মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৪২ am
ডেস্ক রির্পোট : রাজশাহীর তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলছেন দুর্ঘটনার পর আটক করা মোটরসাইকেলটি তার মালিককে বুধবার সকালে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি জিম্মানামা তৈরি করা হয়েছে। জিম্মাদারও বলছেন পুলিশ গাড়ি বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দেখতে চাইলে মোটরসাইকেলটির মালিক আর গাড়ি দেখাতে পারছেন না। তার বাড়িতে এ প্রতিবেদক গাড়ির ছবি তুলতে গেলে তিনি গাড়ি রাখার স্থান দেখান কিন্তু মটরসাইকেলের হদিস পাওয়া যায়নি।
মোটরসাইকেলটির মালিকের নাম বেলাল হোসেন (৩৯)। তার বাড়ি তানোর পৌর এলাকার বুরুজ মহল্লায়। গত ৩ মার্চ সন্ধ্যায় এক দুর্ঘটনার পর মোটরসাইকেলটি তানোর থানার এসআই মানিক জব্দ করে থানায় নিয়ে আসেন। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর রাজশাহী-হ-১১-৬১২২। এঘটনার পর থেকে আহত ব্যক্তির সঙ্গে মোটরসাইকেল মালিক মীমাংসার চেষ্টা করছিলেন। মীমাংসা না হওয়ার কারণে তিনি মোটরসাইকেল নিতে থানায় যাননি।
তবে, মাঝে মধ্যেই থানায় গিয়ে মোটরসাইকেল দেখে আসেন। মীমাংসার পর গত ২৪ জুন মীমাংসাপত্র নিয়ে থানায় মোটরসাইকের নিতে গেলে ওসি কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, এসআই মানিক মোটরসাইকেলটি আটক করেছিলেন। তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। মোটরসাইকেলটি নিতে চাইলে মানিককে নিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া তিনি মটরসাইকেলের ব্যাপারে অবগত নন। তাকে ১৫ দিন পরে দেখা করতে বলেন।
বেলাল হোসেন জানান, ১৫ দিন পরে থানায় গেলে ওসি তাকে থানা থেকে অপমান করে বের করে দেন। নিরুপায় হয়ে গত সোমবার (২২ আগস্ট) পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। ওসি কামরুজ্জামান বলেন, তিনি ওই মোটরসাইকেলের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এসআই মানিক মোটরসাইকেলটি আটক করেছিলেন। তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। বিষয়টি অবগত হয়ে ওইদিন বিকেলেই রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন সেইদিনই গাড়িটি বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
বুধবার (২৪ আগস্ট) মোটরসাইকেলের বিষয়ে জানতে চাইলে তানোর থানার ওসি বলেন, এসআই মানিক মোটরসাইকেলটি আটক করে জব্দ তালিকা তৈরি করেনি। সে আসেওনি। অনেক খোঁজাখুজির পর তিনি মালখানায় মোটরসাইকেলটি পেয়েছেন। স্থানীয় একজন কাউন্সিলরসহ কয়েকজন জিম্মাদারের মাধ্যমে সকালে মোটরসাইকেলটি তার মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
যোগযোগ করা হলে এসআই মানিক বলেন, তিনি রীতিমতো ওসির অনুমতি নিয়ে জিডি মূলে মোটরসাইকেল আটক করেছিলেন। যেহেতু ঘটনাটি মীমাংসা হয়ে যাবে। তাই জব্দ তালিকায় তোলা হয়নি। ওসি তখন বলেছিলেন মীমাংসা হলে আরেকটি জিডি করে মোটরসাইকেল মালিককে দেওয়া যাবে। জিডিসহ মোটরসাইকেল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আগামী ২৮/২৯ তারিখের দিকে তিনি তানোর থানায় যাবেন।
এদিকে, মোটরসাইকেল মালিক বেলাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতেই ওসি তাকে থানায় ডাকেন। তিনি বুধবার (২৪ আগস্ট) সকালে থানায় যান। তার সঙ্গে আরও লোকজন ছিল। তিনি মোটরসাইকেল পাননি। কিন্তু ওসি স্যার তাকে ২৫ হাজার দিয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি স্বীকার আরও করেন যে, তিনি আসলে মোটরসাইকেল পাননি। তবে, কেনা দামের চেয়ে ৫ হাজার টাকা কম নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তার মীমাংসা হয়েছে। তিনি জিম্মানামায় মোটরসাইকেল বুঝিয়ে পেয়েছেন বলে সই করে দিয়েছেন। এখন তাকে আইনত বলতে হবে যে, তিনি মোটরসাইকেলটি বুঝে পেয়েছেন।
মালিকের পরিচয় ও গাড়ির নম্বর উল্লেখ করে জিম্মানামায় লেখা হয়েছে, ‘থানায় হেফাজতে থাকা মোটরসাইকেলখানা নি¤েœ বর্ণিত সাক্ষিদের মোকাবিলায় নিজ জিম্মায় গ্রহণ করিয়া এই মর্মে অঙ্গীকার করিতেছি যে, থানা বা আদালত তলব করা মাত্রই যথাসময়ে যথাস্থানে মটরসাইকেল হাজির করিয়া দিতে বাধ্য থাকিব। অন্যথায় আইনানুগ আমলে আসিব।’
এই জিম্মানামার প্রধান জিম্মাদার হয়েছেন তানোর পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোমেনা আহম্মেদ। জানতে চাইলে তিনিও বলেন, থানা ওসি মোটরসাইকেলের বদলে ২৫ হাজার টাকা মালিককে গাড়ির মূল্য হিসেবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। গাড়ি হস্তান্তরের সময় কোনো ছবি তোলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত কথা তিনি বলতে পারবেন না বলে এড়িয়ে যায়। সূত্র : এফএনএস