শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৪৪ am
জাহান্নাম আরবি শব্দ। ফারসিতে বলা হয় দোজখ আর বাংলায় নরক। অর্থাৎ জাহান্নাম হলো শাস্তির স্থান। ইসলামের পরিভাষায় বিচার দিবসে পাপ-পুণ্যের হিসাবের পর পাপীদের এবং কাফেরদের অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করে চূড়ান্ত পর্যায়ে শাস্তি দেওয়ার জন্য যে কষ্টদায়ক স্থানে নিক্ষেপ করা হবে তাকেই জাহান্নাম বলে।
জাহান্নামের সংখ্যা ৭। ১. জাহান্নাম ২. লাজা ৩. হুতামাহ ৪. সায়ির ৫. সাকার ৬. জাহিম ৭. হাবিয়াহ। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই জাহান্নাম প্রতীক্ষায় রয়েছে। সীমালঙ্ঘনকারীদের আশ্রয়স্থলরূপে। সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে। সেখানে তারা কোনো শীতলতা এবং কোনো ঠান্ডা পানীয় পাবে না। বরং শুধু ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া।’ (সুরা নাবা, আায়াত ২১-২৫) এ আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল গরম পানি ও পুঁজ জাহান্নামিদের পান করানো হবে।
আল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা কুফরি করেছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের মৃত্যুর ফয়সালাও দেওয়া হবে না যে তারা মরে যাবে এবং তাদের শাস্তিও কমানো হবে না। এভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।’ (সুরা ফাতির, আয়াত ৩৬) কেউ কাউকে হত্যা করলে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম।
সুরা নিসায় আল্লাহ বলেন, ‘কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মোমিনকে হত্যা করলে তার পরিণতি হবে জাহান্নাম। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হবেন এবং তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য বিশাল আজাব প্রস্তুত করে রাখবেন।’ (আয়াত ৯৩)
রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জাহান্নামের সবচেয়ে বেশি শাস্তি আগুনেরই হবে এবং জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি গরম হবে।’ (বুখারি) যারা দুনিয়ার বুকে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে এবং যে অপরাধগুলো কোরআন ও হাদিসের আলোকে নিষিদ্ধ তারাই হবে জাহান্নামি। যেমন কাউকে বিনা অপরাধে হত্যা, ব্যভিচার, এতিমের সম্পদ গ্রাস, সুদ-ঘুষের উপার্জন দিয়ে আলিশান জীবন যাপন, সরকারি অর্থ গ্রাস, দুর্নীতি করে সম্পদের মালিক হওয়া, জাকাত আদায় না করা, অন্যের হক নষ্ট করা, মদ জুয়া ও নারী নিয়ে মত্ত থাকা ইত্যাদি।
আল্লাহ বলেন, ‘যারা অন্যায়ভাবে এতিমের মালসম্পদ ভক্ষণ করে তারা যেন আগুন দিয়েই নিজেদের পেট ভর্তি করে, অচিরেই এ লোকগুলো জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে থাকবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত ১০) জাহান্নামিদের খাদ্য হবে জাক্কুম বৃক্ষ। ‘নিঃসন্দেহে জাহান্নামে জাক্কুম নামে একটি গাছ থাকবে। তা হবে পাপীদের জন্য সেখানকার খাদ্য।’ (সুরা আদ দুখান, আয়াত ৪৩-৪৪)
আল্লাহ আরও বলেন, ‘সেদিন তুমি অপরাধীদের সবাইকে শৃঙ্খলিত অবস্থায় দেখতে পাবে, ওদের পোশাক হবে আলকাতরার মতো ঘন কালো, আগুন তাদের মুখমন্ডল আচ্ছাদিত করে রাখবে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত ৪৯-৫০) অপরাধীরা জাহান্নামে আর্তনাদ করবে আর বলবে, হে আল্লাহ! আমাদের বের করে দিন আমরা আগে যে আমল করতাম তার পরিবর্তে এখন নেক আমল করব।
তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদের দুনিয়ায় এক দীর্ঘ জীবন দান করিনি? সাবধান হতে চাইলে তখন কি কেউ সেখানে সাবধান হতে পারত না? (সুরা ফাতির, আয়াত ৩৭) জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করে আয়েশা (রা.) কাঁদতেন এবং ওমর (রা.) কোরআন পাঠের সময় জাহান্নামের আজাবের কথা পাঠ করতে গিয়ে বেহুঁশ হয়ে যেতেন। সুতরাং আমাদের সবার উচিত আমরা যেন কোরআন ও হাদিসের বিধান মেনে জীবন গড়ি এবং জাহান্নামের আগুন ও আজাবের কথা মনে রেখে নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত থাকি। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার