মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৪৭ am
আসাদুজ্জামান মিঠু, বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিবেদক :
চলছে রোপা-আমনের ভরা মৌসুম। এমনিতেই এবার অনাবৃষ্টির কারণে রাজশাহীর তানোরে এখনো কৃষকেরা আমন রোপন শেষ করতে পারেনি। পতিত পড়ে আছে হাজার হাজার বিঘা জমি। সেচ দিয়ে এখন পর্যন্ত যেটুকু আমন চাষ হয়েছে সেটুকু আমন জমিতে এমওপি (পটাশ) ও টিএসপি সার সংকটে পড়েছে কৃষক।
কৃষকেরা জানান, সার ডিলাররা পটাশ ও টিএসপি সার নিয়ে কৃষকের সাথে লুকোচুরি খেলছে। নিজ ঘরে সার থাকলেও এক ডিলারে কাছে গেলে এমওপি সার না দিয়ে অন্য ডিলারে কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। কোন কোন ডিলার পটাশ সংকট দেখিয়ে ৭৫০ টাকায় ৫০ কেজি ওজনের বস্তা এমওপি (পটাশ) সার ১ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি করছে বলে একাধিক কৃষকের অভিযোগ। এভাবে বেশি দামে সার বিক্রি বিষয়ে কৃষকেরা স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের মৌখিক ও মোবাইলে অভিযোগ দিয়েও ডিলারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কৃষি অফিস।
তানোর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, পুরো উপজেলায় ৯টি বিসিআইসি ও ২৩টি বিএডিসি সার ডিলার রয়েছে। চলতি জুলাই মাসে মোট ৩২টি ডিলাদের মধ্যে ৮০ বস্তা করে এমওপি (পটাশ) বরাদ্দ দেন বিএডিসি।
কৃষকেরা জানান, বিসিআইসি ডিলারের কাছে গেলে এক বস্তার ডিএপি কেনলে ১০ কেজি পটাশ দিচ্ছে। আর বিঘা প্রতি পটাশ সার ৩ কেজি করে পড়ছে। যা দিয়ে আবাদ করা মোটেও সম্ভব নয়। কাজেই বাধ্য হয়ে বাজারে ছোট বিএডিসি ডিলাদের কাছে গিয়ে বস্তা প্রতি ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। কৃষকদের প্রশ্ন সব সার সরকার ভুর্তিকি দিয়ে ডিলাদের দিচ্ছেন তাহলে কেন অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নিতে হচ্ছে। সরকারে কৃষি বিভাগ কিছুই দেখছে না কেন?
এদিকে বিসিআইসি ডিলারদের দাবি, তারা উপজেলায় ৯ জন ডিলার জুলাই মাসের ৮০ বস্তা করে বরাদ্দ পায় (এমওপি) পটাশ সার। কৃষকদের মধ্যে সরকারি মূল্যে সমান করে বন্টন করে দিচ্ছেন। অথচ একই বরাদ্দ পেয়েছেন বিএডিসির ২৩ জন ডিলার। তারা সরকারি বরাদ্দ পেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। তাদের খাতায় যে সব কৃষকের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো সবই ভুয়া। তদন্ত করে দেখার দাবি কৃষকদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিআইসি এক ডিলার জানান, মুন্ডুমালা বাজারে রকমারী টেডার্স ও জামান টেডার্সের মালিক একই ব্যক্তি। তিনি দুই নামে চলতি মাসে ১৬০ বস্তা এমওপি সার উত্তোলন করেছেন। অথচ এক জনের কাছেও সরকারি দামে সার বিক্রি করেনি। তিনি এক প্রকার সংকট দেখিয়ে ৭৫০ টাকার সার ১ হাজার ২৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন। তার দোকানের মেমু ব্যবহার না করে সাদা কাগজে দর লিখে দিচ্ছে কৃষকদেরকে।
উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান, এবার তিন বিঘা আমন চাষাবাদ করেছেন তিনি। মতিউর রহমান জানান, এক সপ্তাহ আগে তিনি মুন্ডুমালা বাজারে বিসিআইসি ডিলার মেসার্স নাইচ টেডার্সে সার কিনতে গিয়ে ছিলেন। এক বস্তা ডিএপি সাথে ১০ কেজি পটাশ দিয়ে অন্য ডিলারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় তাকে।
তাই বাধ্য হয়ে তিনি মুন্ডুমালা বাজারের বিএডিসি ডিলার জামান টেডার্সে যান। সেখানকার ডিলার বলেন, সরকারে বরাদ্দ সার শেষ। অন্য জায়গা হতে কিছু পটাশ ব্যবস্থা করা আছে, দাম পড়বে ১ হাজার ২৫০ টাকা। অবশেষে তিনি বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিয়েই এক বস্তা পটাশ কেনে জমিতে দিয়েছেন।
মুন্ডুমালা পৌর এলাকার শুধু মতিউর রহমান একাই নয়। চলতি আমন মৌসুমের শুরু থেকেই উপজেলার কৃষকেরা এমওপি ও টিএসপি সার সংকটে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে এসব সার কেনে জমিতে দিচ্ছেন। এক শ্রেণির অসাধু ডিলার বেশি মোনাফার জন্য কৃষকদের জিম্মি করে সার বিক্রি করছেন। তবে, দোকানের কোন প্রকার মেম্যু ছাড়াই সাদা কাগজে লিখে দিচ্ছেন।
এব্যাপারে তানোর উপজেলার বিসিআইসি সার ডিলার সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বাবু জানান, চাহিদার চেয়ে জুলাই মাসে এমওপি ও টিএসপি সারের বরাদ্দ কম ছিল। ৩২ ডিলারকে ৮০ বস্তা করে দেয়ার কথা থাকলেও কয়েকজন ডিলার গুডাউনে সার না থাকায় তুলতে পারেনি। এসব বরাদ্দ বিএডিসির। তবে, বিসিআইসি বরাদ্দ দিলে সংকট কেটে যাবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, বিএডিসির যেসব ডিলার পটাশের বরাদ্দ পেয়েছেন। তারা ইচ্ছা মত দামে বিক্রি করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাদের উপরে সরকারের কোন তদারকি নেই বলে দাবি করেন তিনি। এব্যাপারে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি।
তবে, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (মুন্ডুমালা পৌরসভা দায়িত্ব প্রাপ্ত) রাকিবুল হাসান বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পটাশ ও টিএসপি সংকট দেখিয়ে বেশি দাম নিচ্ছে বলে কৃষকদের অভিযোগ রয়েছে। আমরা এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার ব্যবস্থা নিয়েছি বলে জানান তিনি। আজকের তানোর