শুক্রবার, ১৮ অক্টোব ২০২৪, সময় : ০১:২৫ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
মোহনপুরে দিনব্যাপি ফুটবল টুর্ণামেন্টে বন্ধু একাদশ চ্যাম্পিয়ন শিক্ষকদের কর্মসূচিতে সাউন্ড গ্রেনেড পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ৩৩ ধর্মীয় উৎসব দুই ঈদে ১১ আর পূজায় দুই দিন ছুটি পাস পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত, প্রতিবাদে রাজশাহীতে শাটডাউন কাটাখালীতে সড়কের পাশ থেকে রিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধার বাগমারায় ৪ দিনব্যাপি নকল নবীসদের কলম বিরতি কর্মসূচী পালিত নগরীতে পুলিশের অভিযানে মাদকসহ গ্রেপ্তার ৯ নাচোলে এক শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ৬০ বছরের বৃদ্ব গ্রেফতার ‘অগ্নিকন্যা’ মতিয়া চৌধুরী আর নেই, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে বিভাগীয় সমন্বয়ক সভা অহংকারীদের পছন্দ করেন না আল্লাহপাক ! হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী মোহনপুরে গলায় ফাঁস দিয়ে কৃষকের আত্মহত্যা দুর্গাপুরে জেলা সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আরিফসহ ৩ জন গ্রেপ্তার আন্দোলনে নিহত সাকিবের লাশ ৭২ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন আধিপত্ত্য বিস্তারে সড়ক পরিবহনের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ নিউমার্কেটের সামনে ফ্লাইওভার নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন নগরীতে নিখোঁজ দুই নারী-শিশু ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে উদ্ধার ক্রিকেট দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহকে বরখাস্ত রাজশাহীতে বেড়েছে পাসের হার ও জিপিএ-৫ এইচএসসিতে রাজশাহী বিভাগের ১২ কলেজের সবাই অকৃতকার্য
‘মুশতাক খুন করছে না ডাহাতি’

‘মুশতাক খুন করছে না ডাহাতি’

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার উচিৎপুরা বাজার থেকে সোজা পশ্চিমে চলে যাওয়া ছোট্ট নদীটির নাম হাঁড়িধোয়া। নদীতীরের পিচঢালা সড়ক ধরে কিছু দূর পশ্চিমে গেলেই ছোট বালাপুর গ্রাম। লেখক মুশতাক আহমেদের পৈতৃক ভিটা এখানে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে মারা যান মুশতাক আহমেদ। এ নিয়ে ছোট বালাপুরের মানুষের মনে ক্ষোভ, নানা প্রশ্ন।

শনিবার সকালে ছোট বালাপুরে পা রাখতেই দেখা হলো একদল কিশোরের সঙ্গে। গাছের ছায়ায় গোল হয়ে বসে মুঠোফোনে ব্যস্ত ছিল সবাই। মুশতাকের বাড়ির পথ জানতে চাইলে উঠে দাঁড়াল কয়েকজন। দুই পা এগিয়ে এসে এক কিশোরে পাল্টা প্রশ্ন, ‘কোন মুশতাক? জেলখানায় মাইরা ফেলছে যারে?’

পথ বলে দেয় তারা, ‘সামনে যাইয়া বাঁয়ে সাহেব বাড়ি’। সাহেববাড়ির পথে পরিচয় হলো বালু ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। মুশতাক আহমেদের কথা শুনে তিনি সাহেব বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। জানালেন, মেঘনা নদীর এই চরাঞ্চলে হাজী নামাযউল্লার বংশধরেরাই সবচেয়ে শিক্ষিত, ধনী আর দানশীল। হাজী নামাযউল্লার ছেলের ঘরের নাতি মুশতাক আহমেদ। শহরের চাকরিজীবী সাহেবেরা থাকতেন বলে ওই বাড়ির নাম হয় সাহেববাড়ি। কথার মধ্যেই গলার স্বর নামিয়ে জিজ্ঞেস করেন আনোয়ার, ‘মুশতাক ভাই কী করছে, ওনারে নাকি জেলখানায় মাইরা ফেলছে?’

