শনিবর, ২৭ জলাই ২০২৪, সময় : ০৬:৩৬ am

সংবাদ শিরোনাম ::
কোটা সংস্কার সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ আরও দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু নগরীতে ছাত্রদলের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ, আটক ৫ হতাহতের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর নাচোলে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আজিজুর সভাপতি ও আবু সায়েম সম্পাদক সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে সাবেক ডাকসু নেতা আখতার আটক রাজধানীতে রীরমুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ বৃহস্পতিবার গাজায় ইসরাইল বাহিনীর হামলায় নিহত ৫০ রাবি অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা, দুপুর ১২টায় হল ত্যাগের নির্দেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলন : সারাদেশে সংঘর্ষ, নিহত ৫ বিভাগীয় পর্যায়ে রাজশাহীতে সংবর্ধিত হলেন পাঁচ শ্রেষ্ঠ জয়িতা নাচোল উপজেলা হাসপাতালে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন ক্রয়ে ৩০ কোটি টাকা লোপাট কোটাবিরোধী আন্দোলকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত ৮০ বাগমারায় এনজিকর্মীর আপত্তিকর ভিডিও ধারণে ৩ জন গ্রেফতার আরইউজের সদস্য হতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান ছাত্রলীগের তিন নেতার পদত্যাগ, ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চাকরিতে কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ নাচোলে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত কোটা বিরোধী আন্দোলনে রাবি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
ঢামেক ফরেনসিক মর্গ : আলামত খুঁজতে ছুরি কাঁচিই ভরসা

ঢামেক ফরেনসিক মর্গ : আলামত খুঁজতে ছুরি কাঁচিই ভরসা

আজকের তানোর ডেস্ক :

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মর্গ শুধু নামেই আধুনিক মর্গ। এখানে এখনো মান্ধাতার আমলের ছুরি-কাঁচি দিয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়। আলামত খুঁজতে লাশের বিভিন্ন অংশ কাটাকুটি করা হয়। অথচ উন্নত দেশ এমনকি পাশের দেশ ভারত ও নেপালে কাটাছেঁড়া ছাড়াই ময়নাতদন্ত পদ্ধতি চালু হয়েছে। এসব দেশে ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে এমআরআই, সিটি স্ক্যান ও এক্সরে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মর্গ ঢামেক ফরেনসিক মর্গে এসব যন্ত্রপাতির কোনোটিই নেই। এমনকি লাশ সংরক্ষণের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। অব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট হচ্ছে।

ঢামেক মর্গ সূত্রে জানা গেছে, এখানে চারটি এসির সবকটিই দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। আর লাশ সংরক্ষণের পাঁচটি ফ্রিজের মধ্যে দুইটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। আরেকটি ফ্রিজে দীর্ঘদিন ধরে তিন বিদেশি নাগরিকের লাশ রয়েছে। এছাড়া আইনি জটিলতায় এক ব্যবসায়ীর লাশ আটকে আছে। ফলে দুটি ফ্রিজ নিয়ে লাশ সংরক্ষণে সেখানকার কর্মীদের হিমশিম খেতে হয়। লাশ সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানান, ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতালের মর্গে আগে প্রতিদিন গড়ে আট থেকে ১০টি লাশের ময়নাতদন্ত হলেও এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গ হওয়ার পর এখানে আসা লাশের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এরপরও এ মর্গে প্রতিদিন ৫-৬টি করে লাশ আসে। এর মধ্যে আত্মহত্যা, সড়ক দুর্ঘটনা, খুনসহ বিভিন্ন কারণে অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। এছাড়া বেশির ভাগ অজ্ঞাতপরিচয় লাশ মরচুয়ারিতে রাখা হয়। প্রতিদিন অন্তত দুটি অজ্ঞাতপরিচয় লাশ ঢামেক মর্গে আসে। শনাক্তের জন্য লাশগুলো সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু এসব লাশ সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে লাশগুলো মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। এছাড়া এসি বিকল থাকায় লাশেও পচন ধরে।

