মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:১৯ pm
আব্দুস সবুর, তানোর : রাজশাহীর তানোরে মানুষিক ভারসাম্যহীন অসহায় প্রতিবন্ধী শমিমের জমিতে ফের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে জমির দখল পেতে আম গাছ লাগিয়েছেন প্রতিপক্ষ মজিবর ও তার ছেলে আতাউর গংরা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বারবার ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলেও রহস্যজনক কারনে প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সম্প্রতি বৃহস্পতিবার সকালের দিকে উপজেলার কলমা ইউনিয়নের ধঞ্জয়পুর গ্রামে ঘটেছে ঘটনাটি।
এঘটনায় জমির প্রকৃত মালিক মানুষিক ভারসাম্যহীন অসহায় প্রতিবন্ধী শমিমের পরিবার ও ভূমি গ্রাসী মজিবরের পরিবারের মাঝে ব্যাপক উত্তজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ীর মত সংঘর্ষ বলে আশংকা করছেন গ্রামবাসীরা। এরআগেও গত মাসের শুরুর দিকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কালাই ছিটিয়েছিলেন মজিবর বাহিনী।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কলমা বাজার পার হয়ে ধঞ্জয়পুর গ্রাম। মাটির কাচা রাস্তা গ্রামটিতে। রাস্তার পশ্চিমে ফাকা অবস্থায় পড়ে আছে ৫০ শতাংশ কৃষি জমি। জমির চারদিকে রোপা আমন ধান সোভা পাচ্ছে। কিন্তু ৩৩ বছর ধরে জমিতে চাষাবাদ করেন ওই গ্রামের লুৎফর রহমান। তিনি মামলাধীন এই জমি তার অসুস্থ মানুষিক ভারসাম্যহীন পুত্র শামিমের নামে দলিল করে দেন। জমির আইল ও মাঝে কিছু আমের গাছ রোপন করে দখলে নেওয়ার জন্য মরন কামড় দিয়েছেন মজিবর তার ছেলে আতাউর গংরা।
সেখানে ছিলেন লুৎফর রহমান ও তার পুত্র বধূ মামলার বাদি বিউটি খাতুন।
লুৎফর জানান, জমিটি আমার ভাই মজিবর আমার কাছে বিক্রি করেন। পরে মজিবর তার স্ত্রীর নামে এই জমি দলিল করে দিয়েছেন এমন দাবির প্রেক্ষিতে দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছেন । কিন্তু ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।
পরে সহকারী কমিশনার ভূমি এসিল্যান্ডের কাছে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী মাসের ১০ নভেম্বর ১৪৪ ধারার শুনানি হওয়ার দিন ধার্য্য আছে। কিন্তু মজিবর তার ছেলে আতাউর, রিপনসহ বেশ কয়েকজন গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে জোরপূর্বক আমের গাছ রোপন করেন। মামলা আছে আদালত যার পক্ষে রায় দিবেন সে জমি পাবে। আমার ছেলের বিরুদ্ধে রায় হলে আমরা জমি ছেড়ে দিব। তাই বলে লাঠির জোরে এসব হবে কেন বলে আক্ষেপ করেন তিনি। আর বারবার ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলেও তদন্তকারী এসআই প্রভাবিত হয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও দাবি সংশ্লিষ্টদের।
শামিমের স্ত্রী বিউটি খাতুন জানান, আদালত যার পক্ষে রায় দিবেন সে জমি পাবে। আমাদের লাঠির জোর নেই এজন্য নিজের জমিও দিয়ে দিতে হবে। তারা যখন গাছ রোপন করেন বাধ্য হয়ে ৯৯৯ নম্বরে কল করার পর মামলার তদন্তকারী এসআই মজিবর আসেন। তিনি এসে সাব জনিয়ে দেন, আমাদের কিছু করার নাই। আদালতে মামলা আছে দোহায় দিয়ে কোন কিছুই করছেন না। যেখানে ১৪৪ ধারা বজায় রাখতে বিজ্ঞ আদালত নির্দেশ দিলেও তার এমন আইন বিরোধী কথা। তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ভূমি অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাদের সবকিছু গায়েব। পরে এসিল্যান্ডকে অবহিত করলে কাগজ বের হয়। থানায় গিয়েছিলাম, সেখানেও আদালতের দোহায় এবং সেখানে যাবার পরামর্শ।
মজিবরের ছেলে আতাউর গাছ লাগানোর কথা স্বীকার করে জানান, জমিটির প্রকৃত মালিক আমার মা। কিন্তু চাচা লুৎফর জালিয়াতি করেছেন। বারবার আপোষ মিমাংসার কথা বললেও মানে না। এরআগে কালাই ছিটিয়ে ছিলাম সেটা ঘাস মারা বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছে। আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি কিভাবে ভেঙ্গে গাছ লাগিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসের ৪ তারিখে তাদের ১৪৪ ধারা বাতিল হয় এবং আমাদের দখল বলবত থাকে। যার শুনানি আগামী ১০ নভেম্বরে বলে আবল তাবল কথাবার্তা বলতে থাকেন তিনি।
তানোর থানার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মজিবর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনিও জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি জমিতে আমগাছ লাগানো আছে। আর ওই বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা আছে তেমন কিছু পুলিশের করার নেই বলে এড়িয়ে যান। পরে ১৪৪ ধারা অমান্য বিষয়ে জানান জিডি করে আদালতকে অবহিত করা হবে।
এব্যাপারে তানোর থানার ওসি কামরুজ্জামান মিয়া জানান, ৯৯৯ নম্বর থেকে কল করা হয়েছিল। পরে ঘটনাস্থলে এসআই মজিবরকে পাঠানো হয়। শামিমের স্ত্রী বিউটি থানায় এসেছিল। অভিযোগ দিতে বলা হয়। কিন্ত সে জানায় আদালতে মামলা আছে। তারপরও তারা অভিযোগ করলে দোষীদের ছাড় দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, উপজেলার কলমা ইউপির ৩১ নম্বর ধঞ্জয়পুর মৌজার আরএস ২৫ নম্বর খতিয়ানে ৪৫ নম্বর আরএস দাগে ৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন লুৎফর রহমান। তিনি এ জমিসহ আরো জমি ছেলে শামিমকে ২০২১ দান করে দেন। ওই দান দলিল মূলে শামিমের নামে খাজনা খারিজ সবই রয়েছে। আজকের তানোর