মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৪২ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
রাজশাহীতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভা চাঁপাইয়ের কৃষি শ্রমিক তানোরে ধান কাটতে এসে বাড়ি ফিরলেন লাশ হয়ে চট্টগ্রামে আদালত এলাকায় বিক্ষুব্ধদের হামলায় আইনজীবী নিহত পেঁয়াজ-আলু রপ্তানি বন্ধ করল ভারত সাত মণ ধানে এক বস্তা ব্র্যাকের আলুবীজ, তাও অপেক্ষায় জুটছে কপালে তানোরে ব্র্যাকের আলুবীজ কালোবাজারে বিক্রি? জব্দে ইঁদুর বিড়াল খেলা আরএমপি পুলিশের অভিযানে আ.লীগের নেতাসহ ১২ জন গ্রেপ্তার দুর্গাপুরে থানা পুলিশের অভিযানে ১০ জন গ্রেফতার দীর্ঘ প্রতিক্ষায় বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে চলল পরীক্ষামূলক ট্রেন জামিনে বেরিয়ে আবারও গ্রেপ্তার রাজশাহী-৬ আসনে সাবেক এমপি রাহেনুল তানোর-গোদাগাড়ীতে শরিফ উদ্দিনের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি বাঘায় দিনমুজুরকে গলা কেটে হত্যা, ভায়রা জেলহাজতে তানোরে সিএনজি বন্ধ করে চালকদের মানববন্ধন, দুর্ভোগে যাত্রীরা পবায় গাঁজাসহ এক দম্পত্তি গ্রেপ্তার রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ কর্মীসহ ১৪ জন গ্রেপ্তার নাচোলের কৃতিসন্তান সানাউল্লাহ নতুন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ গ্রহণে এলাকাবাসীর অভিনন্দন রাজধানীতে প্রেসক্লাবে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক, যান চলাচল বন্ধ একতরফা নির্বাচন গায়ের জোরে করতে চাই না কেউ : নতুন সিইসি গাজীপুরে দুর্ঘটনায় নিহর শিক্ষার্থী সাকিবের লাশ রাজশাহীতে দাফন কম্পিউটার কী বোর্ডের মাধ্যমে রাজশাহীতে পাহাড়িয়াদের মাতৃভাষার লিখন পঠন কার্যক্রম উদ্বোধন
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে লাশ পড়েছিল প্রতিবাদ করল না কেউ

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে লাশ পড়েছিল প্রতিবাদ করল না কেউ

ডেস্ক রির্পোট : ১৫ আগস্টের পর কেউ কেন প্রতিবাদ করতে পারলেন না-সেই প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জাতির পিতা তো অনেককে ফোনও করেছিলেন তখন কোথায় ছিলেন তারা? ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে লাশগুলো তো পড়ে ছিল। সাহস করে এগিয়ে আসার একটি মানুষও ছিল না! প্রতিবাদ করার একটি মানুষও ছিল না! কেন তারা করতে পারেননি? আওয়ামী লীগ এত বড় সংগঠন। এত লোক। কেউ তো একটা কথা বলার সাহসও পাননি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবসের স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ এ সভার আয়োজন করে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রায় তিন বছর পর শেখ হাসিনা সশরীরে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, কত স্লোগান! বঙ্গবন্ধু তুমি আছো যেখানে, আমরা আছি সেখানে, অমুক-তমুক অনেক স্লোগান ছিল। কোথায় ছিল সেই মানুষগুলো? বেঁচে থাকতে সবাই থাকে, মরে গেলে যে কেউ থাকে না-এটাই তার জীবন্ত প্রমাণ। তাই আমিও কিছু আশা করি না। সবাইকে হারিয়ে বেঁচে আছি। এ বেঁচে থাকা যে কত যন্ত্রণার, যারা এভাবে বেঁচে আছেন তারাই শুধু জানেন।

বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে পারে না, যাবে না : শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতা, স্বাধীন মানচিত্র, পতাকা দিয়ে গেছেন। অথচ একখণ্ড রিলিফের কাপড় দিয়ে তাকে দাফন করা হয়। এ দেশের মানুষকে আমার বাবা-মা শুধু দিয়েই গেছেন, কিছুই নিয়ে যাননি। তিনি বলেন, বাবা আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। তাই সব যন্ত্রণা সহ্য করে নীলকণ্ঠী হয়ে অপেক্ষায় ছিলাম কখন ক্ষমতায় গিয়ে বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করব। মানুষের মুখে হাসি ফোটাব। এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত প্রতিশোধ নিতে পারব। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি। এ অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে পারে না, যাবে না।

যেসব দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাদের প্রতি পালটা প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কোথায় ছিল মানবাধিকার? বিচার চাওয়ার অধিকারটুকু পর্যন্ত ছিল না। বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার ঘটনায় একটা মামলা পর্যন্ত করতে পারিনি। আমরা কী বাংলাদেশের নাগরিক না! আমাদের মানবাধিকার কি লঙ্ঘন হয়নি। তখন তারা কোথায় ছিলেন? বরং যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়ে লালন-পালন করছে, আজ তাদের কাছ থেকেই মানবাধিকারের সবক শুনতে হয়। এটাই হলো আমাদের দুর্ভাগ্য।

