সমবার, ২৩ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:২৫ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের তিন জেলায় বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু ভারতীয় সঞ্চালন লাইনে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনছে সরকার ট্রাইব্যুনাল গঠন ও ৮ দফা দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন নাচোলে গুজব প্রতিরোধে মানববন্ধন অনুষ্ঠতি অনলাইনে সরব, মাঠে নীরব আ.লীগ তানোর প্রেসক্লাব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, প্রতিক বরাদ্দ ঢালাও মামলার কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে : আসিফ নজরুল মোহনপুরে আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত মসজিদের বিশেষ আদব ও শিষ্টাচার : হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী মোহনপুরে আ.লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সালাম গ্রেপ্তার, মিষ্টি বিতরণ দুদকের তালিকায় ১০০ ব্যক্তির সম্পদের পাহাড় গড়েছেন যারা আ.লীগ ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ৭৫০ মামলা ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন
তানোর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভারপ্রাপ্তের ভরে ভেঙ্গে পড়েছে চিকিৎসা সেবা

তানোর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভারপ্রাপ্তের ভরে ভেঙ্গে পড়েছে চিকিৎসা সেবা

ইমরান হোসাইন :
নানা অনিয়ম আর দূর্নীতি ও ভারপ্রাপ্তদের ভরে ভেঙ্গে পড়েছে রাজশাহীর তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। এছাড়া রয়েছে নানা সংকটও। একদিকে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, অন্যদিকে যারা আছেন তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ। বিশেষ করে টিএইচও এবং আরএমও না থাকার দোহাই দিয়ে সার্বক্ষণিক অবস্থানের বিপরীতে মাত্র সাড়ে ৪ ঘন্টা অফিস করেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ফলে এমন পরিস্থিতিতে ভেঙ্গে পড়েছে এ উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা।

শনিবার সকালে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র। বিছানার ব্যবহৃত চাদর ও পর্দাগুলো ময়নাযুক্ত দূর্গন্ধেভরা। মূলত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুল হাকিম এবং মেডিকেল আবাসিক অফিসার আরএমও (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ইসরাত জাহান জেরিন দূর্নীতিতে নিমর্জ্জিত থাকায় এপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে, আরএমও ২৪ ঘন্টা হাসপাতালে থাকার নিয়ম থাকলেও তিনি মেডিকেলের কোয়াটারে থাকেন না। রাজশাহী নগরী থেকে অনিয়মিত ভাবে অফিস করেন। মেডিকেলের প্রধান এই দুই অফিসার তাঁরা কেউ রোগীদের চিকিৎসা সেবা তো দেন না। এছাড়াও নিয়মিত অফিসও করেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। শুধু তাদের আলীশন চেম্বারে বসে সময় কাটান। তবে, ডা. ইসরাত জাহান জেরিনের মোবাইলে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আমি মোবাইলে কথা বলি না। অফিসে সরাসরি দেখা করতে বলে মোবাইল সংযোগ বিছিন্ন করে দেন তিনি।

হাসপাতালের ওয়ার্ডে হারিকেন পরিস্কারের সময় এক আয়া জানান, একটু পরই তো সন্ধ্যা নামবে। অন্ধকার হয়ে যাবে সব। বিদ্যুৎও চলে যাবে। জুরুরি বিভাগের জন্য এসব হারিকেল বাতি তৈরি করা হচ্ছে। ওর্য়াড এবং অন্য কক্ষগুলোর অবস্থার কথা জানতে যাইলে তিনি জানান, রোগীরা তাদের নিজ দায়িত্বে আলো বাতি তারা রিজেরাই বহন করবেন। তাদের মধ্যে অনেকেই মোমবাতির ব্যবস্থা করেন। মূলতো একটিমাত্র জেনারেটর থাকলেও তেলের অভাবে বন্ধ থাকে বলেই এসব দূর্দশা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তানোর পৌর এলাকার তালন্দ মহল্লার একরোগী ডাক্তারের কক্ষে চিকিৎসা নিতে প্রবেশ করেন। ওই সময় পার্শ্বে বসে থাকা রিপেজন্টেটিভের সাথে আলাপ চারিতায় আড্ডা মারেন ওই ডাক্তার। আর ওই রোগী তার চিকিৎসা নিতে ছটপট করছেন। কিন্তু রোগীর কোন ব্যবস্থা করছেন না তিনি। ফজলু নামের এক মাথা কাটা শিশুকে জুরুরি বিভাগে নিয়ে এসে তার স্বজনরা জানান, নিরুপাই হয়ে হাসপাতালে রোগী নিয়ে এলে এখানকার জুরুরি বিভাগে ডাক্তারের তো দেখাই মিলে না। জুরুরি বিভাগের উপ-সহকারী কমিউনিটি ক্লিনিক মেডিকেল অফিসার আরিফুল ইসলাম নামের একব্যক্তি ভিতরের আরেকরুমে টিভি দেখা নিয়ে ব্যস্ত আছেন। রোগীর কাতরানো দেখে পিয়ন দিয়ে কাটা ছিড়া কাজে সিলাই দেয়া হচ্ছে। তানোর হাসপাতালের শুধু এমনই বেহাল চিত্র নয়।