রোববার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মর্গের ফ্রিজে ছয়টি অজ্ঞাতপরিচয় লাশ রাখা হয়েছে। মর্গের সহকারী সিকান্দর আলী যুগান্তরকে বলেন, এসব অজ্ঞাতপরিচয় লাশ শনাক্ত না হলে কিছু দিন রাখার পর নিয়ম মেনে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়। তিনি বলেন, দুটি ফ্রিজে লাশ অদলবদল করে রাখি। একটি লাশ কয়েক ঘণ্টা ফ্রিজে রাখার পর তা বের করা হয়। এরপর বাইরে রাখা লাশ ফ্রিজে রাখা হয়। এভাবেই মর্গের কার্যক্রম চলছে। তিনি আরও জানান, ছুরি-কাঁচি দিয়েই এখানে ময়নাতদন্ত কার্যক্রম চালানো হয়।

মর্গের কর্মীরা জানান, ফ্রিজ সংকটে মেঝে অথবা স্টেচারের উপরে লাশ রাখা হয়। যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করায় অনেক সময় লাশে পচন ধরে যায়। সংরক্ষণ না করায় পচা-গলা গন্ধের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন। ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই হাইকোর্ট ঢামেক হাসপাতাল মর্গের ফ্রিজ মেরামতের আদেশ দেন। প্রায় তিন বছরেও সেই আদেশ মানা হয়নি। ফরেনসিক বিভাগ সূত্র জানায়, বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। ফ্রিজগুলো সারাতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বছরে অন্তত শতাধিক লাশ আসে। এগুলো আলামত সংরক্ষণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গুলিবিদ্ধ কোনো লাশ মর্গে এলে গুলির চিহ্ন ধরে অনুমানভিত্তিক কেটেকুটে আলামত সংগ্রহ করতে হয়। অনেক সময় লাশ টুকরো টুকরো করে আলামত হাতড়ে বেড়াতে হয়। অথচ উন্নত দেশের মর্গে অত্যাধুনিক পোর্টেবল এক্সরে মেশিন রয়েছে। ডিজিটাল পোর্টেবল এক্সরে মেশিনের মাধ্যমে মাত্র দুই মিনিটে লাশে থাকা বুলেটের অগ্রভাগ (প্রোজেক্টাইল) শনাক্ত করা যায়। ছড়রা গুলির প্যালেট, বোমা কিংবা এ জাতীয় বস্তুর স্পি­ন্টারসহ অন্যান্য আলামত বের করা যায়।
একজন চিকিৎসক জানান, পোর্টেবল এক্সরে মেশিনের দাম আকাশচুম্বী নয়। ৫-৭ লাখ টাকা হলে মেশিনটি পাওয়া যায়। অথচ আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে সনাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে পোস্টমর্টেমের কাজ করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, ফ্রিজ ও এসি মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেক আগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগে কয়েকবার ফ্রিজ সারানো হলেও কিছুদিন পরই আবার বিকল হয়ে যায়। তিনি বলেন, সঠিকভাবে লাশ সংরক্ষণ না করা গেলে মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ফরেনসিক বিভাগ একটা অবহেলিত বিভাগ। ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটির কথা বেশ কয়েকবার মৌখিকভাবে উপস্থাপন করেছি। কিন্তু সেটা এখনো পাইনি।

তিন বিদেশির লাশ : ২০১৮ সালের ২৫ মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মার্কিন নাগরিক রবার্ট মাইরন বার্কেটের লাশ ঢামেক মর্গে পড়ে আছে। এছাড়া কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়িতে মারা যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণী থিইসিয়া সিকেওয়েস্ট ওরফে তিশা জামানের লাশ প্রায় ছয় বছর পড়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে হাজতি ভারতীয় নাগরিক মানিকাণ্ডার লাশও পড়ে আছে। ২০১৪ সাল থেকে ব্যবসায়ী খোকন নন্দী ওরফে রাজীব চৌধুরীর লাশ পড়ে আছে। এ লাশের দাবিদার দুই ধর্মের দুই নারী।

সূত্র : যুগান্তর।

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.