মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৫৫ pm
আব্দুস সবুর, তানোর :
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের বিএনপির সাবেক প্রয়াত মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছোট ভাই অবশরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিনের দূর্গাপুজার মন্দির পরিদর্শনের খবরে ও নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় না করায় তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন (ইউপি) বিএনপির শতশত নেতাকর্মী তাকে প্রতিহত করতে চেয়ে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছেন। আজ (৪ অক্টেবার) মঙ্গলবার দুপুরের দিকে কামারগাঁ ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে হাতিনান্দা স্কুলমাঠে বিশাল আলোচনা সভায় এ ঘোষনা দেন ওই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বর্ষষিয়ান রাজনীতিক খলিলুর রহমান খলিল।
এতে করে কামারগাঁ ইউনিয়নে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই সাথে শরিফ উদ্দিন কামারগাঁ পুজা মন্ডপে আসলে যে কোন অঘটন ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা নেতাকর্মীরা তবে, প্রশাসন এসব আমলে না নিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কঠোর অবস্থানে আছেন।
উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডায়মন্ড বলেন, মেজর শরিফের রাজনৈতিক কোন প্রজ্ঞা বা দক্ষতা নেই। যার কারণে তানোরে বিএনপি কয়েকভাগে বিভক্ত। তিনি তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানের কথায় যাবতীয় সবকিছু করেন। শুধু উপজেলা নয় কামারগাঁ ইউপিতে তারা করেছে ঘরে বসে পকেট কমিটি। যা ইউপিবাসী প্রত্যাখান করেছে।
তানোর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মালেক মন্ডল বলেন, আমরা মেজর শরিফের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু তিনি উপজেলা বিএনপির পকেট কমিটির সভাপতি হান্নান ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের কথায় সবকিছু করছেন। আমাদের সন্দেহ হয় তারা ক্ষমতাসীন দলের সাথে পরকিয়া করে এসব করছেন। মেজরের জন্য তানোর গোদাগাড়ী বিএনপির মধ্যে এতো বিভেদ। তাকে একাধিক বার বলা হয়েছে, সবাইকে নিয়ে বসে সমোঝতার মাধ্যমে সবকিছু করতে। কিন্তু তিনি তো মেজর, রাজনীতি না করলে যা হয়, সেটাই হচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করব তাঁকে যেন তানোরে প্রবেশ করতে না দেন। এলেই সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং তাকেও বলব আপনি দলের বিভেদ দূর করুন, নচেৎ রাজনীতি ছেড়ে দিন।
উপজেলার কামারগাঁ ইউপি বিএনপির সভাপতি খলিলুর রহমান খলিল বলেন, মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিন কামারগাঁ ইউপির পুজা মন্ডপ পরিদর্শন করবেন সেটা আমাদের জানানো হয়নি। শুধু সাবেক মেয়র মিজানের কতিপয় অনুসারী ছাড়া কেউ জানেন না। মুলত এজন্যই আমরা শতশত নেতাকর্মী নিয়ে মতবিনিময় সভা করে শরিফ উদ্দিনকে কামারগাঁতে অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হয়েছে। তার রাজনীতি বা এমপি হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই। প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হকের দোহায় দিয়ে আর কত লবিং-গ্রুপিং করবেন। দলের দূর্দিনেও বিএনপি কেন বিভক্ত হবে। শুধু মাত্র মেজর শরিফের অদক্ষতার কারণে বিএনপির মধ্যে এতো বিভেদ। আমাদের দাবি থাকবে তার মত অযোগ্য নেতাকে বয়কট করে একজন সুস্থ ধারার নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হোক। নচেৎ বিভক্ত বিএনপিকে এক কাতারে আনা অসম্ভব।
তিনি আরও বলেন, সামান্য এক ইউনিয়নে যদি এঅবস্থা ঘটে তাহলে দুই উপজেলায় কি ঘটতে পারে। আজ তিনি কামারগাঁতে বয়কট অবাঞ্চিত হলেন। এরপর আরও কত জায়গায় তিনি বয়কট হবেন বলা দূরহ ব্যাপার। তাই জেলা কমিটিকে অনুরোধ করব, এমন নেতা আমাদের দরকার নেই। আমরা চাই ক্লীন ইমেজের নেতা। তিনি ব্যারিস্টার ভাইয়ের দোহায় দিয়ে দল বিভক্ত করে রাজনীতি করবেন। তা আমরা দুই উপজেলার বিএনপির তৃনমুলের নেতাকর্মীরা হতে দেব না। কামারগাঁ থেকে শুরু হয়েছে এ ধারাবাহিতা চলতে থাকবে।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আখেরুজ্জামান হান্নানের সাথে মোবাইলে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, মেজর শরিফ উদ্দিন বের হয়ে মুন্ডুমালা পার হয়েছে। যারা তাঁকে অবাঞ্চিত করেছে সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে এড়িয়ে গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক নেতা জানান, নেতাকর্মীরা মনে করে মেজর জেনারেল মানে বিশাল কিছু। আসলে তিনি কোন রাজনীতিই বুঝেন না। এজন্য নেতাকর্মীদের ক্ষোভ থেকেই এমন হচ্ছে। ভায়ের দোহায় দিয়ে রাজনীতি হয় না। তার জন্য তানোর-গোদাগাড়ী বিএনপির লবিং গ্রুপিংয়ের শেষ নেই। এপ্রতিবেদন লিখার সময় মেজর শরিফ গাড়ীবহর নিয়ে থানা মোড় পার হন। গাড়ী বহরের জন্য থানা মোড়ে প্রচুর যানজটের সৃষ্টি হয়। বেশকিছু মন্দির কমিটির নেতারা জানান, বিকেলে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মন্দিরে আসতে পারেনি। এসবের মধ্যে বিএনপি নেতাদের বিশাল গাড়ীবহরের কারণে মা-বোনদের মন্দিরে আসা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
পরে মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিনের ০১৭১১-৫৬৮০২৫ মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। তবে, পূজামন্ডপ পরিদর্শনে মেজর শরিফ উদ্দিন আসার খবরে কামারগাঁ ইউপি বিএনপি তাকে প্রতিহত করবে এবং সংঘর্ষের আশংকা করছেন বিষয় ব্যাপারে রাজশাহী জেলার সহকারী সিনিয়র পুলিশ সুপার গোদাগাড়ী সার্কেল (এএসপি) আসাদুজ্জামানকে অবহিত করা হলে তিনি জানান, তারা দলীয়ভাবে কি করবে সেটা তাদের বিষয়। তবে, পূজামন্ডপে কোন হট্রগোল হবে না, যদি হয় কঠোর ব্যবস্থা ও উৎসবের কোন ঘাটতি থাকবে না। তারপরও অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করা হবে জানান এই কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল জানান, নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই। যেহেতু বিষয়টি অবহিত করেছেন এজন্য সার্বক্ষনিক নজরদারি থাকবে।