শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:১৩ pm
ডেস্ক রিপেরোট : রাজধানীর ডেমরা সারুলিয়া থেকে নূরী জান্নাত মিতুর (২১) লাশ উদ্ধার, মামলা করতে ময়না তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় মা-বাবা। ডেমরা সারুলিয়া এলাকার ৬৮ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম টেংরা এলাকার আলামিন রোডের মাসুদ নামে ব্যক্তির বাড়ির একটি রুম থেকে গত শুক্রবার (০২ সেপ্টেম্বর) রাত ১:৩০ ঘটিকার সময় পুলিশ নূরী জান্নাত মিতুর লাশ উদ্ধার করে।
জানা যায়, গত শুক্রবার (০২ সেপ্টেম্বর) রাত ১১ ঘটিকার সময় নূরী জান্নাত মিতুর লাশ উদ্ধারের কিছু সময় আগে তার স্বামী মোঃ লাভলু (লিখন) মিতুর নানীর কাছে ফোন দিয়ে বলে মিতুর মৃত্যু হয়েছে। কিভাবে মৃত্যু হলো জানতে চাইলে লাভলু বলেন, আমি আমার আরেক স্ত্রী কল্পনা কে তালাক দিবো বলে তার কাছে ৩ লক্ষ টাকা চেয়েছিলাম তাই, এমনটিই বলেন মিতুর নানী। এরপর মিতুর নানী জাহানারা বেগম রাত ১১ টায় পর মিতুর মা পারভীনের কাছে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে তাৎক্ষণিক তারা ডেমরা থানার ওসির মোবাইলে ফোন দিয়ে বিষয়টি সত্য কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বাহিরে আছি একটু জেনে তারপর জানাচ্ছি, কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দিলে তিনি বলেন ঘটনা সত্য এরপর তারা ঢাকার গাবতলী থেকে সিএনজি নিয়ে রওয়ানা দিলে কিছুক্ষণ পর আরেকজন এস আই ফোন দিয়ে একই ঘটনা জানান। পরবর্তীকালে তারা সিএনজি যোগে প্রথমে থানায় গেলে থানার তদন্ত ওসি অপমৃত্যুর মামলার জন্য স্বাক্ষর রেখে তারপর ঘটনাস্থলে পাঠালে তারা সেখানে গিয়ে ২ জন এস আই ও একজন এ এস আই এবং একজন মহিলা পুলিশ দেখতে পান এবং তখন মিতুর লাশ বিছানায় পড়ে আছে দেখতে পেলে মিতুর মা বাবা ও মামা জানতে চায় কিভাবে মৃত্যু হলো তখন পুলিশ জানায় গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় জুলন্ত পেয়েছে তবে কোন জিব্বা তার বের হয়নি এবং তার হাটু বিছানার সাথে মিশে আছে এরকম অবস্থায় তারা দেখতে পায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে গত শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল বেলা ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ লাশ মা বাবার কাছে হস্তান্তর করে। সেদিনই লাশ রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবর স্থানে দাফন করা হয় এবং ৪ দিন পর তার জন্য মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেন বাবা মা।
ডেমরা থানায় গেলে ওসিকে থানায় পাওয়া যায়নি তিনি ঢাকার বাহিরে আছেন বলে তদন্ত ওসি মোঃ ফারুক মোল্লা’কে জানান এবং বলেন ওসি আসলে তার সাথে যোগাযোগ করে আসেন।
গত (০৯ সেপ্টেম্বর) ওসিকে মিতুর বাবা সাংবাদিক নূর হোসাইন ফোন দিয়ে মামলা করতে থানায় যাওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, রিপোর্ট আসার পর মামলা দিলে ভাল হয়, দুই একদিনে রিপোর্ট আসবে কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, ততবীর করলে তারাতারি দিতে পারে, সেই কথা মত হাসপাতালের ডোম ঘরের দায়িত্বে থাকা মিলন নামে ব্যক্তিকে মিতুর বাবা ফোন করে জানতে চাইলে তিনি তাকে জানান ৩ মাসের আগে নয় তবে তবদির করলে ২ মাসের মধ্যে আসবে।
