মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:১৯ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে নতুন পাটের বাজার চাঙ্গা। শুরুতে পাটের কাক্সিক্ষত দামে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। বর্তমানে মণপ্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে ২৮শো থেকে ৩২শো টাকায়। গত বছর ছিল ২২শো থেকে ৩৬শো টাকা। শুরুতে দর বেশি হওয়ায় পাট মৌসুমের শেষের দিকে দাম আরো বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্ষা-খরায় চাষিরা পাট জাগ দেয়ার ক্ষেত্রে বেকায়দায় পড়েছিল। খাল-বিল-পুকুরে পানি ছিল না। ফলে পাট জাগ দেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছিল। মধ্য শ্রাবণের বৃষ্টিতে সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। পাট জাগ দেয়ার সুবিধা বৃদ্ধি এবং বাজারে পাটের মূল্য পাওয়ায় চাষিরা এখন পাট চাষে উৎসাহিত।
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সকালে নওহাটা বাজারের পাটের আড়ৎগুলো ঘুরে দেখা গেছে- নতুন পাট নিয়ে চাষিরা বাজারে এসেছে। ক্রেতা- বিক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষি চলছে। এখন হাট-বাজারে পাটের আমদানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। সেই সাথে পাটকল গুলোতে বেড়েছে পাটের চাহিদা। এ কারণে প্রতি হাটেই পাটের দাম পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাটের ভালো দাম পেয়ে খুশি পাট চাষিরা। এ ব্যবসার সাথে জড়িতরাও আয় করছেন প্রচুর। সব মিলিয়ে জেলার পাটের ব্যবসা এ মুহূর্তে জমজমাট।
নওহাটা মহানন্দাখালী এলাকার কৃষক সাজু দশ মণ পাট বাজারে বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, পাটের ভালো দাম পেয়ে আমি খুশি। এ বছর শুরতেই পাটের বাজার ভালো পেয়ে আমরা লাভবান। কারণ এ বছর ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে দশ মণ পাট পেয়েছি। পানি সংকটের কারণে জমি থেকে পাট কেটে অন্যত্র জাগ দিতে হয়েছে। এতে খরচ বেড়েছে। অন্যান্য বছর প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষে ১৫ হাজার টাকা খরচ হত। এ বছর ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তারপরও খরচ বাদ দিয়ে দশ মণ পাটে ১৪ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
পবা উপজেলার পুঠিয়াপাড়া গ্রামের পাট চাষি মামুন হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি কম হয়েছে। তাই খাল বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। উচু জমিতে বেশি পাট হয়। এ পাট কেটে নিচু এলাকার খাল-বিলে জাগ দিতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়েছে। কিন্তু পাটের ভালো দাম পেয়ে এ কষ্ট লাঘব হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তোষা পাটের ৮০টি পাট কাঠির একটি বান্ডিল ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে পাট জাগ, পরিবহন, বাছাই ও শুকানোসহ সব ধরনের খরচ উঠে আসছে। সব মিলিয়ে পাটে এখন আমাদের সু-দিন ফিরেছে।
নওহাটা হাসেন জুট মিলের এক্সপোর্ট ম্যানেজার পার্থ সরকার বলেন, কোরবানির ইদের আগেই হাট-বাজারে নতুন পাট আসতে শুরু করে। তখন প্রতিমণ পাট ২৭শো থেকে ২৮শো টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছিল। ইদের পর পাটকলগুলো পাট কিনতে শুরু করে। তারপর থেকেই পাটের দাম বাড়তে শুরু করে। গত হাটে প্রতিমণ পাট ২৮শো টাকা থেকে ৩২শো টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পাটের বাজারে এখন তেজিভাব বিরাজ করছে। জুটমিল গুলো এভাবে পাট কেনা অব্যাহত রাখলে পাটের বাজার আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
নওহাটা জুট মিলের পাট সরবরাহকারী ইসমাইল হোসেন বলেন, পবা অঞ্চলে বেশ কিছু জুট মিল গড়ে উঠেছে। এরা প্রতিযোগিতা করে পাট কিনতে মাঠে নেমেছে। এ কারণে পাটের দাম বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরে পাটের বাজার ভালো রয়েছে। আমরা লাভবান হচ্ছি। কৃষকও পয়সা পাচ্ছে।
রাজশাহী পাট অধিদফতরের মুখ্য পরিদর্শক মো. নাদিম আক্তার এসেছিলেন নওহাটা পাটের বাজার পরিদর্শনে। তিনি সোনার দেশকে জানান, এবছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে তোষা পাট আবাদ হয়েছে। জেলায় পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার হেক্টর। গত বছর ছিল ১৫ হাজার হেক্টর এবং পাটের আবাদ হয়েছিল ১৯ হাজার ৩৮ হেক্টর। ইতোমধ্যে জেলার ২৫ ভাগ পাট বাজারে এসেছে। বাজারে পাটের দাম ভালো রয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে কৃষকরে সমস্যা হলেও মধ্য শ্রাবণের বৃষ্টিতে এই সমস্যার সমাধান হয়েছে।
বাজারে পাটের দামের বিষয়ে তিনি জানান, পাট মৌসুমের শুরুতে নওহাটা বাজারে প্রতিমণ পাট ২৮শো থেকে ৩২শো টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বানেশ্বর হাটে প্রতি মণ পাট ২৭শো থেকে ৩২শো টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত বছর প্রতি মণ পাট মৌসুমের শুরুতে ২২শো টাকা দরে বিক্রি হয়েছে এবং মৌসুমের শেষের দিকে ৩৬শো টাকায় বিক্রি হয়েছে। তার আগের বছর পাট মৌসুমের শেষের দিকে ৬ হাজার টাকা দরে পাট বিক্রি হতে দেখা গেছে।