মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৩৫ am
সাইদ হোসেন সাজু : রাজশাহীর তানোরে কৃষকরা সারের জন্য ঘুরছেন এক ডিলার থেকে অন্য ডিলারের দোকানে। তাও সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে, বেশী দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। সেই সাথে সময়মত ও চাহিদামত সার না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। চলছে রোপা-আমনের ভরা মৌসুম। এমনিতেই অনাবৃষ্টির কারণে রাজশাহীর তানোরে এখনো কৃষকেরা আমন রোপণ শেষ করতে পারেননি।
পতিত রয়েছে হাজার বিঘারও বেশী জমি। সেচ দিয়ে এখন পর্যন্ত যেটুকু আমন চাষ হয়েছে সেটুকু আমন জমিতে এমওপি (পটাশ) ও টিএসপি সার সংকটে পড়েছে কৃষক।
কৃষকরা বলছেন, সার ডিলাররা পটাশ ও টিএসপি সার নিয়ে কৃষকের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছেন। নিজ ঘরে সার থাকলেও এক ডিলারের কাছে গেলে এমওপি সার না দিয়ে অন্য ডিলারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
কোনো কোনো ডিলার পটাশ সংকট দেখিয়ে ৭৫০ টাকায় ৫০ কেজি ওজনের বস্তা এমওপি (পটাশ) সার ১ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে একাধিক কৃষকের অভিযোগ।
এভাবে বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়ে কৃষকরা স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের মৌখিক ও মোবাইলে অভিযোগ দিলেও ডিলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কৃষি অফিস।
তানোর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, পুরো উপজেলায় ৯টি বিসিআইসি ও ২৩টি বিএডিসি সার ডিলার রয়েছে। চলতি আগস্ট মাসে মোট ৩২ ডিলারের মধ্যে ৮০ বস্তা করে এমওপি (পটাশ) বরাদ্দ দেন বিএডিসি।
কৃষকরা জানান, বিসিআইসি ডিলারের কাছে গেলে এক বস্তার ডিএপি কিনলে ১০ কেজি পটাশ দিচ্ছেন। আর বিঘাপ্রতি পটাশ সার ৩ কেজি করে পড়ছে, যা দিয়ে আবাদ করা মোটেও সম্ভব নয়।
কাজেই বাধ্য হয়ে বাজারে ছোট বিএডিসি ডিলাদের কাছে গিয়ে বস্তাপ্রতি ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। কৃষকদের প্রশ্ন-সব সার সরকার ভর্তুকি দিয়ে ডিলাদের দিচ্ছেন তাহলে কেন অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নিতে হচ্ছে?
সরকারে কৃষি বিভাগ কিছুই দেখছে না কেন? এদিকে বিসিআইসি ডিলারদের দাবি, তারা উপজেলায় ৯ জন ডিলার জুলাই মাসে ৮০ বস্তা করে বরাদ্দ পান (এমওপি) পটাশ সার।
কৃষকদের মধ্যে সরকারি মূল্যে সমান করে বণ্টন করে দিচ্ছেন। অথচ একই বরাদ্দ পেয়েছেন বিএডিসির ২৩ জন ডিলার। তারা সরকারি বরাদ্দ পেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
তাদের খাতায় যেসব কৃষকের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো সবই ভুয়া। তদন্ত করে দেখার দাবি কৃষকদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিআইসি এক ডিলার জানান, মুন্ডুমালা বাজারে রকমারী টেডার্স ও জামান টেডার্সের মালিক একই ব্যক্তি। তিনি দুই নামে চলতি মাসে ১৬০ বস্তা এমওপি সার উত্তোলন করেছেন।
অথচ একজনের কাছেও সরকারি দামে সার বিক্রি করেননি। তিনি একপ্রকার সংকট দেখিয়ে ৭৫০ টাকার সার ১ হাজার ২৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন। তার দোকানের মেমো ব্যবহার না করে সাদা কাগজে দর লিখে দিচ্ছেন কৃষকদের।
এ ব্যাপারে তানোর উপজেলার বিসিআইসি সার ডিলার সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বাবু জানান, চাহিদার চেয়ে জুলাই মাসে এমওপি ও টিএসপি সারের বরাদ্দ কম ছিল।
৩২ ডিলারকে ৮০ বস্তা করে দেওয়ার কথা থাকলেও কয়েকজন ডিলার গোডাউনে সার না থাকায় তুলতে পারেননি। এসব বরাদ্দ বিএডিসির। তবে, বিসিআইসি বরাদ্দ দিলে সংকট কেটে যাবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ হয়নি।
তবে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (মুন্ডুমালা পৌরসভা দায়িত্বপ্রাপ্ত) রাকিবুল হাসান বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পটাশ ও টিএসপি সংকট দেখিয়ে বেশি দাম নিচ্ছে বলে কৃষকদের অভিযোগ রয়েছে।
আমরা এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ব্যবস্থা নিয়েছি। আজকের তানোর