রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৩৪ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মহানগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায় চলছে প্রায় ১ হাজার ২০০ বেশী সিএনজি। এসব সিএনজি চালাতে পথে পথে দিতে হয় চাঁদা। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা দিয়ে আসছেন সিএনজির মালিক ও শ্রমিকরা। শ্রমিকরা প্রশ্ন তুলেছে এসব উত্তোলনকৃত চাঁদার টাকা কোথায় যায়? কি হয়? তার কোন হদিস নেই।
রাজশাহী জেলায় কত সিএনজি আছে তা নিয়েও রয়েছে দুই রকমের তথ্য। রাজশাহী জেলা মিশুক সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতির দাবি রাজশাহীতে সমিতির তালিকাভুক্ত সাড়ে ৫০০ সদস্য রয়েছে। এসব সদস্যের সাড়ে ৫০০ সিএনজি চলাচল করে।
সিএনজির এই সংখ্যা হলে প্রতিদিন ১ লাখ ১৮ হাজার ২৫০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। আর মাসিক ৩০০ টাকার হিসেবে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
তবে সংগঠনের এক নেতা বলছেন, সিএনজির সংখ্যা আরো বেশি। তার দাবি, তালিকাভুক্ত ও তালিকা ছাড়া সিএনজির সংখ্যা ১ হাজার ৩০০টির মতো। বিভিন্ন কারণে প্রতিদিন ১০০টি সিএনজি বন্ধ থাকে। আর সড়কে চলাচল করে ১ হাজার ২০০টি সিএনজি। এসব গাড়ি থেকে জেলার উপজেলা পর্যায়ের ১০টি পয়েন্টে চাঁদা তোলা হয়। একটি সিএনজি এই ১০টি পয়েন্টে গেলে চালককে দিতে হবে ২১৫ টাকা। সেই হিসেবে ১ হাজার ২০০ সিএনজির চালককে প্রতিদিন চাঁদা বাবদ দিতে হয় ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। মাসের হিসেবে চাঁদার পরিমান দাঁড়ায় ৭৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। মালিক ও শ্রমিকদের প্রশ্ন এই টাকা কোথায় যায়?
শুধুমাত্র রাজশাহীর তানোর, চৌবাড়িয়া, কেশরহাট, মোহনপুর, নওহাটা এই ছয় পয়েন্টে একজন সিএনজি চালককে দিনে দিতে হয় ১৩৫ টাকা চাঁদা।
মালিক ও শ্রমিকদের দাবি, দুর্ঘটনার শিকার হলেও সংগঠনের পক্ষ থেকে সাড়া মিলেনা। দুর্ঘটনার পরে সিএনজি পুলিশ থানায় নিলে সংগঠনের পক্ষ থেকে কেউ আসলেও যাবতীয় খরচ মালিককেই বহন করতে হয়। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত হলেও নিজ খরচে চিকিৎসা নেয় তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায় , উপজেলার বাগমারা, মোহনপুর, তানোর, রাজশাহী নগরী মিলে ১০টি পয়েন্ট। এই ১০টি পয়েন্টে গেলে একটি সিএনজি চালককে চাঁদা বাবদ গুনতে হয় ২১৫ টাকা। এরমধ্যে কোনো চালক যদি ওই সব পয়েন্টে না যায়, তাহলে চাঁদা দিতে হয় না। তবে, পয়েন্টগুলো ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। এসব পয়েন্ট থেকে চাঁদা তোলে হয় সিএনজি মালিক সমিতির ‘চেন মাস্টাররা’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন সিএনজি চালক জানান, নগরীর রেলগেট থেকে বায়া হয়ে তানোর পথে বাগধানী নামক স্থানে সিএনজি চালকের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হয় ২০ টাকা, চৌবাড়িয়া রস্তায় ২০ টাকা, কেশরহাটে ১০ টাকা, মোহনপুরে ১০ টাকা, নওহাটায় ১০ টাকা, মোহনগঞ্জ ২০ টাকা, তাহেরপুর ২০ টাকা, হাটগাঙ্গোপাড়া ২০ টাকা ও ভবানীগঞ্জে ২০ টাকা করে চাঁদা নেয় ‘চেন মাস্টাররা’। এছাড়া নগরীর তালাইমারীতে ২০ টাকা ও কোর্ট স্টেশনে ১৫ টাকা করে নেওয়া হয় বাইরের সিএনজি থেকে। এই দুই পয়েন্টে চাঁদার আওতার বাইরে থাকে গৌরহাঙ্গা রেলগেট স্ট্যান্ডের সিএনজিগুলো। শুধু স্ট্যান্ডের নাম বললেই ছেড়ে দেন ‘চেন মাস্টাররা’।