পঞ্চাশ শয্যার সরকারি এই হাসপাতালে ২৫ জন ডাক্তার পোষ্টিং থাকলেও হাসপাতালের আবাসিক কোয়াটারে থাকেন না কেউ। রাজশাহী নগরী থেকে অনিয়মিত ভাবে দুয়েকজন অফিস করেন তারা। তাও আবার ১০টায় এসে ঘড়ির কাটা ১ টায় পৌঁছালে উঠে পড়েন। কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অফিসে থাকার নিয়ম রয়েছে। এসব নিয়মের তোয়াক্কা করেন না খোঁদ টিএইচও (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুল হাকিম ও আরএমও (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ইসরাত জাহান জেরিন।

উপজেলার লালপুর গ্রামের আয়েজ উদ্দিন নামের এক রোগীর অভিভাবক জানান, আউটডোরে শুধু ৩ জন চিকিৎসক রোগীর ব্যবস্থাপত্র লিখছেন। আর দুই কক্ষ মিলে ১ জন ডাক্তার বসে আছেন। সেখানে লোকের ভিড়ে প্রবেশ করতে না পেরে জুরুরি বিভাগে গেলেও চিকিৎসকের অভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে তার রোগী নিয়ে হাসপাতালের বাইরে ক্লিনিকে চিকিৎসা করান। পুরো হাসপাতালে ৪ জন ডাক্তার ঢিমেঢালা অফিস করলেও ২১ জন ডাক্তার বাসায় বসে মাস শেষে বেতন তুলছেন।

অপরদিকে, কমপ্লেক্সে ১৭ জন নার্সের পোষ্টিং থাকলেও নিয়মিত অফিস করেন ৬ জন। একই চিত্র উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যগুলোতেও রয়েছে বলে তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা গেছে। ওইসব ডাক্তারদের উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পোষ্টিং থাকলেও তারা জেলা শহর থেকে এসে উপজেলা সদর হাসপাতালে বসে সময় কাটান। কেউ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বসেন না। বসলেও দুই থেকে তিন ঘন্টা উপজেলা সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসেন। এতে ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ওই অঞ্চলের রোগীরা বলে জানিয়েছেন অনেকে। ফলে ওই অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা হুমকির মুখে পড়েছে।

এ উপজেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও সতেরটি কমিউক্লিনিক রয়েছে। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রয়োজনের তুলনায় জনবলের পোষ্টিংয়ের কমতি না থাকলেও তারা কর্মস্থলে না থাকায় চিকিৎসা নিতে এসে বিপাকে পড়ছেন চিকিৎসার্থীরা। সরকারি নিয়ম অনুয়ায়ী যেখানে ২৫ জন ডাক্তার থাকার কথা, সেখানে রয়েছে মাত্র ৭ জন। তবে, মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট পদে ৩ জনের স্থলে ১ জন নামে মাত্র অফিস করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যনুযায়ী মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞ, গাইনি বিশেষজ্ঞ, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ডেন্টাল সার্জন, এক্সরে ও আল্ট্রাসনো পদে চিকিৎসক থাকলেও হাসপাতালে এসে টিএইচও’র এসিরুমে বসে চা আপ্পায়নে গল্প করে সময় কাটান। অথচ রোগীরা ঘন্টা ধরে চিকিৎসকের অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু কোন রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এই হাসপাতালে ৯৫টি পদের পোষ্টিং থাকলেও বাস্তবে ঢিমেঢালা অফিস করেন হাতেগুনা কয়েকজন। বাকিরা ক্ষমতার দাপটে বাসায় বসে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন।
অপরদিকে, এই হাসপাতালটির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য ফুলের বাগান তৈরি বাবদ সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও হাসপাতালের টিএইচও ভারপ্রাপ্ত ও আরএমও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ফুলের বাগানের নামে বরাদদকৃত ওইসব অর্থ আত্নসাৎ করেই চলেছেন। এসব দেখার যেন কেউ নেই।

অপরদিকে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উন্নতিকরণ করা হয়েছে। সেইমতে জনবল নিয়োগ দেয়াও হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার ও নার্স নিয়মিত উপস্থিত না থাকায় উপজেলার লাখ লাখ মানুষ উন্নত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী হাসপাতালের বর্তমান টিএইচও (ভারপ্রাপ্ত) এবং আরএমও (ভারপ্রাপ্ত) উদাসীনতা আর অনিয়মকেই দায়ী করছেন।

রাজশাহীর অবহেলিত তানোর উপজেলায় প্রায় ৪ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি মাত্র সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ উপজেলায় এতো মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বিগত জোট সরকার আমলে ২০০৩ সালের ২০ ডিসেম্বর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যা করণের কাজ উদ্ধোধণ করেন সেই সময়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মরহুম ব্যারিষ্টার আমিনুল হক। প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ ৯ মাসের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও সাত বছরে শেষ করেন নির্মাণ কাজ। কিন্তু আজও উদ্বোধন করা হয়নি। তবে, উদ্বোধন ছাড়াই নতুন ভবন ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে, এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুল হাকিম বলেছেন, চিকিৎসকরা একটু দেরি করে অফিসে আসেন এটা ঠিক আছে। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার, ডেন্টাল ইউনিট, ব্লাড ব্যাংক ও এক্সরে মেশিন সব অচল নয়। দুয়েকটি বন্ধ আছে। চিকিৎসক ও নার্সরা নিয়মমতে পালাক্রমে ডিউটি করে থাকেন বলে এড়িয়ে গেছেন এই কর্মকর্তা। আজকের তানোর

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.