মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:২৯ pm
ডেস্ক রির্পোট : ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হন। দীর্ঘ এই সফর শেষে আগামী ৪ অক্টোবর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে তার।
প্রধানমন্ত্রী প্রথমে যুক্তরাজ্যে যাবেন। সেখানে আগামী সোমবার বাকিংহাম প্যালেসে রানির শেষকৃত্যে যোগ দেবেন। এরপর মঙ্গলবার নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। যোগ দেবেন জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে। পরে প্রধানমন্ত্রী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর ওয়াশিংটন সফর করবেন। এবারের সফরে ১৬৭ জন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বৈঠকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেয়া নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের পাশাপাশি বাংলাদেশের অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি খাত বিকাশে সরকারের কার্যক্রম বক্তব্যে তুলে ধরবেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, করোনাভাইরাসের মতো ভবিষ্যত স্বাস্থ্যসংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে টিকা এবং প্রতিষেধকের ন্যায্য ও আরও ন্যায়সঙ্গত বণ্টনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও জানান, রানির শেষকৃত্যে যোগ দেয়ার কারণে ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দপ্তরে শিক্ষাব্যবস্থার বিবর্তন নিয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না শেখ হাসিনা। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি অনুয়ায়ী, ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডার্স-এর উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের (জিসিআরজি) উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর। এ গ্রুপে ছয়জন চ্যাম্পিয়নের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম।
এতে আরও বলা হয়, চলতি বছরের মার্চে জাতিসংঘ মহাসচিব খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক বিষয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শেখ হাসিনাসহ মোট ছয়টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের সমন্বয়ে এ গ্রুপটি গঠন করেন।
২২ সেপ্টেম্বর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় কো-চেয়ার হিসেবে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা যায়, রোহিঙ্গা-সমস্যা ও টেকসই আবাসন নিয়ে আলাদা দুটি অনুষ্ঠান আয়োজন করবে বাংলাদেশ, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি সেক্রেটারিয়েট, কানাডা, সৌদি আরব, তুরস্ক, গাম্বিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া রোহিঙ্গাবিষয়ক পার্শ্ব অনুষ্ঠানটি কো-স্পন্সর করবে। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রিফ করবেন।
২১ সেপ্টেম্বর টেকসই আবাসনবিষয়ক পার্শ্ব অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘ আবাসন সংস্থা যৌথভাবে এর আয়োজন করছে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের আয়োজনে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধাগুলো উপস্থাপন করবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতির কথা জাতিসংঘে তুলে ধরে সংকট সমাধানে আলোচনার ওপর জোর দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বর্তমান মিয়ানমার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করাসহ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বানও জানাবেন তিনি।
আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বক্তব্য রাখবেন সরকারপ্রধান। প্রতিবারের মতো এবারও সেখানে বাংলায় বক্তৃতা দেবেন শেখ হাসিনা।
মিয়ানমার সীমান্তে চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর একজন রোহিঙ্গাকেও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেব না। পাঁচ বছর হলো মিয়ানমার সরকার রাজি হওয়া সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়নি। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে উপায় খুঁজে বের করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।’ সূত্র : দৈনিক বাংলা