আধাপাকা সাতটা ঘর নিয়ে সাহেববাড়ি। মুশতাক আহমেদের স্থায়ী ঠিকানা এটা।

বছরে–দুবছরে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে অসতেন। সর্বশেষ এসেছিলেন ২০১৭ সালে।
কথা হলো মুশতাকের চাচাতো ভাই শফিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মুশতাকের বাবা প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাকের কর্মস্থল ছিল চুয়াডাঙ্গায়। সেখানেই বেড়ে উঠেছেন মুশতাক। তারপর ঢাকায়। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম মুশতাক স্পষ্টভাষী, সাহসী। কী যেন লেখালেখি করে। কুমিরের খামার করছে। হঠাৎ একদিন শোনলাম মুশতাক জেলখানায়। আমরা তো অবাক। এই ভদ্র ছেলেরে পুলিশ ধইরা নিব ক্যান! পরে যখন শোনলাম লেখালেখির কারণে ধইরা নিছে, তখন ভাবনা একটু কমল। মনে মনে ভাবলাম দেশে চুরি–ডাকাতি–খুন কইরা শাস্তি হয় না, লেইখা আর কী শাস্তি হইব!’ বলতে বলতেই থেমে যান শফিকুর। ছল ছল চোখে বলেন, ‘তখনো বুঝি নাই যে আইনে ধরছে, ওইটা এত খারাপ। লেখার কারণে কাউরে জেলে নেওয়া যায়!’

গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলেন শফিকুরের প্রতিবেশী মধ্যবয়সী এক নারী। এবার মুখে কাপড় চেপে এগিয়ে এলেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, ‘ওনারা শিক্ষিত মানুষ। দেশের ভালা মন্দ নিয়া ওনারা কথা কইব না?’ সঙ্গে গলা মেলান শফিকুরের পাশে থাকা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ে। বলেন, ‘সমাজের প্রত্যেক মানুষেরই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত।’ এতটুকু বলেই থেমে যান। থেমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি আর কিছু বলব না। চুপ থাকাই ভালো। কথা বললেই তো বিপদে পড়তে হয়।’

শফিকুরদের ঘর থেকে কয়েক ঘর পশ্চিমে গেলেই ছোট বালাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পাশেই নতুন রং করা তিনতলা মসজিদ ও এতিমখানা।

এতিমখানা থেকে শিশুদের কোরআন তিলাওয়াতের শব্দ ভেসে আসছে। বিদ্যালয়ের মাঠে কথা হয় হাফেজ আবদুল ওয়াহিদের সঙ্গে, ১৬ বছর ধরে এই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। তিনি বলেন, ‘বালাপুর গ্রামের মসজিদ, বিদ্যালয় আর এতিমখানাগুলো চলেই ওনার (মুশতাক আহমেদের) বাবা–চাচাদের টাকায়। এই গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের এমন কোনো পরিবার নাই যারা বিপদে মুশতাক ভাইদের পাশে পায় নাই। রাজ্জাক সাহেব (মুশতাকের বাবা) গত সপ্তাহে ফোন করে মুশতাক ভাইয়ের জেলবন্দীর কথা জানালেন। ওনার জন্য দোয়া চাইলেন। আমরাও দোয়ার আয়োজন করলাম। কালকেই (শুক্রবার) জুম্মার পরে ওনার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করতে হইল। ওনার মতো লোকের ছেলে জেলখানায় মারা গেছে, এটা এলাকার মানুষ মানতে পারতেছে না।’

হাফেজ ওয়াহিদের সঙ্গে কথা বলতে দেখে এগিয়ে আসেন কৃষক আরজু মিয়া, আসগর মিয়া, বৃদ্ধ নাজমা বেগমসহ আরও কয়েকজন। মুশতাকের বিষয়ে তদন্ত করতে শহর থেকে লোক এসেছে বলে শুনে তাঁরা এসেছেন। তাঁরা মুশতাকের পরিবারের কথা শোনালেন, নিজেদের ক্ষোভ ঝাড়লেন। সত্তরোর্ধ্ব নাজমা বেগমের ক্ষোভ কমছেই না।

খুবই রাগী গলায় প্রশ্ন করেন তিনি, ‘ওই মিয়া, মার্ডার কইরা মাইনষে জামিন পায় না? চুরি, ডাহাতি (ডাকাতি) কইরাও তো জামিন পায়। তয়, মুশতাকের অইল না কেন, মুশতাক খুন করছে না ডাহাতি?’ সূত্র : প্রথমআলোা। আজকের তানোর

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.