শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:৪২ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
দুদকের তালিকায় ১০০ ব্যক্তির সম্পদের পাহাড় গড়েছেন যারা আ.লীগ ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ৭৫০ মামলা ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ
উৎসবের আড়ালে ছোট ছোট কষ্টের গল্প : আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

উৎসবের আড়ালে ছোট ছোট কষ্টের গল্প : আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

গ্রামের সেলুন। নাপিতের কাঁচি আর মুখ সমানে চলে। চুল কাটছেন না গল্পের ঝাঁপি খুলে বসেছেন—তা নিয়ে একটু ভাবতে হয়। নাপিতের নাম মরম। আগে-পরে আর কিছু নেই। বললেন, মহররম মাসে জন্ম, তাই মা এই নাম রেখেছেন। বোঝা গেল নামটা আসলে মহররম। গাঁয়ের লোক উচ্চারণের সুবিধার্থে ছোট করে নিয়েছে। মানুষের মুখে শুনতে শুনতে তিনি তাঁর নিজের মূল নামটাও ভুলে গেছেন।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পীরগাছা বাজারে নাপিত মরমের গল্পের বিষয় হলো ‘বিলের পানি’। অনেক দিন পর দেখা। ঈদের ছুটিতে বাড়ি এলেই শুধু দেখা হয়। তাই চুলে কাঁচি ধরার আগেই চা বললেন। অপেক্ষমাণ খদ্দেরেরাও বসে গল্পে যোগ দিয়েছেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ও বাউসা ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে একটি বিল নাটোরের লালপুরের ভেতর দিয়ে চলনবিলে গিয়ে পড়েছে। এই বিলের একাংশের নাম নওটিকার বিল। আরেকাংশের নাম ধন্দহ বিল। পুরো বিলেই ৮ থেকে ১০ বছর আগে ধান চাষ করা হতো। মাছ চাষের জন্য অপরিকল্পিতভাবে বিলে পুকুর খননের কারণে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ধান হওয়া তো দূরের কথা, বর্ষায় বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ার চিন্তায় পড়েছেন বিলের ধারের আট–দশটি গ্রামের মানুষ। একজন বললেন, ‘আমার তিন বিঘা ভুঁই সাত বছর ধইরি বিলের পানিত ডুইবি আচে। চাষের ভুঁই থাকতে আমরা পাইট দিয়া খাচ্ছি। আপনে একটা কিচু করেন।’

দুপুরে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিজ উদ্দিন এলেন। তাঁর স্কুলশিক্ষক ভায়রার অকালমৃত্যু হয়েছে। তাঁর জেসেস (স্ত্রীর বড় বোন) বাড়ি থেকে বের হতে চান না। কিছুক্ষণ পরপর কেঁদে ওঠেন। দেখাদেখি তাঁর মেয়েও এই সমস্যায় ভুগছে। নবম শ্রেণিতে পড়া মেয়েটি মায়ের মতোই কিছুক্ষণ পরপর কেঁদে ওঠে।

মরম আগুনে ঘি ঢালার মতো করে বললেন, ‘আরে মামা, হাত দিলে আর কারও ঠ্যাকানির ক্ষেমতা নাই।’

সাংবাদিকতা করার কারণে ঈদের ছুটিতে গ্রামে গেলে উৎসব ছাপিয়ে মানুষের সমস্যার কথাই শুধু শুনতে হয়। সবকিছুর সমাধান পত্রিকায় লিখলেই হয় না। তারপরও গ্রামের মানুষ বলতেই চায়। কথা শুনে মনে হয়, তাদের বলার জয়গাটিও যেন নেই।

এবার ঈদের দিনে প্রখর রোদ আর গরম ছিল। আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিল ঈদের দিন বৃষ্টি হবে। পূর্বাভাস ঠিক ছিল, তবে দুপুরে বড়জোর দুই–চার ফোঁটা বৃষ্টি পড়ল। কিন্তু বিকেলে একপশলা হলো। বৃষ্টির পর বাড়ি থেকে বের হতেই দেখা গেল পিচঢালা পাকা রাস্তা কাদায় একাকার। পিছলে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকি। বাঘা ও লালপুরের বেশ কিছু রাস্তার এই অবস্থা। রাস্তা ভেঙে কাঁচা রাস্তার চেয়েও ভয়ংকর হয়ে আছে। বাঘার নওটিকা ও লালপুরের মোল্লাপড়া গ্রামের মানুষকে এই দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। মরমের সেলুনের মতো রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষের একই গল্প। পুকুর খননের মাটি পরিবহনের সময় রাস্তায় পড়ে এই হাল। বৃষ্টি হলে রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে যায়। কার্পেটিং উঠে যায়।

