মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৪৮ pm
আব্দুস সবুর, তানোর : রাজশাহীর তানোরে ‘সিদীপ’ নামের বে সরকারি এক এনজিও মন্দার আশংকা থেকে কৌশলে গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার নামে পুরো টাকা আদায় করে আর ঋন দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে গ্রাহকরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। কারণ পূণরায় কেউ লোন পাবার আশায় এক সঙ্গে ১০ থেকে ১২ হাজার, আবার কেউ টারও বেশি টাকা ধার দেনা করে বকেয়া ঋণ পরিশোধ করছেন নতুন ঋণ পাবার আশায়।
কিন্তু সিদীপ এনজিও মাঠকর্মী ও ম্যানেজার টাকা আদায় করার পর বেশ কয়েক সপ্তা ধুরে হয়রানি করে আর দিচ্ছেন না ঋণ। ফলে গ্রাহকের সাথে এনজির প্রতারণা’র বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। যে কোন মুহুর্তে এনজিওর মাঠকর্মী থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদদেরও অপদস্থ্য করার কথাও বলছেন। নচেৎ ওই এনজি’র বিরুদ্ধে প্রতারণা মুকুল মামলা করার কথাও অনেকে ভাবছেন বলেও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, করোনায় বিশ্বব্যাপী চলছে খাদ্য ঘাটতি অর্থনৈতিক মন্দা। আগামীতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে মর্মে দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে এমনই বার্তা দেয়া হচ্ছে। যার কারণে কিছু এনজিও শুরু করেছেন বাড়তি ঋণ প্রদানের আশ্বাসে কিস্তি আদায় কৌশল। এতে অনেক দিনমজুর তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন।
এবিষয়ে তানোর পৌর সদরের গুবিরপাড়া মহল্লার বাসিন্দা নারগিস বেগম অভিযোগ করে বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ‘সিদীপ এনজি’র সাথে ঋণ নেয়া দেয়া করছেন। তার স্বামী আব্দুল ওহাব। তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল মোটা চাকার অটো ভুটভুটি। ঘরে রয়েছে তিনটি সন্তান। গত সপ্তায় সিদীপ এনজিও ঋণ দিবে বলে বকেয়া প্রায় ১১ হাজার টাকা শোধ নেয়।
ওহাব আরও জানান, আমরা এখন ঋণ নিব না। কিন্তু এনজিওর মাঠকর্মী হায় ও আশিক এক প্রকার জুলুম করে বকেয়ার পুরো নেয়। আর বলে চাহিদা মতো ৬০ হাজার টাকা ঋণ দিবে বলে। এই মর্মে নতুন ফরম পূরণ ও প্রয়োজনীয় কাগজেও লিখালেখি করে। আজ কাল করে তারা হয়রানি করতে থাকে। কিন্তু গত মঙ্গলবারে ঋণ দেবার কথা বলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদেরকে অফিসে জিম্মি করে রাখে। পরে হুমকি দিয়ে বলেন, বাঁচতে চাইলে সঞ্চয়ের ১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান, নইলে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে বলে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।তাদের এমন নোংরা আচরণে আমার কোলের শিশুও ভয়ে আতঁকে উঠে।
নারগিস বলেন, ধার দেনা করে প্রায় ১১ হাজার টাকা দিয়েছেন ঋণ পাবার আশায়। কিন্তু ঋণ পাচ্ছেন না। বেশকিছু দিন ধরে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। সম্প্রতি মঙ্গলবার অফিসে ডেকে একবেলা বসিয়ে রেখে নোংরা ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয়। আমরা গরীব অসহায়। একদিন ভ্যান না চালালে পেটে ভাত জোটে না। আর শুধু আমি নয়, আরো কয়েকজনকে তারা তাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য সদস্যাদের বলব আপনারাও তাদের কে কিস্তি দেয়া বন্ধ করে দেন। তারা বড় সন্ত্রাস, তাদের নাকি থানা পুলিশ সব পকেটে। নিয়োমিত কিস্তি দিয়ে থাকি, পাঁচ ছয় বার ঋনও নিয়েছি। কোন সমস্যার কথাও বলছে না। আবার তাদের অফিসে অনেক ফ্রিজ রয়েছে। এসব তারা দিয়ে প্রতারণা করেন।
এই এনজিওর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া একান্ত দরকার। এসময় ভ্যানের ভাড়াও কম এবং এক প্রকার সংকটে বা অভাবে কাটছে দিন। আর আমাদের কাছ থেকে এতো টাকা নিল, কিন্তু ঋণ দিল না। আবার এক বেলা আমার স্বামীকে বসিয়ে রাখল। দেশে কি এসবের কোন বিচার নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি। আর যারা গরীব অসহায়দের সাথে এমন জালিয়াতি প্রতারণা করে, তাদেরকে আইনের আওতায় কেন আনা হয় না। এরআগে দুপুরে ডেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে ফেরৎ পাঠায়। অথচ টিভির খবরে শুনেছি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস সময়। এরা তো সরকারের এসব নিয়মও মানে না। নাকি সরকারও এধরনের এনজিওর কাছে জিম্মি।
জানা গেছে, উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ এনজিও নির্ভর। বিশেষ করে ছোট যানবাহন চালক, শ্রমিক, মৎসজীবি থেকে শুরু করে সকলেই একাধিক এনজিও ঋণের উপর নির্ভর। এজন্য বৈধ অবৈধ এনজিওর ছড়াছড়ি। এনজিওর ঋণ পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। এজন্য এনজিওর দিকে ঝুকে পড়েছেন তারা। আর এনজিও গুলোর কাজের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের ইচ্ছেমত চলে কার্যক্রম। দিন রাত ছুটি কিছুই থাকে না। তারা মানেন না সরকারি নিয়ম-কানুন। আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে চলে এনজিও আর কর্মকর্তা কর্মচারীরা সবাই থাকেন ওই ভবনে। সকাল সাতটা থেকে টানা রাত্রি আটটা ও নয়টা পর্যন্ত চালিয়ে যায় অফিস।
সিদীপ এনজিওর মাঠকর্মী আব্দুল হাই জানান, সমস্যা আছে, এজন্য ঋণ দেওয়া হয় নি। আপনার সাথে বসে কথা বলা হবে। ঋণ দিবেন না তো একসাথে এতো টাকা নিলেন কেন প্রশ্ন করা হলে কোন সদ উত্তর না দিয়ে ব্যস্ত আছি বলে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ঘটনা সম্পর্কে অবহিত নয়। তবে, কোন এনজিও গ্রাহকের এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ইউএনও। আজকের তানোর