রবিবর, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:৪২ am
যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে. আবদুল মোমেন বলেছেন, আন্দামান সাগরে আটকে পড়া ও প্রতিবেশী ভারতের পক্ষ থেকে সহায়তা পাওয়া ৮১ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই বাংলাদেশের। শনিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেছেন।
শুক্রবার ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, মাছ ধরার নৌকাতে আটকে পড়া ৮১ জন জীবিত ও ৮ জন মৃতকে উদ্ধার করেছেন। তারা চেষ্টা করছেন, উদ্ধারকৃতদের বাংলাদেশ যাতে গ্রহণ করে। কিন্তু শুক্রবার রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ চায় আন্দামানের সবচেয়ে কাছের দেশ ভারত বা আটকে পড়া মানুষেরা যে দেশের নাগরিক সেই মিয়ানমার তাদের গ্রহণ করুক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়, তারা মিয়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরে আটকে পড়া এসব মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসব মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা আমাদের নেই। আবদুল মোমেন আরও বলেন, এসব মানুষ ভারতের সীমা থেকে ১৪৭ কিলোমিটার এবং মিয়ানমার থেকে ৩২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। অন্যান্য ও দেশ সংস্থার উচিত এই শরণার্থীদের দায়িত্ব নেওয়া।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কোনও সাড়া দেননি। তবে বৃহস্পতিবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছিলেন, আটকে পড়া মানুষদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত প্রত্যর্পণ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করছে ভারত।
আটকে পড়া এসব মানুষকে ভারতের মাটিতে আশ্রয় দেওয়া হবে কিনা জানতে চেয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলেও ভারতীয় কর্মকর্তারা কোনও সাড়া দেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত খাবার ও পানি দিয়ে শরণার্থীদের সহযোগিতা করবে কিন্তু তাদের আশ্রয় দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই দিল্লির।
মিয়ানমারে বিভিন্ন সময় নিপীড়নের মুখে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে ২০১৭ সালে সামরিক অভিযানের সময় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানবপাচারকারীরা রোহিঙ্গাদের ফাঁদে ফেলে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর নিখোঁজ নৌকা নিয়ে এই সপ্তাহে উদ্যোগ প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার ভারত জানিয়েছে, নৌকায় থাকা মানুষদের মধ্যে প্রায় ৪৭ জনের আইডি কার্ড রয়েছে। এসব কার্ড বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর কার্যালয় থেকে প্রদান করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব বাস্তুচ্যুত মানুষ মিয়ানমারের নাগরিক।
মালয়েশিয়ার যাওয়ার পথে নৌকা বিকল হয়ে যাওয়াতে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে সমুদ্রে আন্তর্জাতিক জলসীমায় রয়েছে এসব মানুষ। শনিবার ভারতের পক্ষ থেকে তাদের জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করা হয়। এতে ৫৬ নারী, ৮ বালিকা, ২১ পুরুষ ও ৫ বালক রয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, এদের অনেকেই অসুস্থ ও চরম পানিশূন্যতায় ভুগছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা বা নৌকায় আটকে পড়া মানুষদের আশ্রয় দেওয়া পুনবার্সনের বৈশ্বিক চুক্তি ও দায়িত্ব নিয়েছে? না, একেবারেই নেয়নি।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ইউএনসিএইচআর কার্যালয়ের আইডি কার্ড থাকায় সংস্থাটির এসব মানুষের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। তার কথায়, যদি তারা ইউএনসিএইচআর-এর কার্ডধারী হয় তাহলে কেন তারা মানবপাচারকারীদের দ্বারা মৃত্যুর মুখে যেতে দিলো?
এই বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার কর্মকর্তাদের মন্তব্য জানতে পারেনি রয়টার্স। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন। আজকে তানোর