শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:২৬ pm
ক্রীড়া ডেস্ক : জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে রাখবে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আজ বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান।
চুক্তি অনুযায়ী তিনি এখনো দুদকের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেও ভবিষ্যতে সেই চুক্তি নবায়ন করা হবে না। এ কারণে আসন্ন আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের কোনো কার্যক্রমেও তাকে রাখা হবে না বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির অন্যতম এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
দুদক কমিশনার বলেন, ‘কোনো বিতর্কিত মানুষের সঙ্গে দুদক নিজেকে জড়াতে চায় না। এ কারণে আসন্ন আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের কোনো কার্যক্রমেও তাকে রাখা হবে না।’
শেয়ারবাজার কারসাজি এবং বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি করার পর সাকিবকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে তাকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডার হিসেবে রাখা হবে কি না-এমন প্রশ্নে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারকে ২০১৮ সালে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে দুদক। বিনা পারিশ্রমিকে দুদকের শুভেচ্ছা দূত হয়ে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও অংশ নেন সাকিব। ওইসব বিজ্ঞাপনে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার বার্তা তুলে ধরেন বিশ্ব ক্রিকেটের এই পোস্টারবয়।
অথচ গত কয়েক মাসে সাকিবকে নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে। বাংলাদেশের আইনে জুয়া এবং এ সংক্রান্ত যেকোনো চুক্তি বেআইনি হলেও গত ২ আগস্ট সাকিব আল হাসান তার অফিসিয়াল ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়ে বেটউইনার নিউজের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার ঘোষণা দেন।
বেটউইনার একটি অনলাইন বেটিং ও ক্যাসিনোর ওয়েবসাইট। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
সাকিবের ঘোষণার পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান সাফ জানিয়ে দেন, সাকিবকে বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি অথবা বাংলাদেশের পক্ষে খেলার মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে। বিসিবি প্রধানের ওই হুমকির পর সাকিব বেটউইনার নিউজের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানান। ফেসবুকে দেওয়া পোস্টও সরিয়ে ফেলেন। তারপর সাকিবকে অধিনায়ক করে বিশ্বকাপের জন্য টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা করে ক্রিকেট বোর্ড।
ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শেয়ারবাজারে কারসাজির সঙ্গে তার নাম উঠে আসে। অথচ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই অধিনায়কের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কাজে লাগাতে কয়েক বছর আগে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিনিয়োগকারীদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে তাকে দিয়ে বানানো হয় টেলিভিশন বিজ্ঞাপনও।
সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি করে যে চক্রটি ১৩৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বলে বিএসইসির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, সেই চক্রের সঙ্গে নাম এসেছে সাকিব আল হাসানেরও। বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগ কারসাজির ঘটনায় যে সাতটি প্রতিবেদন করেছে, সেখানে কমপক্ষে দুটিতে সাকিবের বিও হিসাবের কথা উল্লেখ আছে। আর কয়েকটির মধ্যে তার মালিকানাধীন কোম্পানি মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডের নাম এসেছে।
এসব কারসাজিতে মূল অভিযুক্ত পুঁজিবাজারে বহুল আলোচিত-সমালোচিত মুখ আবুল খায়ের হিরু। সমবায় অধিদপ্তরের প্রথম শ্রেণির এই কর্মকর্তার ব্যবসায়িক পার্টনার সাকিব আল হাসান।
শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে সাকিবের নাম জড়িয়ে পড়া নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ক্রিকেটারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সাকিবের সঙ্গে দুদকের যে চুক্তি হয় তা কোনো সময়াবদ্ধ চুক্তি না। চুক্তিতে বলা ছিল, কোনো পক্ষ চাইলে তিনমাসের নোটিশে চুক্তি বাতিল করতে পারবে।