মানুষের কষ্ট হচ্ছে এটা আমরা বুঝি : করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অস্থিরতায় দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে- এটা আমরা বুঝি। এখন বিশ্বব্যাপী মন্দাভাব ও অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের সবারই কিছু করণীয় আছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার কোনো মানুষ কষ্ট পাক তা আমরা চাই না। তাই দেশের যারা বিত্তবান রয়েছেন, সবার প্রতি আহ্বান জানাই আপনারা নিজ এলাকায় অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান, সহযোগিতা করুন। সরকার থেকে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর দলের নেতাকর্মীদেরও নির্দেশ দিয়েছি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে।

বাধ্য হয়ে তেলের মূল্য বাড়াতে হয়েছে : রাশিয়ার ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর উদ্ভূত পরিস্থিতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বে জ্বালানিসহ প্রতিটি জিনিসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। সারা বিশ্বেই একটা অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় উন্নত দেশ আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও খাদ্য সরবরাহে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়েছে। এসব কারণে আমাদেরও বাধ্য হয়ে তেলের মূল্য বাড়াতে হয়েছে। কারণ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে জ্বালানি মূল্যের একটা সামঞ্জস্য রাখতে হয়েছে। আমরা আর কত ভর্তুকি দেব?

৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজিদরে চাল দেওয়া হবে : জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজিদরে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা ইতোমধ্যে নিয়েছি। আর এক কোটি পরিবার কার্ডের মাধ্যমে চাল-চিনি-ডালসহ অন্যসব পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পারবে। আর দেশের মানুষের প্রতি আমার পুনর্বার অনুরোধ-বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হোন। আর এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, আমাদের নিজেদের খাদ্যের জোগান আমরা নিজেরাই করব।

ইনডেমনিটি দিয়ে বিচার বন্ধ করা হয় : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ইনডেমনিটি দিয়ে বিচার বন্ধ করে খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়। জিয়া নিজে উদ্যোগী হয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোকে দিয়ে লিবিয়ায় খুনিদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলে জিয়া কেন খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পুরস্কৃত করবেন?

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কথিত সুশীল বলে পরিচিত ব্যারিস্টার মইনুল খুনি পাশা ও হুদাকে নিয়ে প্রগশ নামের রাজনৈতিক দল করেছিলেন। আর এরশাদ ক্ষমতায় এসে খুনি ফারুককে ফ্রিডম পার্টি করার সুযোগ দেন ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করেন। আর খালেদা জিয়া আরেক ধাপ ওপরে। ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনে তিনি খুনি রশিদ-ফারুক-হুদাকে নির্বাচন করার সুযোগ দেন। খুনি রশিদকে বিনাভোটে সংসদে এনে বিরোধী দলের আসনে পর্যন্ত বসান। তারা কী করে বলবেন, তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের কাজ শুরু করি। কিন্তু তখনো উচ্চ আদালতের অনেক বিচারক হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে বিব্রত হয়েছেন। কিন্তু কৃতজ্ঞতা জানাই ওই সময়ের প্রধান বিচারপতি তোফাজ্জল হোসেনের কাছে। তার নেতৃত্বে উচ্চ আদালতের রায়ের পরই আমরা তা কার্যকর করতে পেরেছি।

পদ্মা সেতু নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, খুনিরা ভেবেছিল দুর্গম টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে কেউ যাবেন না। কিন্তু এখন খুনি ও তাদের দোসররা দেখুক, প্রতিদিন বঙ্গবন্ধুর মাজারে কত মানুষের ঢল নামে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়েও আমাদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলাম, কিন্তু তারা প্রমাণ করতে পারেননি। আমার সবচেয়ে বড় শক্তিই হলো দেশের জনগণের শক্তি। আর এ শক্তি থেকেই ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব এবং সেটা করেছি। জাতিকে কথা দিয়েছিলাম শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেব, তাও আমরা দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।

সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শেখ হাসিনা সশরীরে আলোচনা সভায় অংশ নেওয়ায় দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক অন্যরকম জাগরণ ও উদ্দীপনা দেখা যায়। সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে হাজার হাজার নেতাকর্মী হাত নেড়ে, গগনবিদারী স্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।

সভায় আমির হোসেন আমু বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের বিরুদ্ধে ছিল না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়া জড়িত ছিলেন বলেই খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। আজও পাকিস্তানের দাসত্বে আমরা থাকতাম।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ আগস্টে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের পেছনে অনেক রহস্যময় পুরুষ রয়েছেন। নেপথ্যের নায়কদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। আমরা মুখে নয়, বাস্তবে দ্রুত কমিশন দেখতে চাই। তিনি আরও বলেন, লন্ডন থেকে স্লোগান দেয় আর স্লোগানের প্রতিধ্বনি হয় পল্টনে। কী স্লোগান- ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। টেক ব্যাক করে কোথায় যাবেন? লুটপাটের হাওয়া ভবনের বাংলাদেশ। পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ বিসর্জনের বাংলাদেশ। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.