মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৩৭ pm
ইমরান হোসাইন :
নিয়মে থাকলেও বাস্তবে হয়নি রাজশাহীর তানোরে দুই পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু তানোরে দুই পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে।
পুরো ৯ বছরেও হয়নি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও পৌর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। তবে, গত ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারীতে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপরে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ও তৎকালিন সময়ের তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানীর মধ্যে দলে আধিপত্যের বিস্তার নিয়ে আন্তঃদ্বন্দ্ব শুধু হয়। পরে তাদের ওই আন্তঃদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে সংঘর্ষে রুপ নেয়। এতে তানোর আ’লীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলালীগ ও শ্রমিকলীগ দু’ভাগে বিভক্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতে গত ১০ বছর পর কেন্দ্র থেকে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ঘোষণা করা হয়।
তথ্যানুন্ধানে জানা গেছে, দলের হাইকমান্ড থেকে ঘোষণা অনুযায়ী সম্প্রতি চলতি বছরের ১৫ জুলাই সারাদিন ব্যাপি তানোর সদরের গোল্লাপাড়া বাজারস্থ ফুটবল মাঠে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন উপজেলার কলমা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও সম্প্রতি জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২ নম্বর সদস্যপদে নির্বাচিত হন মাইনুল ইসলাম স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তানোর পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার। কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে এতো অল্প সময়ে মাত্র ৯৭ দিনেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। তবে, অনুমোদন ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন বলে জানান নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সরকার। তিনি আরও বলেন, উপজেলার সব ইউনিয়ন ও পৌরসভায় আ’লীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলালীগ ও শ্রমিকলীগসহ যতলীগ আছে সব কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। নতুন নেতৃত্বে পর্যায়ক্রমে সব ঢেলে সাজাতে হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলার দুই পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০১৩ সালের জানুয়ারী থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সেই থেকে ১০ বছর ধরে মেয়াদ উত্তীর্ণ একই কমিটিতে চলছে ইউনিয়ন ও পৌর আওয়ামী লীগ ছাড়াও সহযোগী সংগঠন। এরমধ্যে রয়েছে- কলমা, বাধাঁইড়, পাঁচন্দর, সরনজাই, তালন্দ, কামারগাঁ ও চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়ন। আর তানোর ও মুন্ডুমালা এই দুটি পৌরসভায় আ’লীগ ও সহযোগী সংঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির বেশির ভাগ স্থানীয় এমপি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বিরোধী সভাপতি ও সম্পাদক। এরা হলেন- বাংলাদেশ আ’লীগ মনোনীত তানোর পৌর আ’লীগের সভাপতি ও পৌরমেয়র ইমরুল হক। মুন্ডুমালা পৌর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান ও তালন্দ ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি নাজিমুদ্দিন বাবু। এরা দু’জন স্বতন্ত্রপ্রার্থী থেকে পৌরমেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয় অর্জন করেন। এছাড়াও উপজেলা আ’লীগের সাবেক সহসভাপতি বাবু চৌধুরী কলমা ইউনিয়নে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
অপরদিকে, পাঁচন্দর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজেন কুমার, সরনজাই ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক ছাড়াও সাধারণ সম্পদক সাদাৎ হোসেন, তালন্দ ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম ও চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম এমপি সমর্থনে বিরোধিতা করায় কয়েক বছর ধরে স্বপদে থেকেও কোণঠাসা বলে জানান তারা।
এতো বছর ধরে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির পদে বহাল থাকায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে এসব কমিটির নেতৃত্বে। ফলে বিপুল পরিমান নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করছে। এঅবস্থায় দলের তৃণমুল পর্যায়ের প্রবীণ নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পৌর ও ইউনিয়ন কমিটি ছাড়াও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন হওয়া অবশ্যক। তবেই তৃণমুল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে উঠে আসবে। তখন কর্মী ও সমর্থক ছাড়া একক নেতার নেতৃত্বের অবসান ঘটবে।
এদিকে, চলতি বছরের শুরুতে উপজেলা যুবলীগের আয়োজনে পৌরসভা ব্যতীত প্রত্যেক ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু উপজেলা যুবলীগ ও কৃষকলীগের কাউন্সিল আজও হয়নি। এব্যাপারে ময়না চেয়ারম্যানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি।
এনিয়ে উপজেলার তালন্দ ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি হাসান মেম্বার জানান, এমপি ফারুক চৌধুরীর বিরোধীতা করায় শুধু রবিউল ইসলামকে নয়, বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থককে বহিস্কার করা হয়েছে। ফলে অবিলম্বে এসব মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও পৌর আ’লীগ ছাড়াও সহযোগী সংগঠন ঢেলে সাজানোর জন্য এমপির সুদৃষ্টি কামনা করেন নতুন প্রজন্মের তরুণ জনপ্রতিনিধি হাসান। তবে, এসব বিষয়ে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ০১৭১১-৮১৯২৪৭ নম্বর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি।
এব্যাপারে তানোর উপজেলার আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করা হয়নি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি গঠন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে, কাগজপত্র ব্যাপারে ভাল বলতে পারবে সেক্রেটারী প্রদীপ সরকার বলে জানান সভাপতি স্বপন। আজকের তানোর