ঈদের পরদিন সকালে তিনজন লোক এসে ঘুম ভাঙালেন। এই তিনজনের একজন বাঘা বুদ্ধি ও অটিস্টিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাজেদুল ইসলাম। বিদ্যালয়ে ১৮০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে পরিদর্শনের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরে অনলাইনে আবেদন করেছেন। আবেদন নম্বর ২৭১। দীর্ঘদিন হয়ে গেছে, পরিদর্শন হচ্ছে না। তাঁরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধাও পান না। সংসার চালাতে এখন বিদ্যুৎমিস্ত্রির কাজ করছেন। তিনি বলতে এসেছিলেন বিদ্যালয়টির জন্য কিছু করা যায় কি না। তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন বাঘা উপজেলা শিল্পকলা একডেমির সংগীতের প্রশিক্ষক শ্যামল কুমার। দুঃখ করে বললেন, তিনি একাডেমির প্রশিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি সব অনুষ্ঠান করে দিতে হয়, কিন্তু প্রশিক্ষকের ভাতা পান না। কতবার আবেদন করেছেন, কিছুতেই কিছু হয়নি। আগে গানের টিউশনি করে সংসার চালাতেন। করোনা শুরুর পর একটিও টিউশনি নেই। তিনি বিস্ময় কণ্ঠে বললেন, কোথাও আর কেউ যেন গান করতে চাচ্ছে না। কেন এমন হলো বুঝতে পারছেন না। অনেক অসচ্ছল শিল্পী ভাতা পাচ্ছেন। তিনি তা–ও পান না। বাধ্য হয়ে এই প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বিদ্যুৎমিস্ত্রির কাজ করে বেড়াচ্ছেন। তাঁর প্রশ্ন, কেন তিনি প্রশিক্ষকের ভাতা পাবেন না, কেনই বা অসচ্ছল শিল্পীর ভাতাও আসে না। তাঁর বিষয়টি একটু দেখতে হবে।

তাঁদের বিদায় করে বাড়ি থেকে বের হতেই গ্রামের মেয়ে সুরমার সঙ্গে দেখা। দ্বিতীয়বার তাঁর বিয়ে হয়েছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায়। স্বামী অচল। তবে রাস্তার মাটি কাটার সরকারি কাজ জুটেছে তাঁর। মাসে পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া যায়। ভালো আছে বলেই কেঁদে ফেললেন। তাঁর আগের পক্ষের ছেলেটা এখানে আছে, বিয়ে দিয়েছিলেন। বউ এখান থাকবে না। বাপের বাড়িতে রেখে তাকে ভাত দিতে হবে, না হলে তালাক দিতে হবে। কম বয়সে বিয়ে হয়েছিল, তাই বিয়ের কাবিন নেই। তবু তালাক দিতে হলে মেয়ের বাবা ৫০ হাজার টাকা চান। বিষয়টা আপানাকে দেখতে হবে।

দুপুরে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিজ উদ্দিন এলেন। তাঁর স্কুলশিক্ষক ভায়রার অকালমৃত্যু হয়েছে। তাঁর জেসেস (স্ত্রীর বড় বোন) বাড়ি থেকে বের হতে চান না। কিছুক্ষণ পরপর কেঁদে ওঠেন। দেখাদেখি তাঁর মেয়েও এই সমস্যায় ভুগছে। নবম শ্রেণিতে পড়া মেয়েটি মায়ের মতোই কিছুক্ষণ পরপর কেঁদে ওঠে। মেয়েটার পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে। উৎসবের আনন্দ ছাপিয়ে এসব গল্প নিয়েই এবারের ঈদের পর শহরে ফেরা।

সূত্র : প্রথম আলো, লেখক : আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ।

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.