শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৪২ pm
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে যেসব কথা বলেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে তিনি নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের ‘আগামীর কর্ণধার’ আখ্যায়িত করে তাদের দায়িত্ব পালনে আরও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন। তাদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে একটা সময় অন্তর তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ, তোমরা ইংরেজের পুলিশ নও, তোমরা পাকিস্তানিদের শোষকদের পুলিশ নও, তোমরা জনগণের পুলিশ।
তোমাদের কর্তব্য জনসেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা।’ মানুষ যেন পুলিশকে ভয় না করে, যেন ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে-বঙ্গবন্ধুর এ বক্তব্যও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। বস্তুত এমনই হওয়া উচিত পুলিশের প্রকৃত ভূমিকা। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ দেশে পুলিশ বাহিনী নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও অনেক সময় পুলিশ নিজেই জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। যেখানে বিপদে-আপদে মানুষের সবচেয়ে বেশি নির্ভর করার কথা পুলিশের ওপর, সেখানে নিজেদের আচার-ব্যবহার ও কার্যকলাপের মাধ্যমে পুলিশ হয়ে পড়ে জনবিচ্ছিন্ন। এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি বৈকি।
প্রকৃতপক্ষে পুলিশের ভূমিকা হওয়া উচিত আইনের রক্ষক তথা জনগণের সেবকের। কিন্তু বাস্তবতা এর বিপরীত। সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহার মৃত্যু এবং সিলেটে পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় এ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। পুলিশের এ ধরনের ভূমিকার অন্যতম কারণ, আমাদের পুলিশ বাহিনী ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের উত্তরাধিকারই বহন করে চলেছে। ব্রিটিশ শাসকরা ওই নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন করেছিল পরাধীন জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে দমিয়ে রেখে নির্বিঘ্নে শাসনকাজ পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আজকের দিনের বাস্তবতা ভিন্ন, দেশ আজ স্বাধীন। তাই পুলিশকে পুরনো চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আমরা স্বীকার করি, জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশ সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসংক্রান্ত অন্যান্য ক্ষেত্রেও পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে পুলিশকে আরও জনবান্ধব হতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারেরও করণীয় রয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে যথাযথ সেবা পেতে এ বাহিনীর ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। দেখা যায়, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা পুলিশকে নিজেদের স্বার্থে, বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের কাজে ব্যবহার করে।
পুলিশের নিয়োগ, বদলি, পদায়ন ইত্যাদি প্রশাসনিক কাজেও ব্যাপক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়। এসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা নানাভাবে প্রভাব খাটান। এতে অনেক দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তাও বিশেষ কোনো রাজনৈতিক নেতার আস্থাভাজন না হওয়ায় বা তাদের কথামতো কাজ না করায় হয়রানির শিকার হন। বস্তুত পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের যত অভিযোগ উঠে থাকে, সেসবের বেশিরভাগই সংঘটিত হয় পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ফলে। এর অবসানই কাম্য। আমরা চাই, পুলিশ যথার্থই জনগণের বন্ধু হয়ে উঠুক। সরকারের সদিচ্ছা এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্বশীলতায়ই তা সম্ভব হতে পারে।