মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৩১ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
জ্যৈষ্ঠের বৃষ্টিতে ধান রোপণ করে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষকেরা। অনাবৃষ্টির কারণে এখন সেই ধান বাঁচাতে দিশেহারা কৃষক। বৃষ্টির দেখা নেই। আবার গভীর নলকূপে ধরনা দিয়েও ধানের জন্য সম্পূরক সেচের পানি পাচ্ছেন না। পানিসংকটে পড়ে প্ল্যাকার্ড হাতে মাঠে দাঁড়িয়ে পানির দাবি জানিয়েছেন কৃষকেরা। প্ল্যাকার্ডে বড় বড় হরফে লেখা, ‘আমরা কৃষক, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নই।’
আজ (১৮ জুলাই) সোমবার বেলা ১১টার দিকে তানোর উপজেলার মোহর গ্রামে এ দৃশ্য দেখা গেছে। স্থানীয় ‘মোহর স্বপ্ন আশার আলো’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে কৃষকেরা মাঠে দাঁড়িয়ে এই প্রতীকী কর্মসূচির মাধ্যমে পানির দাবি জানান।
সংগঠনের পরিচালক আলমগীর হোসেন (৩৯) বলেন, তাঁরা আলু চাষের জন্য আগাম আমন ধান রোপণ করে থাকেন। এবার জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে যখন একটু বৃষ্টি হয়েছিল, তখন তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলেন। ধান লাগানোর জমি চাষ দিয়ে রাখার পর বীজতলাও তৈরি করে নিয়েছিলেন। আশা ছিল ১৫-২০ দিন বয়সী চারা রোপণ করবেন। এদিকে আস্তে আস্তে বীজতলার চারা বড় হলেও বৃষ্টির আর দেখা নেই।
কোনো উপায় না পেয়ে আষাঢ় মাসের ১৮ তারিখ গভীর নলকূপে পানির সিরিয়াল দেওয়ার জন্য নলকূপের চালকের কাছে ধরনা দিয়ে কোনোরকমে জমি তৈরি করে ধান রোপণের কাজ শেষ করেছেন তিনি। এরপর থেকে জমিতে আর পানি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি।
আলমগীর আরও বলেন, আশপাশের সব গ্রামের কৃষকের একই অবস্থা হয়েছে। সারাদিন গভীর নলকূপ চালু থাকলেও চাহিদার তুলনায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় ‘মোহর স্বপ্ন আশার আলো’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল।
আলমগীর হোসেন নিজ গ্রামের যুবকদের নিয়ে এই সংগঠন পরিচালনা করেন। সংগঠনের মাধ্যমে গ্রামের যুবকদের নিয়ে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে থাকেন। তাঁদের মনে হয়েছে, পানিসংকটের জন্য কৃষকেরা কোনোভাবেই দায়ী নন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণেই বৃষ্টি হচ্ছে না। তাই তাঁরা পানির দাবি জানিয়ে মাঠে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নজরে আনতে চান।
কিষানি জমেলা বেগম (৪৫) বলেন, ‘আমি ধারদেনা কইরি এক বিগি ভুঁইয়ে (এক বিঘা জমিতে) পানি সেচ দিয়ে ধান লাগাইছিলাম। আজ পানির অভাবে ধানগাছ শুইকি গিছে। চিন্তায় পড়িচি, ধান না হলে পরিবারের খাবার জোগাড় করব কী কইরি। তাই এই মাঠে ছুইটি আইচি। কাগজ ধইরি দাঁড়াইচি। আষাঢ় গেল, শাওন মাস চলছে। বৃষ্টির দেখা নাই। শাওন মাসেই আমার ধান পুইড়ি যাচ্ছে।’
জানতে চাইলে মোহর গ্রামের গভীর নলকূপের চালক মো. মকলেছুর রহমান (৫২) বলেন, ‘এই মৌসুমে আমাদের গভীর নলকূপ চালাতে হয় না। তবে এবার উল্টো হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকেই নিয়মিত ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে সারা দিন-রাত পানি তুলেও সব জমিতে পানি দেওয়া যাচ্ছে না। পানিও আগের তুলনায় কম উঠছে।’ আজকের তানোর