শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৩৮ am
ডেস্ক রির্পোট : ‘নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন’ এ প্রতিপাদ্যে আজ যখন জাতীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস পালিত হতে যাচ্ছে, তখন সারা দেশেই সনদ পেতে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ।
ভুক্তভোগীদের মতে, জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করার শর্তে জটিলতা রয়েছে। রয়েছে সনদ প্রদানে দীর্ঘসূত্রতা। সরকারি ফির বাইরেও নেয়া হচ্ছে অর্থ। আর এই সুযোগটিই লুফে নিয়েছে দালালচক্র। দ্রুত ঝামেলা ছাড়া নিবন্ধন করে দেয়ার কথা বলে নিরুপায় মানুষদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
বর্তমানে দেশের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে হওয়ায় পাসপোর্ট তৈরি, বিয়ে নিবন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে নিয়োগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার তালিকা তৈরি, জমি রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক হিসাব খোলা, আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স, গ্যাস, পানি, টেলিফোন এবং বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমতি, করদাতা শনাক্তকরণের নম্বর, ঠিকাদারি বা চুক্তির লাইসেন্স, ভবন নকশার অনুমোদন, ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্তি এবং মোটরযানের নিবন্ধন পেতে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু সার্ভারে ত্রুটির অজুহাতে সনদ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে সময়মতো জন্মনিবন্ধন করা যাচ্ছে না। অথচ এটি না করলে নানা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।
জানা যায়, ১৮৭৩ সালের ২ জুলাই ব্রিটিশ সরকার অবিভক্ত বাংলায় জন্মনিবন্ধন-সংক্রান্ত আইন জারি করে। এরপর ২০০১-০৬ সালে ইউনিসেফ-বাংলাদেশের সহায়তায় পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ২৮টি জেলায় ও ৪টি সিটি করপোরেশনে জন্মনিবন্ধনের কাজ নতুন করে শুরু হয়। তবে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ জন্ম এবং মৃত্যুনিবন্ধন সম্পন্ন করতে ‘জাতীয় জন্মনিবন্ধন দিবস’কে ‘জাতীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৯ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৬ অক্টোবর ‘জাতীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস’ ঘোষণা করে সরকার।
জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন আইন, ২০০৪ এর ৮ ধারা অনুযায়ী, শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন এবং কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে মৃত্যুনিবন্ধন করতে হবে। এটাকে আরও কার্যকর করার জন্য দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যাতে সাধারণ মানুষ আরও উদ্বুদ্ধ হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ উদ্বুদ্ধ হলেও সনদ সংগ্রহ করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমনটি জানান, রাজশাহীর তানোর পৌরসভায় জন্ম ও মৃত্যু সনদ পেতে হয়রানির শিকার ভদ্রখন্ড মহল্লার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ ও গ্রাম্য ডাক্তার ওয়াজেদ আলী।
গত ৪ অক্টোবর সরেজমিনে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস ঘুরে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ড নিয়ে একটি আঞ্চলিক জোন গঠিত। তাই ১০ ওয়ার্ডের জনগণ একটি অফিসেই সেবা নিতে আসে। কিন্তু লোকবল, প্রযুক্তিগত সাপোর্ট ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে দিনের পর দিন ঘুরেও সনদ পাওয়া যায় না। এমনকি সনদের ভুল সংশোধনীর জন্য সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস ও ডিসি অফিসে কয়েক দফা ঘুরেও সনদ না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে বিস্তর।
সুত্রাপুরের বাসিন্দা জিদান দুই মাস ধরে স্ত্রীর জন্মনিবন্ধন করার জন্য সিটি করপোরেশন আর কাউন্সিলর অফিস ঘুরেও সনদ তৈরি করতে পারেননি। দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, ‘অফিস থেকে বিভিন্ন জটিলতা দেখিয়ে আমাকে ঘুরাচ্ছে। পরে এক দালালের মাধ্যমে চার হাজার টাকা দিয়ে করিয়েছি।’
সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জনবল সঙ্কট, অদক্ষ জনবল, দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, ত্রুটিপূর্ণ প্রযুক্তির ব্যবহার, ইন্টারনেটের ধীরগতি, কেন্দ্রীয় সার্ভারে ত্রুটি, সেবাদানকারীর দুর্ব্যবহার, তথ্য প্রদানে অনীহা এবং নাগরিকদের সচেতনতার অভাবে সারা দেশের জন্মনিবন্ধন সনদ কার্যক্রমের অবস্থা হ-য-ব-র-ল।
এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘সার্ভারের সমস্যার কারণে কিছুটা দেরি হয় মাঝেমধ্যে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে এখনো সার্ভারের গতি যদি ঠিক থাকে, তাহলে সমস্যা হয় না। তবে এই কাজটা যদি কাউন্সিলরদের অধীনে দেয়া হয়, তাহলে এটি আরও সহজ হবে।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. ওসমান ভূঁইয়া বলেন, ২৭ জুলাই থেকে জন্মনিবন্ধনের আবেদন করতে গেলে সফটওয়্যারে মা-বাবার জন্মসনদ চাওয়া হচ্ছে না। বিধিমালা অনুযায়ী এ নিয়ম করা হয়েছে। কীভাবে এসব আরও সহজ করা যায় তা নিয়েও আলোচনা চলছে। তিনি আরও বলেন, ছোটখাটো ভুলগুলো কীভাবে দ্রুত সমাধান করা যায়, তার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর সংশোধনীর ব্যাপারে যে শাখা থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ দেয়া হয়েছে, সেখানেই সংশোধন করা যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে। মহিউদ্দিন খান, সূত্র : দৈনিক বাংলা