মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৩২ pm
ডেস্ক রির্পোট : রাজনীতিতে আর সময় দিতে চান না বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। পেশায় আইনজীবী হলেও সবসময় রাজনীতিতে সক্রিয় এই মানুষটি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও দেওয়া হয় বাংলাদেশের জন্মের সূচনালগ্নে।
একসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও পরবর্তী সময়ে নিজের গড়া ‘গণফোরাম’ নিয়েই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিক। কিন্তু শেষ বয়সে এসে নিজের দলেও ঐক্য ফেরাতে পারেননি তিনি। কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে গণফোরাম। অন্যদিকে শারীরিকভাবেও অনেকটা নাজুক অবস্থা তাঁর। যে কারণে রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার চিন্তা করছেন কামাল হোসেন।
তাঁর মতে, পাঁচ দশক ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও সুস্থ রাজনীতির স্বার্থে নিজে সরে গিয়ে নতুনদের জায়গা করে দেওয়া উচিত। সম্প্রতি নিজের এমন পরিকল্পনার কথা গণমাধ্যমকে বলেছেন ড. কামাল হোসেন।
তবে শেষ বয়সে এসে দলকে এক প্লাটফর্মে আনতে না পারার আক্ষেপ যেমন আছে, তেমনি দেশের রাজনীতিক সংকট নিয়েও ভাবেন বলে জানিয়েছেন এই প্রবীণ আইনজীবী। এজন্য অবশ্য সংঘাত নয়, সংলাপের মধ্য দিয়ে সমাধান বের করার পরামর্শ তাঁর।
কামাল হোসেনের ভাষায়, ‘বয়স হয়েছে। কম হলেও ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতি করে আসছি। মনে করি একটা মানুষকে পদ ধরে রাখা বা আজীবন থাকা উচিত না। সুস্থ রাজনীতির মানে হলো নতুনদের জায়গা করে দিতে হবে।’
বিষয়টি নিয়ে গণফোরামেও আলাপ আলোচনা চলছে। দলটির নেতারা বলছেন, বয়সের কারণে তিনি এখন আর চাপ নিতে পারছেন না। যে কারণে কিছুটা নিরিবিলি থাকতে চাচ্ছেন।
যদিও সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য কামাল হোসেনের সঙ্গে একাধিকার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কামাল হোসেন। তবে তাঁর পরামর্শ- যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি দিয়ে সংকট সমাধানে কাজ করা উচিত। কিন্তু পাল্টা আক্রমণ করে সেটা হবে না। সরকারের উচিত আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে মৌলিক বিষয়গুলোর সমাধান করা।
রাজনীতিতে বিরোধী মত থাকবে- এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, দ্বিমত থাকতেই পারে। কিন্তু মৌলিক যে বিষয় তা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। এজন্য সংলাপের বিকল্প নেই। দলের মধ্যে সহনশীলতা থাকবে, সংঘাত- সংঘর্ষ থেকে সবাই বিরত থাকবে এমন সব বিষয়ে ঐক্যমত হতে হবে। সে অনুযায়ী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
কামাল হোসেন যুবক বয়সেই আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি পান। নজরে আসেন বঙ্গবন্ধুর। এজন্য মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তাঁকে দেওয়া হয় আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব। ১৯৭২ সালে প্রণীত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে ছিলেন। ১৯৭৩ সালে নির্বাচনের পর তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন বঙ্গবন্ধু। পরের বছর দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের।
তবে ১৯৭৫ সাল পরবর্তী রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান নেই ড. কামালের। সবশেষ ২০১৮ সালে এসে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে এর প্রধান নেতা হিসেবে আলোচনায় আসেন তিনি। যদিও পরবর্তী সময়ে বিএনপির অনেকে তাঁর সমালোচনায় সরব হয়েছেন।
শখের গণফোরামে হযবরল!
কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে সিপিবি থেকে আসা সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিককে নিয়ে ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট গণফোরাম গঠন করেন। কামাল হোসেন তখন থেকেই এ দলের সভাপতি ছিলেন। মানিক মারা গেলে আওয়ামী যুবলীগ থেকে আসা মোস্তফা মহসিন মন্টুকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
২০২০ সালে দলের পঞ্চম কাউন্সিলের পর কামাল তাঁর দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক মন্টুকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. এ এস এম কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়াকে ওই পদে আনলে গণফোরামে ভাঙনের সূচনা হয়। এরপর দুই অংশের মধ্যে বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের ঘোষণা আসে। জাতীয় প্রেসক্লাবে আলাদাভাবে বর্ধিত সভাও করেন তারা। এরমধ্যে রেজা কিবরিয়া দল ছাড়লেও বিরোধ থামেনি।
পরে মন্টুরা কাউন্সিল ডেকে আলাদা কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটিতে সভাপতি মন্টুর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হন সুব্রত চৌধুরী।
সম্প্রতি একাংশের সভাপতি হিসেবে কামাল হোসেনকে মনোনীত করা হয়। এ নিয়ে শুরু হয় ঝামেলা। ক্ষুব্ধ হয়ে মন্টু-সুব্রতরা তাদের অংশের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ড. কামাল হোসেনকে অব্যাহতির ঘোষণা দেন।
বারবার জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়া গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা নিজ দলের বিভক্তি ঠেকাতেই ব্যর্থ হয়েছেন।
শুধু তাই নয়, এর মধ্যে মতিঝিলের ইডেন বিল্ডিংয়ের ড. কামালের কার্যালয়ও দখল করে নিয়েছেন মন্টুরা। এই অবস্থায় কামাল অনুসারীরা নতুন কার্যালয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। শুরুতে পুরানা পল্টনের একটি ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় করেন। সবশেষ কাকরাইলের রূপায়ন টাওয়ারে দলের নতুন কার্যালয় করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভোটের মাঠে কখনোই সুবিধা করতে পারেননি ড. কামাল
রাজনীতিবিদ হিসেবে আলোচিত হলেও একবারই সংসদ সদস্য হয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। ১৯৭৩ সালে জাসদের প্রার্থী শাহজাহান সিরাজকে হারিয়ে তখনকার ঢাকা-১৪ আসন থেকে জিতেছিলেন তিনি। এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনে একাধিকবার হেরেছেন তিনি। জায়গা বদল করে নির্বাচন করলেও সফলতা আসেনি।
আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করার সময় প্রতিবার তিনি দ্বিতীয় হয়েছেন। আর নিজের গড়া গণফোরাম থেকে পেয়েছেন মাত্র কয়েক হাজার।
১৯৯৬ সালে গণফোরাম থেকে ১০৪ জন নির্বাচনে লড়লেও ড. কামালসহ সব প্রার্থী হারান জামানত। ২০০১ সালে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর আসন থেকে শেষ ভোটে লড়ছেন প্রবীণ এই আইনজীবী। সেবারও হারিয়েছেন জামানত। ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ছয় হাজার ১৮৭টি। তবে এরপর আর ভোটের লড়নেনি তিনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি ভোটে দাঁড়ানটি। সূত্র : পদ্মাটাইমস