শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:১৯ am
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেটে প্রাণ না হারাতেন কিংবা অন্য কোনো কারণে তার মৃত্যু না হতো, তবে দুই বছর আগেই তিনি শতায়ু হতেন। আবার গত বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার অর্ধশতবার্ষিকীতে পদার্পণ করে। এক অপূর্ব সেতুবন্ধ বঙ্গবন্ধু আর তার লালিত স্বপ্নের বাংলাদেশের মধ্যে। যদি এ মহানায়ক তার অতিপ্রিয় বাংলার মাটিতে শতবর্ষ বেঁচে থাকতেন, তাহলে এ দিনটি জাতি কীভাবে পালন করত? এ এক ভাবনার বিষয়। কিন্তু না, খুনিরা এতসব চিন্তাভাবনার কোনো সুযোগ দেয়নি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করার অপচেষ্টা চালায়। অশ্রুঝরা আগস্টের ১৪তম দিন আজ। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট ছিল বৃহস্পতিবার।
বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এ সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’
প্রখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমার প্রথম চিন্তা আমার দেশের জন্য। আমার যা কিছু দুঃখবোধ, সে তো আমার দেশের জন্যই। আপনি তো দেখেছেন, আমাকে তারা কত গভীরভাবে ভালোবাসে।’ এ অদম্য ভালোবাসাই বঙ্গবন্ধুকে মহান আত্মত্যাগে আজীবন উদ্বুদ্ধ করেছিল। সমগ্র বাঙালি তথা সারা বিশ্ববাসী সম্পর্কে তার এমন উপলব্ধিই বলে দেয় তার মহানুভবতা এবং ইতিহাস বলে, এ কারণেই শত্রুরা তার পিছু নিয়েছিল। তারপরও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সব মানুষকেই ভেবেছেন আপনজন। আর তাই এ দেশের কোটি কোটি মানুষ তাকে পিতার মর্যাদা দিয়েছে।
ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। সত্য কখনো আড়াল করা যায় না। সত্য বারবার উদ্ভাসিত হয়, প্রস্ফুটিত হয়, উজ্জ্বল ধ্রুবতারার মতো আগামীর পথ প্রদর্শন করে। যারা সেদিন ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ইতিহাস থেকে, বাঙালির হৃদয় থেকে তার নাম মুছে ফেলবে, তারা ব্যর্থ হয়েছে। কবি শামসুর রাহমানের ভাষায়, ‘ওরা তাকে হত্যা করে ভেবেছিল তিনি সহজে হবেন লুপ্ত ঊর্ণাজাল আর ধোঁয়াশায়, মাটি তাকে দেবে চাপা বিস্মৃতির জন্মান্ধ পাতালে; কিন্তু তিনি আজ সগৌরবে এসেছেন ফিরে দেশপ্রেমিকের দৃপ্ত উচ্চারণে, সাধারণ মানুষের প্রখর চৈতন্যে, শিল্পীর তুলিতে, গায়কের গানে, কবির ছন্দে ও আন্দোলনে, রৌদ্র ঝলসিত পথে, মহা মিছিলের পুরোভাগে।’
সব্যসাচী কবি সৈয়দ শামসুল হক বলেছেন, জাতির পিতার আদর্শই আমাদের শক্তি, তার স্বপ্নই আমাদের প্রেরণা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের মাধ্যমেই আমাদের দায়িত্ব হবে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। তাহলেই তার আত্মা শান্তি পাবে। এটিই হবে ইতিহাসের ক্ষণজন্মা এ মহান নেতার প্রতি আমাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নাম বাঙালির ইতিহাসে ও প্রকৃত বাঙালি প্রতিটি মানুষের অন্তরে সোনার অক্ষরে লিখিত হয়ে আছে। বাংলাদেশের হৃদয়-গভীর শ্যামল একটি গ্রাম টুঙ্গিপাড়া থেকে উত্থিত হন তিনি, তারপর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের ধারাবাহিকতায় নিজেকে স্থাপিত করেন ইতিহাসের পটভূমিতে বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নের অনন্য মুক্তিদাতারূপে। স্থির পদবিক্ষেপে তিনি আমাদের প্রাণিত করেন মুক্তিযুদ্ধে। তারই রণমন্ত্র জয় বাংলা কণ্ঠে ও বাহুতে ধারণ করে বিজয় অর্জিত হয় একাত্তরে। সূত্র : যুগান্তর