শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:০৮ am
ডেস্ক রির্পোট : সড়ক দুর্ঘটনা, খুন ও আত্মহত্যার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এসব ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশের প্রথম ঠিকানা হয় থানায়। কিন্তু অধিকাংশ থানায় নেই লাশঘর।
তাই ময়নাতদন্তের আগপর্যন্ত লাশগুলো পড়ে থাকে থানা চত্বরের কোনো এক কোনায়। লাশ বৃষ্টিতে ভেজে, রোদে পোড়ে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে একটি উদ্যোগে পাবনার থানায় থানায় তৈরি হচ্ছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত লাশ ঘর।
গত বছরের মার্চ মাসে একটি ঘটনা ঘটে পাবনার সাঁথিয়া থানায়। গভীর রাতে চাটাইতে মোড়ানো দুটি লাশ আসে থানায়। চাটাই থেকে পা বেড়িয়ে ছিল দুজনেরই। ময়নাতদন্তের জন্য সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা। তাই থানা চত্বরেই লাশ দুটি রাখা ছিল। কয়েল জ্বালিয়ে লাশ দুটি পাহারা দিচ্ছিলেন লাশ টানার ভ্যানের চালক। পাশে ঘুরছিল একটি কুকুর। বিষয়টি নজরে আসে থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলামের। এরপর তিনি উদ্যোগ নেন লাশঘর তৈরির।
স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ ও এলাকার বিত্তশালীদের সহযোগিতায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করেন একটি লাশ ঘর। সহযোগিতার হাত বাড়ায় পাবনার রোগনির্ণয় ও পরামর্শকেন্দ্র কিমিয়া বিশেষজ্ঞ সেন্টার। লাশ ঘরটিতে লাগিয়ে দেয় একটি শীতাতপযন্ত্র (এসি)। একটি উদ্যোগেই থানাটিতে তৈরি হয় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত লাশঘর।
ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ‘মৃত্যু যেভাবেই হোক, প্রতিটি মৃতদেহের সম্মান আছে। সেই মৃতদেহ অবহেলায় পড়ে থাকাটা কষ্টের। বহুদিন ধরে এমন অবহেলা দেখেছি। যা খুব কষ্ট দিত। তাই লাশঘরটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সবার সহযোগিতায় উদ্যোগটি সার্থক হয়েছে। দেশের প্রতিটি থানায় একটি করে লাশঘর থাকবে এ প্রত্যাশা করছি।’
সিদ্দিকুল ইসলামের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান। তিনি উদ্যোগ নেন থানায় থানায় লাশ ঘর তৈরির। একইভাবে দ্বিতীয় এসি লাশঘরটি তৈরি হয় পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানায়। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার রাতে তৃতীয় এসি লাশঘরটি উদ্বোধন করা হয়েছে পাবনার চাটমোহর থানায়।
উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মহিবুল ইসলাম খান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চাটমোহর পৌরসভার মেয়র সাখাওয়াত হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) সজীব শাহরীন, কিমিয়া বিশেষজ্ঞ সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম জামান, চাটমোহর থানার ওসি মো. জালাল উদ্দিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মহিবুল ইসলাম খান বলেন, মানুষ পুলিশের কাছে খুব বেশি কিছু চায় না। তবে পুলিশের ওপর ভরসা করে। একটু সম্মান ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। তাই পুলিশ সদস্যদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও তাঁদের কথা শুনতে হবে।
চাটমোহর পৌরসভার মেয়র সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি বহুবার থানা চত্বরে অবহেলায় লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। ময়নাতদন্তে দেরি হওয়ায় অনেক লাশে পচন ধরেছে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই লাশঘর সেই অবস্থা দূর করল। জেলা পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’
লাশঘর বিষয়ে মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রতিটি মৃতদেহরই যথাযথ মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে। এই অনুভব থেকেই আমরা প্রতিটি থানায় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত লাশঘর তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। খুব শিগগিরই জেলার সব থানাতেই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত লাশঘর হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
প্রতিটি থানায় লাশঘর তৈরি একটি মহতী উদ্যোগ বলে জানান কিমিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম জামান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ভালো উদ্যোগের সঙ্গে আমরা আছি। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী, আমরা উদ্যোগটিকে সফল করতে সহযোগিতা করে যাব।’ সূত্র : পদ্মাটাইমস