রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:০৬ am
ডেস্ক রির্পোট : সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে দেশের মানুষ এখন নতুন করে একটি সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের আশা দেখছে।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘এইট পাস দিয়ে আর মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চালালে দেশের উন্নতি হয় না।’
আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত যুব মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানাই, দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তাদের কর্তব্য। আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে দেশের মানুষ এখন নতুন করে একটি সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের আশা দেখছে। এই প্রচেষ্টাকে আরও এগিয়ে নিতে, যুবকরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কেননা তারাই দেশ গড়তে পারে।’
জাতির পিতার ভাষণের সেই অমোঘ মন্ত্র ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা এই ময়দানেই (৭ মার্চের ভাষণে) এ কথা বলেছিলেন। আমিও বিশ্বাস করি ‘বাঙালিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’
আজ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগ আয়োজিত যুব মহাসমাবেশ পরিণত হয় জনসমুদ্রে। ছবি: ফোকাস বাংলা
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। এ দলের শীর্ষ নেতারা মানিলন্ডারিং, চোরাকারবার মামলার আসামি। তাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা শোভা পায় না। এরা (বিএনপি) যত কথাই বলুক আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এগিয়ে যাব এবং বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে তুলবো।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, সারাদেশে আইটি পার্ক, হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে তুলে তার সরকার যুব সমাজকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলছে, যেটা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে সম্ভব ছিল না।
তিনি বলেন, ‘ওই এইট পাস দিয়ে আর মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চালালে দেশের উন্নতি হয় না।’
‘আজকে তরুণ সমাজকে বলবো, তাদের দায়িত্বই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যুবলীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার জন্য।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘বিদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একদা জাতির পিতা যুধ্ববিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে বলেছিলেন যে, তার কিছু না থাকলেও যে মাটি ও মানুষ রয়েছে তা দিয়েই দেশকে গড়ে তুলবেন এবং আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে দেশপ্রেম থাকলে এবং দেশের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকলে সেটা করা যায়।’
‘কাজেই একটা আদর্শ নিয়ে জাতির পিতার যে স্বপ্ন, সে স্বপ্ন পূরণে যুবলীগের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীকে কাজ করতে হবে। আর এটা হবে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সবার প্রতিজ্ঞা’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে যুবলীগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংঠনের জাতীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
যুবলীগের মহাসমাবেশে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের অভিবাদন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুসহ শীর্ষ নেতারা।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, হারুনুর রশিদ প্রমুখ।
এর আগে দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লেকের পূর্ব পাশে সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।
পরে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ শুরু হয়। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যুবলীগের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
মহাসমাবেশ সফল করতে সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হন যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। গায়ে বাহারি রঙের টি-শার্ট, মাথায় ক্যাপ আর হাতে ফেস্টুন নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন তারা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, মল চত্বর, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, রমনা ও তার আশপাশের এলাকা নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। মূল কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে জনসমুদ্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা।
মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে জোরদার করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উদ্যানের বিভিন্ন গেট দিয়ে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা গেট পার হতে হয় নেতা-কর্মীদের। এ ছাড়া মূল সভামঞ্চের কাছাকাছি যেতেও পাড়ি দিতে হয় নিরাপত্তা গেট। সতর্কাবস্থান নেন র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন