শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:২৫ am
অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়ে চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কালীপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ পরিচয় দেয়া প্রধান শিক্ষক এনামুল হক মিয়াজীর এমপিও স্থাগিত করা হয়েছে। তার নিয়োগ বিধিসম্মত না হওয়ায় এবং রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসাথে তার এমপিও চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কালীপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে অবৈধভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন এনামুল হক মিয়াজী। পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকও হয়েছেন তিনি। বর্তমানে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষিকার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়েছিলেন এনামুল। ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ভালোই চলছিল এনামুল হকের দিন। হঠাৎ রাগের মাথায় প্রতিষ্ঠানটির একজন প্রভাষককে থাপ্পড় মেরে বসেন অবৈধ নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক এনামুল হক। এ থাপ্পড়ের পরই তার সব গোমর ফাঁস হয়ে যায়। শিক্ষককে থাপ্পড়মারার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে অবৈধ নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষককে সব তথ্য উঠে আসে শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে। তার বিরুদ্ধে আসা বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে তলব করা হয়। শুনানী শেষে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক এনামুল হক মিয়াজীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আদেশে, কালিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মূলপদ প্রধান শিক্ষক এনমুল হক মিয়াজীর নিয়োগ বিধিসম্মত না হওয়ায় ও নিয়মবর্হিভুতভাবে গৃহীত অতিরিক্ত রেজিস্ট্রশন ফি বাবদ অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তার এমপিও সাময়িকভাবে স্থগিত করতে বলা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে। একইসাথে তার এমপিও কেন বাতিল করা হবে না এবং কেন রেজিস্ট্রেশন বাবদ নেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করতে বলা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে , হঠাৎ রাগের মাথায় প্রতিষ্ঠানটির একজন প্রভাষককে থাপ্পড় দেয়ার পর ওই প্রভাষক সংক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষক এনামুল হক মিয়াজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা তদন্ত হয়। তদন্তে এনামুল হককে অবৈধ নিয়োগের বিষয়টি বেড়িয়ে আসে। অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান শিক্ষক এনামুলকে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয় শিক্ষা অধিদপ্তর। সে প্রেক্ষিতে তদন্ত সম্পাদন করেছে কুমিল্লা অঞ্চলের কর্মকর্তারা। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৬ আগস্ট শিক্ষা অধিদপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান তারা।
তদন্তে প্রধান শিক্ষক এনমুল হকের বিরুদ্ধে আসা অবৈধ নিয়োগ ও প্রভাষককে থাপ্পড় দেয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছি। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মো. এনামুল হক যোগ্যতা ও কাম্য অভিজ্ঞতা না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। পরে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগের সময় এনামুল হকের কাম্য যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছিলনা। অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষকের প্রাপ্ত বেতন ভাতা ফেরত যোগ্য বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যেহেতু তার সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ অবৈধ, তাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে তার দায়িত্ব পালন বিধিসম্মত নয়। তাই প্রতিষ্ঠানটিতে দ্রুত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদেনে আরও বলা হয়, এনামুল হক একজন প্রভাষককে থাপ্পড় মেরেছেন বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার সাথে এনামুল অনৈতিক সম্পর্ক গড়েছিলেন বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছেন এনামুল। সে টাকাও ফেরতযোগ্য। আর প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং বিদ্যমান। তার মূলপদ প্রধান শিক্ষক ও সে পদে নিয়োগ অবৈধ হলেও এনামুল হক মিয়াজী নিজেকে অধ্যক্ষ পরিচয় দেন। সূত্র : দৈনিক শিক্ষা। আজকের তানোর