বুধবা, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৩৭ am
ডেস্ক রির্পোট : বৃষ্টি এলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। তাই ছাদে কায়দা করে পলিথিন বাঁধা। দেয়ালেরও রুগ্ণ দশা। পলেস্তারা পড়ে বলে দেয়াল জড়ানো পলিথিন আর কাগজ দিয়ে। দরজা–জানালা খুলে বেরিয়ে আসার জোগাড়। শৌচাগারের দরজা ভাঙা। এর মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ভবনে থাকছেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা।
১২০ বছর আগে নির্মিত এ ছাত্রবাসের নাম মহারাণী হেমন্তকুমারী হিন্দু ছাত্রাবাস। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংয়ে এ বছর রাজশাহী কলেজ চতুর্থবারের মতো দেশসেরা হয়েছে। অথচ এ কলেজের একটি ছাত্রাবাসের এমন বেহাল দশা। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, সংস্কারকাজের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ঠিকাদার কাজ শুরু করছেন না।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯০১ সালে মহারাণী হেমন্তকুমারীর দানে রাজশাহী কলেজের হিন্দু ছাত্রাবাসের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। পরের বছর থেকে এটি কলেজের আবাসিক ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর দুটি ব্লকের ১১টি কক্ষে ৫২ জন আবাসিক শিক্ষার্থী থাকেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তা সম্প্রসারণের কারণে ছাত্রাবাসের নতুন একটি গেট তৈরি করা হয়েছে। তবে নবনির্মিত গেট পার হয়ে ভেতরে ঢুকতেই মন খারাপ হয়ে যায়। ছাত্রাবাসের সামনের মাঠে থিকথিকে কাদা আর এক পাশে জঙ্গল। বদ্ধ নালায় মশা–মাছি ভনভন করছে। ওই বদ্ধ পানিতে ছোট টাকি মাছ লাফালাফি করছে। শিক্ষার্থীরা জানান, এ নালায় তেলাপিয়া মাছও দেখা যায়।
ছাত্রাবাসের ভেতরে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। সব দেয়ালের পলেস্তারা খুলে বালু ঝরে পড়ছে। ৫ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র শুভ কর্মকার বললেন, তিনি বারান্দায় রান্না করছিলেন। তিনি সরে আসামাত্রই ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ল। তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। এর আগেও অনেক ছাত্রের মাথার ওপরে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ওই কক্ষের আরেক আবাসিক ছাত্র রিপন বর্মন বলেন, বৃষ্টি হলে ঝরঝর করে জল পড়ে। তাই ছাদের নিচে পলিথিন বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি শেষে পলিথিনের ভেতরে জমে থাকা জল পরে বের করে দিতে হয়। এ কক্ষে পাঁচজন ছাত্র থাকেন। কিন্তু একটা লাইট জ্বলে। আর কোনো লাইট জ্বালানো যায় না। লাইট নষ্ট হয়ে গেছে। পাঁচজনে মিলে এক লাইটের আলোতে পড়তে হয়।
১১ নম্বর কক্ষের বাপ্পী মহন্ত বলেন, তাঁর কক্ষের জানালা খুলে বাইরে পড়ে গিয়েছিল। পরে তিনি নিজের টাকা দিয়ে সিমেন্ট–বালু কিনে জানালা মেরামত করেছেন। তিনি পাশের কয়েকটি কক্ষ দেখালেন। এ সময় প্রায় সব কক্ষের দরজা–জানালার একই হাল দেখা গেল। ৯ নম্বর কক্ষে ঢুকে দেখা গেল ছাদের বিমে এমনভাবে ফাটল ধরেছে, যেকোনো সময় সেখানকার পলেস্তারা খসে পড়বে।
ছাত্রাবাসের টিভি দেখার কক্ষে চারটি ফ্যান আছে। তবে সব কটি ফ্যান অকেজো। রাতে এই কক্ষে নৈশপ্রহরী মো. রবি ঘুমান। তিনি বলেন, ‘জান হাতের তালুতে নিয়ে ঘুমাই। বৃষ্টির দিনে মনে হয় আজই মাথার ওপর ছাদ ভেঙে পড়বে। ঘুমানোর আর কোনো জায়গা নাই। তাই এখানেই থাকতে হয়।’
ছাত্রাবাসে রান্না করেন নাজমা বেগম। তিনি বললেন, বৃষ্টি হলে রান্নাঘরের মেঝে ভেসে যায়। এ জন্য সেদিন রান্না বন্ধ রাখতে হয়।
ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষটিও একই রকম জরাজীর্ণ। শিক্ষার্থীরা জানান, ভেঙে পড়ার ভয়ে তত্ত্বাবধায়ক বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া অফিস করেন না। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সুশান্ত রায় চৌধুরী বলেন, ছাত্রাবাসের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় মাথার ওপর ভেঙে পড়ার মতো হয়ে আছে।
এসব বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল খালেক বলেন, এ ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। আবার যেন জগন্নাথ হলের মতো অবস্থা না হয়। ছাত্রাবাসে ১০ লাখ টাকার সংস্কারকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজটি করছে। তাদের প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, কাজ শুরু করবেন, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ঠিকাদার কাজ শুরু করছেন না।
এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী উজ্জ্বল রায় বলেন, রাজশাহী কলেজের বড় সংস্কারকাজ করা হয়েছে। তবে রাজস্ব খাতের বরাদ্দের সংকট রয়েছে। এ জন্য ঠিকাদার অনেকবার কাজ শুরু করতে চেয়েও করেননি। তাঁকে এবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু না করলে কার্যাদেশ বাতিল করা হবে। সূত্র : প্রথম আলো