মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৩৯ pm
ডেস্ক রির্পোট : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বিপ্লবের নাম করে ১৯৭৫ সালে হত্যা করলো। ১৯৭৭ সালে জাপানি বিমান ছিনতাই হলো, পরে প্রচার করলো ক্যু হয়েছে। ক্যুর নাম করে হত্যা করেছে। কথায় কথায় মৃত্যুর হোলি খেলা করেছে সেসব ঘটনার বিচার হবে। এজন্য তদন্ত কমিটিও হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ন্যায়ের পক্ষে আছেন, তিনি যখন আছেন বিচার হবেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার শেখ হাসিনা করেছেন।
গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ আয়োজিত ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’র আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমি মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের অধীনে ২ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছি ঢাকা জেলার পশ্চিমাংশে। আমাদের তখন (একাত্তরে) মেলাঘর ক্যাম্পে কান্নার রোল পড়েছিল যে খালেদ মোশাররফ মারা গিয়েছেন। কিন্তু না, সেদিন তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দেননি। প্রাণ দিলেন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকে ফলো (অনুসরণ) করছেন বলেই তাকে আজ অনেক কিছু চিন্তা করতে হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু যেসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন কিন্তু করে যেতে পারেননি, তিনি সেগুলো একে একে সম্পন্ন করছেন বলেই আজ বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ একটি ধ্বংসস্তূপ ছিল। ব্রিজ ছিল না, খাবার ছিল না, কাপড় ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পর কাপড়ের জন্য আমাদের লাইন ধরতে হতো। বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরে ধরে বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি খালেদ মোশাররফের অধীনে ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি। তিনি একজন বীরপুরুষ ছিলেন। তাকে অল্পের জন্যও চিন্তিত, মনোবল হারাতে দেখিনি। একাত্তরের যুদ্ধ তার প্রাণ কেড়ে নিতে পারেনি, প্রাণ কেড়েছিল ঘাতকরা।
তিনি বলেন, আমরা অনেক হত্যাকাণ্ড দেখেছি সেখানে যে দায়ী তাকেই শুধু হত্যা করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বেলায় তার সহধর্মিণীসহ সপরিবারে হত্যা করা হয়। তিনি আমাদের ১১ দফা আন্দোলনের সময় প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করতেন, উৎসাহ দিতেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিশ্বাস ছিল, বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনীতে প্রবাহিত হবে সেই ঘুরে দাঁড়াবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন, আজকের বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। তাকেও ১৯-২০ বার হত্যা চেষ্টা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে, ৭৭ সালের ২ অক্টোবর ক্যু ঘটিয়ে হত্যা করেছে।
জিয়াউর রহমান কেন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করলো, ৭ নভেম্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করলো। কারণ জিয়া পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অনুপ্রবেশকারী। আমাদের ভেতরে থেকে পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে কাজ করেছেন। জিয়া কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন, কোন যুদ্ধের গৌরবগাঁথা পাওয়া যায়? যায় না। ৭৫ সালের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ৭৫ সালের ঘটনায় ট্রথ কমিশন করতে হবে, সত্য উদঘাটিত করতে হবে।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানকে সীমান্তে কোনো সম্মুখযুদ্ধে পাওয়া যায়নি। তার অনুপ্রবেশ একটি দীর্ঘমেয়াদি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের ফল। যে দল গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রের নামে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ চালায়, ধর্মের নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে, সে দলের এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। এদের নিষিদ্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপণ্ডপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান বীরবিক্রম, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সশস্ত্র বাহিনীতে হত্যাকাণ্ড নিয়ে গবেষক আনোয়ার কবির প্রমুখ। বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, খুনি জিয়া একাত্তরে পশ্চিম বাংলায় গিয়েছিলেন পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে।
যুদ্ধের সময় তাকে সেক্টর কমান্ডারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে কোনো বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে খুনি জিয়ার নামে সড়ক ছিল যখন কর্তৃপক্ষ জানতে পারে তিনি ঠাণ্ডা মাথার খুনি তখন তার নাম বাদ দেওয়া হয়। জিয়ার তথাকথিত কবরও সংসদ ভবন এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। সভায় বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ও ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গের সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক বলেন, আপনাদের পরিবারকে হয়তো ফিরিয়ে দিতে পারবো না। কিন্তু সেসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ও ৭৭ সালের ২ অক্টোবর শহীদ পরিবারের সন্তানদের পক্ষে সভায় আরও বক্তব্য দেন মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম- এর কন্যা মাহজাবিন খালেদ, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমের কন্যা নাহিদ ইজাহার খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট সাঈদুর রহমানের সন্তান কামরুজ্জামান মিয়া লেলিন, শহীদ সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের সন্তান নুরে আলম। সূত্র : এফএনএস