রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:০৭ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘জঙ্গিবাদে’ জড়িয়ে গত দুই বছরে বাড়ি ছাড়া ৫৫ তরুণের খোঁজ পেয়েছে র্যাব, তাদের মধ্যে ৩৮ জনের একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে এ বাহিনী। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলছেন, দুই বছর থেকে দেড় মাসের মধ্যে এই তরুণেরা নিরুদ্দেশ হয়। পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ে তাদের জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন র্যাব মুখপাত্র।
গ্রেপ্তাররা হলেন- কুমিল্লার মসজিদুল কোবার ইমাম শাহ মো. হাবিবুল্লাহ (৩২), নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), মোহাম্মদ হোসাইন (২২), রাকিব হাসনাত ওরফে নিলয় (২৮), সাইফুল ইসলাম ওরফে জায়দ চৌধুরী রনি (১৯)।
রোববার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরাণীগঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, হাবিবউল্লাহ দুই বছর আগে নেয়ামতউল্লাহর মাধ্যমে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্য হন। তখন থেকেই হাবিবউল্লাহ বান্দরবানের নাইক্ষংছড়িতে একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। সেখানে অনেক শিক্ষার্থীও রয়েছে।
“তিনি এই সংগঠনের অন্যতম অর্থ সরবরাহকারীও। বিভিন্ন মাদ্রাসার কথা বলে চাঁদা তুলে তিনি সংগঠনে দিয়েছেন। কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ সাতজন ছাত্রকে রিক্রুট করা, ব্রেইন ওয়াশের দায়িত্ব ছিল হাবিবউল্লাহর। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করেছেন।”
র্যাব মুখপাত্র বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলে কিছু বিচ্ছিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় নিখোঁজদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে তারা নতুন ওই জঙ্গি সংগঠনের নামেই অবস্থান করছে। নিখোঁজদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
“তাদের নাশকতার কী পরিকল্পনা, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে সমন্বিত অভিযান চলছে। আরও গ্রেপ্তার হলে তারপরে তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে বলা যাবে।”
কুমিল্লা ও ঢাকার সাত কলেজছাত্র গত ২৩ অগাস্ট বাসা থেকে বেরিয়ে আর না ফেরায় থানায় জিডি করেছিল পরিবার। পরে জানা যায়, ‘জঙ্গিবাদে জড়িয়ে’ লাপাত্তা হয়েছে ওই তরুণরা।
তাদের মধ্যে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ দুই ছাত্রসহ সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর গত ৬ অক্টোবর র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, এরা সবাই ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত।
ওই সাতজনের কাছ থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনের তিন ধরনের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা সম্বলিত পুস্তিকা, জঙ্গি সংগঠনটির কর্মপদ্ধতি (খসড়া মানহায), উগ্রবাদী বই ‘নেদায়ে তাওহীদ’, জিহাদী উগ্রবাদ ভিডিও সম্বলিত একটি ট্যাব উদ্ধারের কথাও জানানো হয়েছিল।
সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে আল মঈন বলেছিলেন, কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ দুই তরুণ গত এক বছর ধরে কুমিল্লার মসজিুর কোবার ইমাম হাবিবউল্লাহর সংস্পর্শে ছিলেন। হাবিবউল্লাহই তাদের উগ্রবাদে দীক্ষিত করেন, পরে গত ২৩ আগস্ট তারা বাড়ি ছেড়েছিলেন। সেই হাবিবউল্লাহসহ পাঁচজনকে রোববার রাতে র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়।
হাবিবুল্লাহর বাড়ি কুমিল্লার সিটি করপোরেশনের লইপুরা এলাকায়। কুমিল্লা শহরের কাসেমুল উলুম মাদ্রাসায় পড়াশোনার পর সেখানেই শিক্ষক ছিলেন তিনি। পরে কোবা মসজিদের ইমাম হিসেবে যোগ দেন। কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতাও করতেন তিনি।
নতুন জঙ্গি দলে যুক্ত যে ৫৫ জনের সন্ধান র্যাব পেয়েছে, তাদের ৩৮ জনের তালিকা প্রকাশ করে র্যাব কর্মকর্তা মঈন তাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সূত্র : পদ্মাটাইমস