শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৪০ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার মধ্যে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দফায় ১১টিতে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে চার পৌরসভাতে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিদ্রোহীরা। দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হওয়ায় দল থেকে তাদের বহিষ্কারও করা হয়।
বহিষ্কার হলেও ভোট পরবর্তী সময়ে বিদ্রোহীরা জেলা, উপজেলা নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতেও তাদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ দেখা গেছে। এমনকি তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগ মুণ্ডুমালা পৌরসভায় বিজয়ী বিদ্রোহী মেয়রকে সংবর্ধনা দিয়েছেন বেশ জমকালো আয়োজনে।
এ নিয়ে পরাজিত দলীয় প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্রোহীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হলেও তারা কীভাবে দলীয় নেতৃবৃন্দের সাহচর্য পাচ্ছেন ও দলীয় কর্মসূচিতে থাকছেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে নেতাকর্মীদের মাঝে।
রাজশাহীর মুণ্ডুমালা পৌরসভা নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী আমির হোসেন আমিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান। গত ২৪ জানুয়ারি বিদ্রোহী সাইদুরকে দল থেকে বহিষ্কার করে মুণ্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগ সাইদুরের বহিষ্কারাদেশ অনুমোদন করে কার্যকরে তা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। কেন্দ্র থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়।
অন্যদিকে, জেলা কমিটির সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই গত ২২ ফেব্রুয়ারি তানোরের দুবইল স্কুল মাঠে জমকালো সংবর্ধনা দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বিদ্রোহী সাইদুরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এবং তাকে পুনরায় দলে যোগদান করানো হয়।
এর আগে উপজেলা নির্বাচনে দলত্যাগ করে ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগ দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া শরিফুল ইসলামকেও দলে যোগদান করানো হয়েছে। তবে এই সংবর্ধনা ও যোগদান অনুষ্ঠানে মুণ্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী যোগ দেননি।
এদিকে, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক মামুন গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহী সাইদুর রহমানকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতোর দপ্তরে নিয়ে যান এবং ইউএনওকে ফুলের তোড়া দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন তানোর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র ইমরুল হক, উপজেলা আ’লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক পাপুল সরকার ও কৃষকলীগ নেতা এন্তাজ মোল্লা প্রমুখ।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুণ্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দল মনোনীত পরাজিত মেয়র প্রার্থী আমির হোসেন আমিন বলেন, যারা জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীর পক্ষে কাজ করেছে তাদের দল করার কোনো অধিকার নেই। তারপরও তারা বিদ্রোহীকে বড় আয়োজনে সংবর্ধনা দিল। এভাবে চলতে থাকলে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা দল করাই ছেড়ে দেবে। তানোর উপজেলা কমিটির সভাপতি রাব্বানীর কারণে দলের শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে, বহিষ্কৃত ও বিদ্রোহী মেয়রদের সংবর্ধনা দেওয়া প্রসঙ্গে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী বলেন, সাইদুরকে মুণ্ডুমালা পৌর কমিটি বহিষ্কার করেছে। তাকে জেলা কমিটি বহিষ্কার করেনি। এজন্য বিদ্রোহী সাইদুরকে আবার দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী তাকে সংবর্ধনা দিয়েছে। সেখানে তিনি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, রাজশাহীতে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল তীব্র হয়েছে পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। অনেক উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ জেলা কমিটি কিংবা কেন্দ্র কমিটির নির্দেশনা লঙ্ঘন করে বিদ্রোহীদের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে কাজ করেছে। নির্বাচিত বিদ্রোহীদের সংবর্ধনা ও দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিচ্ছে। এতে রাজশাহীতে দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে।
বিদ্রোহী বিজয়ী মেয়রদের সংবর্ধনা দেওয়া ও বহিষ্কারাদেশ থাকার পরও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হলেই সে দল থেকে বহিষ্কৃত বলে বিবেচিত হবেন। জেলা বা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা লঙ্ঘন করে কোনো বিদ্রোহী মেয়রকে সংবর্ধনা দেওয়া দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা। বিদ্রোহী ও তাদের প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবে জেলা কমিটি। দলের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, রাজশাহীর আড়ানীতে মুক্তার আলী, মুণ্ডুমালায় সাইদুর রহমান, গোদাগাড়ীতে মনিরুল ইসলাম বাবু ও পুঠিয়ায় বিদ্রোহী থাকায় বিএনপির প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হন। আজকের তানোর