রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:২৮ am
ডেস্ক রির্পোট : সোহরাব, সুমন ও সুজন। বাংলাদেশি তিন নাগরিক। জীবিকার তাগিদে বছর কয়েক আগে তারা গিয়েছিলেন ইরাকে। সেখানকার একটি হাসপাতালে কাজ করতেন। একদিন সুযোগ বুঝে হাসপাতালের মালিকের চেম্বারের ড্রয়ার থেকে ২০ কোটি ইরাকি দিনার ও ৮ হাজার মার্কিন ডলার নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। ইরান ও ইস্তাম্বুল ঘুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার হন দুজন।
সোহরাব ও সুজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সিটিটিসি। তবে বিমানবন্দর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেলেও পরে গ্রেপ্তার করা হয় সুমনকেও। ইরাকের সেই ভুক্তভোগীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার বিমানবন্দর থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইরাকের বাংলাদেশের দূতাবাসে ওমর হাশিম নামে এক ব্যক্তি দুই প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ইরাকি দিনার ও ৮ হাজার মার্কিন ডলার চুরির অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাসের পক্ষ থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার বরাবরও চিঠির একটি অনুলিপি পাঠানো হয়।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, দূতাবাসের চিঠি পাওয়ার পর তারা অভিযুক্ত সোহরাব ও সুজন উদ্দিনের পাসপোর্ট নম্বর সংগ্রহ করে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন শাখায় জানিয়ে রাখে। গত শনিবার সোহরাব, সুমন ও সুজনকে তুরস্ক থেকে ডিপোর্ট করে ঢাকায় পাঠায় সেখানকার পুলিশ। খবর পেয়ে সিটিটিসির একটি দল বিমানবন্দরে গিয়ে সোহরাব ও সুজনকে ৫৪ ধারায় আটক করে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় সুমন।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে সোহরাব ও সুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে সোহরাব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত রোববার বিমানবন্দর থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন সিটিটিসির পরিদর্শক কাজী শাহিদুজ্জামান। একই সঙ্গে ওই দিনই অভিযান চালিয়ে পলাতক সুমনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সোহরাব ২০১৮ সালে এক দালালের মাধ্যমে ইরাকে যান। মাঝখানে দেশে ফিরে এলেও গত এপ্রিলে তিনি আবারও দালালের মাধ্যমে ইরাকে ঢোকেন। সুমন আগে থেকেই ইরাকে ছিলেন। সুজন ইরাকে গেছেন গত বছর। সুজন ও সুমন সম্পর্কে আপন ভাই। তারা তিনজন একসঙ্গে ডা. আলী আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। প্রতি মাসে তাদের বেতন দেয়া হতো ৪ শ ডলার। সম্প্রতি তাদের বেতন বকেয়া হওয়ার কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে মালিকের চেম্বারে ঢুকে ড্রয়ার থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রথমে পালিয়ে ইরানে যান। সেখান থেকে চুরি করা অর্থ খরচ করে ইউরোপের কোনো দেশে ঢোকার জন্য পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইতালিতে যাওয়ার জন্য এক দালালের মাধ্যমে ইরান থেকে সড়ক পথে তুরস্কে প্রবেশ করেন। কিন্তু ইস্তাম্বুল যাওয়ার পথে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ১৭ দিন তুরস্কের কারাগারে আটক থাকার পর গত শনিবার তার্কিশ এয়ারলাইন্সে তাদের ঢাকায় ডিপোর্ট করে তার্কিশ পুলিশ।
সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দিনার ও ডলার চুরিকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত হলেন সোহরাব ও সুমন। সুমনকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সোহরাব ও সুজন এখন কারাগারে। তাদেরও এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চুরি করা অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।’
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তাররা জানিয়েছেন চুরির অর্থের একটি অংশ ইতিমধ্যে ইউরোপে যাওয়ার জন্য দালালদের দিয়েছেন। আর একটি অংশ দুই আত্মীয়ের কাছে জমা রেখেছেন। সূত্র : দৈনিক বাংলা