বুধবা, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:২৮ am
ডেস্ক রির্পোট : সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার দায়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমানকে চার বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন সামরিক আদালত। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয় তাকে।
বরখাস্ত হওয়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) ১০তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের (লং কোর্স) মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
এছাড়া হাসিনুর রহমান হরকাতুল জিহাদের নেতা মাওলানা ইয়াহিয়ার সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করা, হিযবুত তাহ্রীরের তিন সদস্যের সঙ্গে দেখা করা, চট্টগ্রামে একজন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির ব্যাপারে টেলিফোনে বিদেশি এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনালাপ করা, পার্বত্য চুক্তিবিরোধী একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, সেনা অভিযানের খবর ফাঁস করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগেও অভিযুক্ত ছিলেন।
সাড়ে চার বছর কারাদণ্ড ভোগ শেষে তিনি দেশেই ছিলেন। তবে, সাম্প্রতিক সময়ের সব রকমের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন সময় ফেসবুকে নানা রকম উসকানিমূলক পোস্ট দেন তিনি।
জানা যায়, নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহরী সহ উগ্রপন্থী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে হাসিনুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে গুম করা হয়েছে মর্মে পরিবার থেকে প্রচার করলেও পরবর্তীতে আত্মগোপনে থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।
নিজেদের ভূইফোঁড় অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘নেত্র নিউজ’র হয়ে কুকর্ম করে যুক্তরাজ্যে পলাতক ও দণ্ডিত বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সর্বোচ্চ আস্থাও কুড়িয়েছেন। এ থেকে বুঝা যায় সংঘবদ্ধ একটি চক্রটি আজ নিজেদের পারস্পারিক স্বার্থ ও অন্তদ্বন্দ্বের কারণে তা জনগণের কাছে সে প্রকাশ করে দিয়েছে।
নীতিহীন, প্রতারক তাসনিম খলিল, জুলকার নাইন ও হাসিনুর রহমান এই তিনজনই দেশ ও জাতির জন্য ভয়ঙ্কর।
রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে এই সকল ব্যক্তিবর্গকে পরিহার করা আবশ্যক।
পারিবারিকভাবে বিএনপির সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকায় বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য তাকে একটি বিশেষ বাহিনীতে বদলী করা হয়। বিএনপি কর্তৃক প্রদত্ত সেই এজেন্ডা অদ্যাবধি সে বাস্তবায়ন করে চলেছে।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের যে প্রক্রিয়া শুরু হয় তাতে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত ভূমিকা পালন করে হাসিনুর। চট্টগ্রামে একটি বিশেষ বাহিনীতে কর্মরত থাকাকালে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ছিলেন হাসিনুর রহমান।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীনকে হত্যার জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। সাতকানিয়ার আহমদ উল্লাহ বিএনপি থেকে অন্য দলে যোগ দেয়ায় তাকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয় এবং এই ব্যাপারে এলডিপির অলি আহমেদ সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে হাসিনুর রহমানকে দায়ী করেছিলেন।
২০০৭ পরবর্তীকালে হাসিনুর রহমান নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরে যোগ দেন। এছাড়া জঙ্গি সংগঠন হুজির পলাতক নায়েবে আমীর মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শেখ ফরিদ ও হুজির কমান্ডার মাওলানা সাব্বির এর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তার।
পাবর্ত্য চট্টগ্রামে অবস্থিত ভিন্ন দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের প্রশিক্ষণ শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিযানের পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন সংবেদনশীল তথ্য নিয়মিত পাচারেও তার সংশ্লিষ্টতার প্রমান পাওয়া যায়। জঙ্গিদেরকে অস্ত্র সরবরাহ ছাড়াও ভিন্ন দেশের কয়েকটি প্রদেশে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র সরবরাহে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল।
২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বৈরি মনোভাবাপন্ন বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার ২ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে উত্তরার মাসকট প্লাজার একটি রেষ্টুরেন্টে জঙ্গি সদস্যদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন তিনি। উক্ত স্থান থেকে অস্ত্র বিক্রির সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন হাসিনুর রহমান।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে গুমের গুজব, অপপ্রচার ও উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এড়াতে ২০১৮ সালে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
তিনি ২০২০ সালে স্বেচ্ছায় পরিবারের কাছে ফিরে আসেন। তার স্ত্রীও গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন যে, হাসিনুর রহমানের শরীরে কোনো আঘাত বা নির্যাতনের চিহ্ন ছিল না।
হাসিনুর রহমান রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিলেন না। তার আচার আচরণ, বেশভূষা ও অসংলগ্ন কথাবার্তার কারণে তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে গণ্য করছেন অনেকে। তিনি দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক ও অসংলগ্ন বক্তব্য প্রদান করেছেন। ‘আয়নাঘর’ নামক একটি ভূয়া ও বানোয়াট তথ্যে ভরপুর রাষ্ট্রবিরোধী ভিডিওতে মিথ্যাচার করে তিনি ভাইরাল হওয়ার অপচেষ্টা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একজন বিতর্কিত, দেশদ্রোহী এবং সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর মিথ্যাচার সচেতন জনগণ কি কখনো বিশ্বাস করে? এদেরকে বর্জন এবং প্রতিরোধ করা আমার আপনার সবার নৈতিক দায়িত্ব। সূত্র : আমার রাজশাহী