এছাড়া রেলগেটে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ছোট সিএনজি ৪০ টাকা ও বড় সিএনজি ৫০ টাকা নেওয়া হয়। শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে আরো ১৫ টাকা নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, গাড়িতে ধাক্কা দেওয়ার জন্য মিরাজ নামের এক ব্যক্তিকে দিতে হয় ১০ টাকা।
এতো গেলো সড়কে উত্তোলনকৃত চাঁদার হিসেব। সিএনজি মালিককে প্রতি মাসে ৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। বিনিময়ে দেওয়া হয় একটি স্টিকার। সেই স্টিকারের মেয়াদ একমাস। স্টিকার লাগানো থাকলে পয়েন্টগুলোতে সমস্যা হয়না। নতুবা সিএনজি আটকে দেওয়ার মতো ঘটনা নতুন কিছু নয়।
সম্প্রতি রেলগেট স্ট্যান্ডে বাগমারা চালকের সিএনজি আটকে দেয় মাস্টাররা। পরে তাকে কয়েকদিনের সময় দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অন্য সিএনজি চালকরা জানান। চাঁদা উত্তোলনের হিসেবে প্রতিমাসে ৩০০ টাকা হারে ১ হাজার ৩০০ গাড়ির চাঁদা উঠে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর বছরের হিসেবে ৪৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সিএনজি মালিক ও চালক জানান, ‘ভুতে খাই চাঁদার টাকা। মাসে লাখ টাকা উঠে সিএনজি থেকে চাঁদা। কিন্তু সেই টাকা যে কোথায় যায় কে জানে? করোনার সময়ে হাতেগুনা কয়েকজন চাল, ডাল পেয়েছে। তাও আবার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়ারুজ্জামান লিটন ভাইয়ের দেওয়া। শ্রমিকদের বিপদ অপদে কাজে আসে না সংগঠন।’
তিনি আরো জানায়, রেলগেটে সিএনজি থেকে প্রতিদিন ও মাসিক চাঁদা তোলার কাজ করেন ১০ থেকে ১২ জন মাস্টার। তাদের মধ্যে সিনিয়ররা প্রতিদিন বেতন পান ৫০০ টাকা ও জুনিয়ারদের বেতন ৪০০ টাকা। সমিতির নতুন গাড়িকে ভর্তি হতে কাগজে কলমে ৩ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু সেখানে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
রাজশাহী জেলা মিশুক সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার মিলু বলেন, ‘আমাদের সব সিএনজি লোকাল সড়কে চলে। বিভিন্ন পয়েন্টে ‘চেন মাস্টার’ রয়েছে। তারা সিএনজি থেকে ১০-২০ টাকা করে চাঁদা নেয়। এই ‘চেন মাস্টার’গুলো সিএনজির সময় থেকে সববিষয় তদারকি করে। এই টাকাগুলো থেকে তাদের বেতন দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, সমিতির তালিকাভুক্ত সাড়ে ৫০০ সদস্য রয়েছে। এসব সদস্যের সাড়ে ৫০০ সিএনজি। তাদের থেকে মাসিক হারে ৩০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। সেই চাঁদার টাকা সিএনজি মালিকদের কল্যাণে কাজে লাগানো হয়। সূত্র : পদ্মাটাইমস