ডেস্ক রির্পোট : আবারও নতুন নামে দল করার গুঞ্জন উঠেছে জামায়াতকে নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এই দলটি এবার ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ বা ‘বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার পার্টি’ নামে নিবন্ধন করার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নতুন এ দলটির নেতৃত্বে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার ও সেক্রেটারি হিসেবে সাবেক শিবির নেতা নিজামুল হক নাঈমের নাম শোনা যাচ্ছে। আগামী ২৭ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদনের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। এরমধ্যেই নতুন নামে আবেদন করা হতে পারে।
এ বিষয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের অবশ্য ভিন্নমত প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রাতে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘জামায়াত নতুন নামে কোনও দল করছে না।’
নতুন দলের প্রধান হিসেবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকারের নাম আসছে, এমন প্রশ্নে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাদের বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’ পরে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকারকে ফোন করা হলে তিনি মন্তব্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানান।
এ বিষয়ে জামায়াতের ঢাকার একটি জোনের পরিচালক বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নতুন নামে পলিটিক্যাল পার্টি আসবে। প্রস্তাবিত নাম ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি’। দায়িত্বে কারা থাকবেন দুদিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে। সবকিছু আন্ডার প্রসেস। তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির এখনকার নেতাদের কেউ থাকবেন না। নিবন্ধনের জন্য ইতিবাচক সিগন্যাল আছে। জামায়াতের গঠনতন্ত্রের কাছাকাছি গঠনতন্ত্র হয়েছে। ইসলামের নামে কিছু থাকবে না। সবকিছু ধীরে ধীরে হবে। গঠনতন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধ থাকবে।’
জামায়াতের সাংগঠনিক এই নেতা এও জানান, নতুন দলে যারা আসবেন বা থাকবেন, তাদের জামায়াত থেকে পদত্যাগ করানো হবে। না হলে রাজনৈতিক কৌশলের কারণে বহিষ্কারও দেখানো হতে পারে।
জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশেই নতুন দলের অফিস খোঁজা হচ্ছে। এছাড়া, ইসলামী ব্যাংক মালিবাগ শাখায় দলের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়নি বলেও জানায় সূত্র।
জামায়াতের একজন উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল জানান, অন্তত সপ্তাহখানেক আগে জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠকে নতুন নামে দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ‘অপরিচিত কিছু নেতা’ বের করে নতুন দলের দায়িত্বে আনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। যাদের জামায়াত হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না, এমন ব্যক্তিদের নতুন দলে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সূত্রের দাবি, নিবন্ধন হয়ে গেলে পরে অপরিচিতদের সরিয়ে মূল নেতাদের সামনে আনা হতে পারে।
মঙ্গলবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে জামায়াত ঘনিষ্ঠ একজন বলেন, ‘শুনলাম, জসিম উদ্দিন সরকার স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে অপারগতা জানিয়েছেন। এখন মনির উদ্দিন নামে শিবিরের একজন সাবেক নেতাকে সভাপতি বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠক থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাবনা পাঠানো হয়, বিবেচনার জন্য। এরপর শুরা সদস্যদের অভিমতের ভিত্তিতেই নতুন নামে সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয় এবং ৫ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি গঠিত হয়।
যদিও এই কমিটি গঠনের বিষয়টি গোপন রাখার অভিযোগ এনে ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে অবস্থানরত ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মনজুকে।
এরপর ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও মুজিবুর রহমান মনজু ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রক্রিয়া শুরু করেন। যার ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের মে মাসে ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ নামে রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই দলটিও সম্প্রতি নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে।
জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে জাস্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নামে একটি দল আবেদন করেছে। এই দলটিতেও জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। এছাড়া অন্তত আরও প্রায় ৭টি দল রয়েছে, যেগুলোতে জামায়াত-শিবিরের নেতারা বিভিন্ন পদে রয়েছেন। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন