাপ্পাবাজি। যদি সংকট থাকে তাহলে বাড়তি দামে কিভাবে পাওয়া যাচ্ছে। এসব দেখার কি কেউ নেই বলে আক্ষেপ করেন বিপুল সংখ্যক কৃষক।
এব্যাপারে রতনের কাছে গনেশকে সার দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অস্বীকার করলে আরো উত্তেজিত হয়ে পড়েন কৃষকরা। গত ১৩ নভেম্বর বুধবার গনেশের দোকানে দুই ভটভটি সার আসে। সবগুলোই বিসিআইসি ডিলার রতনের। গনেশের কাছে সারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কালনা গ্রামের শফির কাছ থেকে আনা হয়েছে বলে প্রচুর দম্ভোক্তি করে বলেন, অফিস বলেছে যেখান থেকে পার সার এনে বিক্রি কর। আমি বাড়তি দামে কিনে, বাড়তি দামে বিক্রি করছি। অথচ শফি একজন মানুষিক রোগী হিসেবেই পরিচিত। শফি কোন ব্যবসায়ী নয়। পৌরসভার বিএস এমদাদ জানান, আমি জানতাম না। বিষটি স্যারকে অবহিত করা হবে।
এবিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ জানান, যদি এমন করে থাকে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রা/অ