বিষয়টি ডেমরা থানার ওসিকে মিতুর বাবা ফোন করে জানান এবং বলেন এতো দেরি হবে যেহেতু, তাই আমরা আগামীকাল মামলা করতে আসি তখন ওসি বলেন এখন মামলা দিলে রিপোর্ট যদি অন্য ভাবে আসে তাহলে কোন লাভ হবেনা, তখন আমরা মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দিব আর যদি রিপোর্ট আসার পর মামলা হয় তাহলে সে মামলা সঠিক হবে বলে ওসি জানান, তিনি বলেন এখন আপনি আনুমানিক করে মামলা দিবেন আর তখন আমরা রিপোর্ট হাতে পেয়ে সঠিকভাবে মামলা দেব, যদি হত্যা করা হয়েছে রিপোর্ট আসে তাহলে আমরাই মামলা দেবো। আপনার অপেক্ষায় আমরা থাকবনা। রিপোর্ট আসার সাথে সাথেই ওসি মিতু আব্বা আম্মাকে ডাকবেন বলে জানান এবং তিনি মিতুর আব্বাকে বলেন এই মামলা এক বৎসর পরেও দেওয়া যাবে এমনটিই মিতুর বাবা জানান। তাই মামলা দিতে রিপোর্টের অপেক্ষায় আছে মিতুর মা বাবা। মিতুর মা পারভীন বেগম জানান প্রায় ৩ মাস আগে মিতুর সাথে লাভলুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় ঘটে, কিছু দিন পর তারা আমাদের না জানিয়ে দুইজনে বিয়ে করে ফেলে।
মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকার একটি বাসায় তারা রুম ভাড়া নেন এবং কিছুদিন পর আমাদের বাড়িতে আসলে লাবলু কাছে জানতে চাই তার পরিচয় পরে লাভলু বলেন তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুর উপজেলায় একটি গ্রামে, তার বড় ভাই আছে তিনি ছোট এবং তিনি এর আগে বিয়ে করেননি এবং মা ও ভাই বোনের অনুমোদিত ছাড়া বিয়ে করায় তাকে চাদঁপুরে থাকা কাপরের ব্যবসা দোকান থেকে তার মা ভাই বোন বঞ্চিত করেছে তাই সে বেকার বলে জানান এবং একটি কাপরের দোকান করতে ১ লক্ষ টাকা দাবি করেন, পরে মিতুর পিতা নূর হোসাইন তাকে না বলে তাদের এলাকায় যায় তার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য, যে ঠিকানা লাবলু দেয় ওই ঠিকানায় তার কাউকে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত লাবলুকে ফোন দিতে বাধ্য হন নূর হোসাইন। ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলে এবং তার এলাকায় উপস্থিত আছে যেনে লাবলু তার পাশের একটি জায়গার নাম বলে ফোন বন্ধ করে দেন। এরপর লোকজন কে জিজ্ঞেস করতে করতে তার বাড়ি ওই থানার গোবিন্দশী গ্রামের তোতা মিয়ার মোড় এর পাশেই মন্ডল বাড়ি গিয়ে জানতে পারে তার স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে এবং এর আগে একই এলাকায় আরেকটি বিয়ে করে তার সাথে লাভলুর ডিভোর্স হয়।
নূর হোসাইন ঢাকায় এসে জানতে পারে লাভলু মোহাম্মদপুরের বাসা ছেড়ে সেদিনই চলে গেছে, আর চলে যাওয়ার প্রায় দের মাস পর মিতুর লাশ উদ্ধার ডেমরা সারুলিয়া তার ভাড়া করা রুম থেকে। অত্র এলাকায় রুম ভাড়া করার আগে কিছু দিন লাভলুর মা, বোন,বোন জামাই ও তার ছোট ভাই লাশ উদ্ধার করা বাড়ির পাশের বাড়িতে থাকত সেখানেই ছিল। এরপর তারা লাভলু ও মিতুকে পাশের বাড়ি রুম নিয়ে দিয়ে চলে যান আর এর কিছু দিন পরই মিতুর লাশ উদ্ধার হয় ওই রুম থেকে।
লাশ উদ্ধারের পর থেকে আর তাদের কোন হদিস নেই এবং তাদের কারো ফোন চালু নেই। এব্যপারে জানতে চাইলে ডেমরা থানার ওসি বলেন রিপোর্ট আসার পর মামলা করলে ভাল হয় তার পরামর্শ মিতুর বাবা মাকে দেওয়া হয়েছে এবং আমরা রিপোর্ট আসার অপেক্ষায় । সূত্র : কালের কণ্ঠ