রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৩১ am
আব্দুস সবুর, ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক :
রাজশাহীর তানোর পৌর সদরের বাসিন্দা হিন্দু সম্প্রদায়ের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া এক ছাত্রী বিয়ের দাবিতে নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার পারইটুনি গ্রামে প্রেমিকের বাড়িতে অনশনে বসেন। সম্প্রতি গেলো ১ অক্টোবর থেকে টানা ৪ দিন চলে অনশন। কিন্তু দূর্গাপুজা এবং মিঠন সরকারি চাকুরীজীবী ও প্রভাবশালী হওয়ায় মান্দার প্রশাসন ২ দিনের মধ্যে সমাধানের কথা বলে অনশনকারী ওই ছাত্রীকে নিজ বাড়ি তানোরে জোরপূর্বক পাঠিয়ে দেয়া বলে অভিযোগ ভিকটিম ও তার পরিবারের। ফলে ওই ছাত্রীর অনশন প্রশাসনের উদাসিনতা আর অনৈতিক হস্তপেক্ষে পণ্ড হয়ে গেছে।
মেয়ের পরিবারের অভিযোগ, ঘটনাটি নিয়ে মেয়ে পক্ষ মিঠনের দোলাভাই রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউপির কচুয়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যানদের নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকায় রফাদফা করার জন্য ভিকটিমকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন। কিন্তু প্রেমিকা ভিকটিমের একটাই কথা বিয়ে ছাড়া তিনি কিছুই শোনবেন না। এমনকি ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকাও ওফার করা হয়েছে। এমন ওফারে প্রেমিকার একটায় কথা, তার ইজ্জত সম্মান নিজের স্ত্রীর মত ব্যবহার করেছে ওই ছেলে। টাকার বিনিময়ে যদি ফেরত হয় তাহলে দিন বলে আক্ষেপ করেন ওই ছাত্রী। ফলে ঘটনাটি মান্দা ও তানোর টক অবদ্যায় পরিণত হয়েছে।
এদিকে, সরকারি চাকুরীজীবী মিঠনকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মান্দা থানা পুলিশ বলেও অভিযোগ ভিকটিম ও তার পরিবারের। কিন্তু প্রেমিক মিঠুন আর ওই ছাত্রীকে পাত্তা দিচ্ছি না। এক প্রকার বাধ্য হয়ে চলতি মাসের ১ অক্টোবর থেকে প্রেমিক মিঠন মন্ডলের মান্দা উপজেলার পারইটুনি গ্রামের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশনে বসেন। কিন্তু শারদীয় দূর্গাপুজার জন্য প্রশাসন প্রেমিক মিঠন মন্ডলকে দুই দিনের মধ্যে সমাধান না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে মর্মে প্রেমিকাকে নিজ এলাকা তানোরে পাঠান। বৃহস্পতিবার শেষ দিনে মিঠুনের দোলাভাই কামারগাঁ ইউপি কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ঘটনা মিমাংসা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
তবে প্রেমিকা জানান, ছেলে তাকে বিয়ে করবে। কিন্তু তার দোলাভাই নিখিল ভাগিয়ে দিয়েছে। তাকে অনেক টাকার ওফার করা হয়েছে। তাতে তিনি রাজি নয়। তার সম্মান নষ্ট হয়েছে, তাকে আমি বিয়ে করতে চায়। শুধু নিখিলের কুপরামর্শে বিয়ে হয়নি। তিনি অনশনে থাকা অবস্থায় মান্দার ইউএনও, এসিল্যান্ড ও পুলিশের লোকজন মিঠনকে ২ দিনের সময় দেন। সম্প্রতি গেলো বৃহস্পতিবার সে সময় শেষ হয়েছে। তাও তিনি বিচার পাচ্ছেন না। যদি তারা না পারবে তাহলে তাকে কেন অনশন থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হল। তিনি অসহায় নারী বলে কোন বিচার পাবে না, নাকি গরীবের বিচার পাওয়ার অধিকার নেই বলে আক্ষেপ করেন ওই ছাত্রী।
