শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৩৭ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
দুদকের তালিকায় ১০০ ব্যক্তির সম্পদের পাহাড় গড়েছেন যারা আ.লীগ ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ৭৫০ মামলা ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ
ইতিহাস ছাত্র থেকে অর্থনীতিবিদ যিনি : আরিফ রহমান

ইতিহাস ছাত্র থেকে অর্থনীতিবিদ যিনি : আরিফ রহমান

ছিলেন ঢাবির ইতিহাস বিভাগের ছাত্র, হয়ে গেলেন অর্থনীতিবিদ। বলছি সদ্য প্রয়াত আকবর আলি খানের কথা। যাকে অনেকে বলেন জনগণের অর্থনীতিবিদ। বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন প্রখর মেধাবী এই মানুষটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে ১৯৬৪ সালে সম্মান ও ১৯৬৫ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন দুটিতেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিলেন আকবর আলি খান।

তুখোড় মেধাবী মানুষ ছিলেন আকবর আলি খান। একুশ বছর বয়সে সেই সময়ের বিসিএস দিয়ে (পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস) এসডিও হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র ২৬ বছর বয়সের এই ছেলে খাদ্য গুদাম খুলে দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষের জন্য। নিজের জিম্মার সব অস্ত্র স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।

২৬ বছর বয়সের এই ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল তৈরি করতে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ব্যাংকের ভল্ট থেকে তিন কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌঁছে দেন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ডেপুটি সেক্রেটারি বা উপসচিব হিসাবে পদস্থ হন। পাকিস্তান সরকার যুদ্ধের সময় তাকে পদচ্যুত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।

১৬ই ডিসেম্বরে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দেশে প্রত্যাবর্তন করে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতায় যোগদানের জন্য সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিলেও বঙ্গবন্ধু তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তাকে অবসর না দিয়ে শিক্ষকতা করার জন্য ছুটি দেয়া হয়।

কমনওয়েলথ বৃত্তির জন্য মনোনীত হবার আগে তিনি অল্প সময়ের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বৃত্তির জন্য তিনি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং সেখানে অর্থনীতি বিভাগে মাস্টার্স এবং পি. এইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।

মেধাবীরা সাধারণত পড়ালেখার ছন্দপতন ঘটান না। সেখানে তিরিশের পর নতুন একটি বিষয়ে মাস্টার্স করেই ক্ষান্ত হননি, পিএইচডি করেছেন কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ইতিহাস থেকে অর্থনীতির দিকে এভাবেই তাঁর যাত্রা শুরু হয়।

১৯৭৯ সালে দেশে ফেরত আসার পরে অল্প সময়ের মধ্যেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তাকে আবারো প্রশাসনের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যোগ দেবার জন্য আহ্বান জানানো হলে তিনি সাভারের বিপিএটিসি-তে মেম্বার ডাইরেক্টিং স্টাফ (এমডিএস) হিসেবে যোগ দেন। এরপর ১৯৮৭ পর্যন্ত পর্যন্ত তিনি পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন সচিবালয়ে কাজ করেন।

এরপর তিনি ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসে মিনিস্টার (ইকনমিক) পদে যোগ দেন। ঢাকায় ফিরে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগে অতিরিক্ত সচিব পদে যোগ দেন। তার সময়ে তিনি বিসিসিএল ব্যাংকের পূনর্গঠন এবং বেসিক ব্যাংক অধিগ্রহণের কাজ করেন। অল্প সময়ের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে কাজ করে তিনি ১৯৯৩ এ সরকারের সচিব হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি অর্থ সচিব হিসাবে পদস্থ হন।

২০০১ সালে তিনি বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে বিকল্প কার্যনির্বাহী পরিচালক (অল্টারনেটিভ এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর) পদে যোগদান করেন। বিশ্ব ব্যাংকে তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কাজ করেন।

বিশ্ব ব্যাংক থেকে অবসর গ্রহণের পর খান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর গভরর্ণমেণ্ট স্টাডিজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সেখানে খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন।

আকবর আলী খান ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন। ইয়াজউদ্দিন রাষ্ট্রপতি থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না এই আশঙ্কায় তার নেতৃত্বে চারজন উপদেষ্টার একযোগে পদত্যাগ করেন।

নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে নিমগ্ন আকবর আলী খান দেশের ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও অগ্রগতি নিয়ে গবেষণা করছেন। একই সঙ্গে তিনি জীবনানন্দ দাশের কবিতা নিয়ে গবেষণা করছেন, গবেষণা করেছেন এই অঞ্চলে ইসলামের প্রসার নিয়ে।

আলি আকবর খানের গ্রন্থ ‘হিস্টোরি অফ বাংলাদেশ” বা বাংলাদেশের ইতিহাস’ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত। বইটিতে তিনি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সামাজিক উত্থান ও পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করার পাশাপাশি দেশে ইসলাম ধর্মের বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি অর্থনীতিবিষয়ক বই, পরার্থপরতার অর্থনীতি যাতে তিনি সরস ও প্রাঞ্জল ভাষায় অর্থনীতির জটিল বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করেছেন।

তার গ্রন্থ Some Aspects of Peasant Behaviour in Bengal : A Neo-classical Analysis ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তার Discovery of Bangladesh বইটি। তিনি জনপ্রশাসন বিষয়ের উপর ইংরেজি ভাষায় “গ্রেশাম’স ল সিনড্রোম অ্যান্ড বিয়ন্ড, অ্যান অ্যানালাইসিস অব দ্য বাংলাদেশ ব্যুরোক্রেসি” নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এটি ২০১৫ সালে ইউনিভার্সিটি প্রেস লি. কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে।

তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-

– পরার্থপরতার অর্থনীতি

– আজব ও জবর আজব অর্থনীতি

– দারিদ্র্যের অর্থনীতি : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

– অবাক বাংলাদেশ : বিচিত্র ছলনাজালের রাজনীতি

– বাংলায় ইসলাম প্রচারে সাফল্য

– দুর্ভাবনা ও ভাবনা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে

– বাংলাদেশে বাজেট অর্থনীতি ও রাজনীতি

– চাবিকাঠির খোঁজে: নতুন আলোকে জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’

– বাংলাদেশের সত্তার অন্বেষা

– পুরানো সেই দিনের কথা

ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ছিলেন। নিজের বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে প্রশাসনে চাকরি নেন। ২৬ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধ করেন। তিরিশের পর উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিদেশে যান। নিজের বিভাগ পরিবর্তন করে ইতিহাস থেকে চলে আসেন অর্থনীতিতে। শিক্ষক হিসাবে ভূমিকার চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন আমলা হিসেবে। তারচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন অর্থনীতিবিদ হিসেবে। পঞ্চাশের পর লেখালেখি শুরু করেন। অর্থনীতিকে এতো সুন্দর ভাষায় তার আগে আর কেউ নিয়ে আসেনি মানুষের দোরগড়ায়।

শেষে এসে রাজনীতি, কবিতা, ধর্ম সবই হয়ে উঠেছিলো তার চর্চার বিষয়। যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানে ফলেছে সোনা। তিনি শিখিয়ে গেছেন কখনোই কোন কাজে দেরি হয়ে যায় না। তার রচনা আরও অনেক বছর বাংলার মানুষের কাজে লাগবে। লেখক- গণমাধ্যম কর্মী, একাত্তর টেলিভিশন

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.