তবে, এব্যাপারে মাস্টার নিখিল চন্দ্র জানান, ৬ মাস থেকে তাদের সম্পর্ক। মেয়ে যখন অনশন করে, তখন প্রশাসন বলেছিল নাম মাত্র বিয়ে করে তিন চার মাস পর ডিভোর্স দিয়ে দিবেন। মানে যারা অসহায় ছাত্রী তাদের ইজ্জতের মূল্য নেই এমন প্রশ্ন? একজন সরকারি দপ্তরে চাকুরি করে কিভাবে তিনি এ কথা বলতে পারেন বলে আক্ষেপ করা হয়।
জানা গেছে, তানোর পৌর সদরে জৈনক মৃত ব্যক্তির কন্যা রাজশাহী শহরে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা অবস্থায় ইন্টারনেটে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে মান্দা উপজেলার পারইটুনি গ্রামের বিমল মন্ডলের পুত্র মিঠুন মন্ডলের সাথে। বিগত প্রায় ১ বছরে প্রেমের সম্পর্ক এতোই গভীর হয়ে উঠে বিয়ের কথা বলে একাধিকবার দৈহিক সম্পর্ক হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন ওই প্রেমিকা। শুধু তাই নয়, মেসের খরচ পড়ালেখার খরচ বহন করে এবং সবাই জানে কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিয়ে হবে।
কিন্তু দীর্ঘদিন ফোনে কোন যোগাযোগ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে ওই প্রেমিকা প্রেমিকের বাড়িতে বিয়ের দাবি নিয়ে ১ অক্টোবর থেকে অনশন শুরু করেন ওই ছাত্রী। যা চলে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু প্রেমিক মিঠন লাপাত্তা ছিলেন।
প্রেমিকা ওই শিক্ষার্থী জানান, অনশন করা অবস্থায় ইউএনও, এসিল্যান্ড এবং পুলিশের লোকজন পূজা উদযাপনে সবাই ব্যস্ত বলে তার পরিবারকে ৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবারের মধ্যে সমাধানের আশ^াস দেয়া হয়। কিন্তু আজ ৭ অক্টোবর সারাদিন অতিবাহিত হলেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নিখিল মাস্টার কিছুই হতে দিচ্ছে না।
মিঠুন মন্ডলের কর্মস্থল নওগাঁ বদলগাছি উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জানান, এমন ঘটনা শুনেছি। আমরা চরম ভাবে বিব্রত। তবে, কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায় নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। মিঠনের মোবাইল নম্বর চাইলে তিনি জানান, আমার কাছে যে নম্বর আছে সেটাতে ঢুকছে না তার দোলাভাইয়ের কাছে পাবেন বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি।
এব্যাপারে নওগাঁ জেলার মান্দা থানার ওসি শাহিনুর রহমানের সরকারি মোবাইলে একাধিক বার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি। একারণে তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
নওগাঁ জেলার যুব উন্নয়ন অফিসের উপ-পরিচালক জাবেদ ইকবাল জানান, লোকমুখে শুনেছি। অভিযোগ না পেলে কিভাবে ব্যবস্থা নিব। মান্দার ইউএনও এবং ওসির ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শুনেছি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক জানান, পবিত্র দূর্গাপূজার জন্য ২ দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল। কারণ ছেলে ও মেয়ে উভয় হিন্দু সম্প্রদায়ের। এজন্য সময়টা দেয়া হয়। যদি সমাধান না হয় মেয়ে অভিযোগ করলে সব ধরনের সহযোগিতা ছাড়াও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ইউএনও।
নওগাঁ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) রাসেদুল হকের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে থানার ওসির মোবাইল ফোন রিসিভ না হওয়া প্রসঙ্গে এসপি জানান, পুনরায় ওসিকে ফোন দেন। কেন সরকারি ফোন রিসিভ করবেন না ওসি। তবে, এমন ঘটনা তাঁর অজানা বলে জানান এসপি। আজকের তানোর