শনিবর, ২১ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:২৬ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
তানোর প্রেসক্লাব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, প্রতিক বরাদ্দ ঢালাও মামলার কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে : আসিফ নজরুল মোহনপুরে আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত মসজিদের বিশেষ আদব ও শিষ্টাচার : হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী মোহনপুরে আ.লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সালাম গ্রেপ্তার, মিষ্টি বিতরণ দুদকের তালিকায় ১০০ ব্যক্তির সম্পদের পাহাড় গড়েছেন যারা আ.লীগ ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ৭৫০ মামলা ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল
ঢাকায় চামড়ার দাম এবারও তুলনামূলক কম

ঢাকায় চামড়ার দাম এবারও তুলনামূলক কম

ট্রাক থেকে কোরবানির চামড়া নামাচ্ছেন শ্রমিকেরা। আজ রোববার পুরান ঢাকার পোস্তায়

ট্রাক থেকে কোরবানির চামড়া নামাচ্ছেন শ্রমিকেরা। আজ রোববার পুরান ঢাকার পোস্তায়

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা নির্ধারণ করে। ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। এ ছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে ও ঢাকায় বকরি ও খাসির চামড়ার দাম একই থাকবে।

গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। এ ছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা ও বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তার মানে চলতি বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৭ টাকা এবং খাসির চামড়ায় ৩ টাকা বাড়তি দাম নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়।

পোস্তার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বড় আকারের গরুর চামড়া ৩৫-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। একেকটি গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরিসহ গড়ে ৩০০ টাকা খরচ হয়। গত বছরের তুলনায় এবার লবণের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় খরচ কিছুটা বেশি পড়ছে।

কোরবানির চামড়ায় লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াকরণের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। আজ রোববার পুরান ঢাকার পোস্তায়

কোরবানির চামড়ায় লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াকরণের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। আজ রোববার পুরান ঢাকার পোস্তায়

ধরা যাক, একটি মাঝারি আকারের গরুর চামড়ার আয়তন ২৫ বর্গফুট। তাহলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দর অনুযায়ী, লবণযুক্ত সেই চামড়ার দাম হয় ১ হাজার ২৩৭ টাকা। তার থেকে লবণ ও শ্রমিকের মজুরি গড়ে ৩০০ টাকা বাদ দিলে লবণবিহীন কাঁচা চামড়ার দাম হওয়ার কথা ৯৩৭ টাকা। তবে আজ পোস্তায় মাঝারি আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০০–৭৫০ টাকায়। এই আকারের বেশির ভাগ বিক্রি হয়েছে ৫০০–৬০০ টাকায়।

বেলা তিনটার দিকে আজিমপুর হয়ে হেঁটে হেঁটে পোস্তার দিকে যাওয়ার সময় দেখা গেল সড়কের ওপর চেয়ারে বসে চামড়া কিনছেন ব্যবসায়ীরা। পোস্তায় গিয়ে দেখা গেল, ট্রাক বোঝাই করে চামড়া নিয়ে আসছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রতিনিধিরা। আড়তের ভেতরে শ্রমিকেরা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতে ব্যস্ত। তবে তখনো চামড়া কেনাবেচা ততটা জমেনি।

ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চামড়া কিনছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল মতিন। বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ৮–১০টি চামড়া কিনেছেন। বললেন, ছোট আকারের গরুর চামড়া ২০০–২৫০ টাকায় কিনেছেন। আর মাঝারি ও বড় আকারের গরুর চামড়া কিনেছেন ৫০০–৯০০ টাকায়।

সময় গড়াচ্ছে, চামড়াবাহী ট্রাকের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। ট্রাকগুলো আড়তের সামনে থামছে। দামে বনিবনা হলে চামড়া নামিয়ে দিচ্ছে। না হলে অন্য আড়তের দিকে যাচ্ছে ট্রাকগুলো। রিকশা ও ভ্যানে করেও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে আসছেন।

মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের আড়তে গিয়ে দেখা গেল, শ্রমিকেরা গরুর চামড়ায় লবণ লাগাচ্ছেন। আড়তদার ছাড়াও সেখানে আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী নিজেরা চামড়া কিনে সেখানে লবণ লাগিয়ে সংরক্ষণ করছেন। বিকেল চারটার মধ্যে লবণযুক্ত চামড়ার ছোটখাটো স্তূপ হয়ে গেছে।

আড়তের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) উত্তম কুমার সাহা বলেন, ছোট আকারের গরুর চামড়া ২০০–২৫০ টাকা, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ৫০০–৭০০ এবং বড় আকারের গরুর চামড়া ৮০০–৯০০ টাকায় কিনেছেন। সব মিলিয়ে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার চামড়া কিনবেন। পোস্তা ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে তাঁরা চামড়া কিনছেন।

চামড়ার দাম কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে উত্তম কুমার সাহা পুরোনো একটা হিসাবের খাতা দেখালেন। ২০১৪ সালের সেই হিসাবে দেখা যায়, ৩ হাজার চামড়া কেনা হয়েছিল প্রায় ১ কোটি টাকায়। প্রতিটি চামড়ার দাম আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা। বললেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম পড়ে গেছে। হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরীতে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে দূষণ বন্ধ না হওয়ায় ইউরোপ–আমেরিকার বড় ব্র্যান্ডগুলো আমাদের চামড়া কিনছে না। তা ছাড়া ট্যানারির মালিকেরা বকেয়া টাকা না দেওয়ায় অনেক আড়তদার ও চামড়া ব্যবসায়ী এই ব্যবসা থেকে সরে গেছেন। সব মিলিয়ে চামড়ার ব্যবসায় মন্দা চলছে।’

মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স থেকে ফেরার সময় সড়কের পাশে আরেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. শাহজাহানের সঙ্গে কথা হলো। তিনিও চেয়ারে বসে চামড়া কিনছেন। জানালেন, ১৭–১৮ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করছেন। ফুটপাত থেকে চামড়া কিনে আড়তে বিক্রি করে দেবেন। বেশ কয়েক বছর আগে এক ট্যানারি মালিকের কাছে ৭ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে। তারপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি।

মো. শাহজাহান বললেন, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ৩০০–৪০০ টাকায় কিনেছেন। আর বড় আকারের গরুর চামড়া কিনেছেন ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায়।

মো. শাহজাহানের সঙ্গে কথা বলে এক আড়তের সামনে চামড়াবোঝাই ট্রাক দেখে এগিয়ে গেলাম। ১৮০ পিস চামড়া নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে এসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. কামাল মিয়া। বললেন, প্রতিটি চামড়া ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায় কিনেছেন। প্রতিটি গরুই লাখ টাকার ওপরে কিনেছেন কোরবানিদাতা। মাঝারি ও বড় চামড়া হওয়ায় তিনি দাম চাচ্ছেন ১ হাজার ২০০ টাকা। তবে আড়তদার প্রতিটি চামড়া ৭০০ টাকার বেশি দিতে চাচ্ছেন না।

কামাল মিয়ার সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন আড়তদার আলী হোসেন তাঁর সঙ্গে দর–কষাকষি করছিলেন। একপর্যায়ে কামাল মিয়া কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে অন্য আড়তে যেতে চাচ্ছিলেন। তখন আলী হোসেন প্রতিটি চামড়ার দাম বলেন ৭৫০ টাকা। কামাল মিয়ার মন গলে। তিনি ট্রাক থেকে চামড়া নামানোর নির্দেশ দেন। সঙ্গে সঙ্গে আড়াতের ভেতর চামড়া নিয়ে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত শুরু হয়।

বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে যখন পোস্তা থেকে যখন বের হচ্ছি, তখন চামড়াবাহী ট্রাকের সংখ্যা বাড়ছে। ততক্ষণে পোস্তায় ঢোকার মুখে যানজটও লেগে গেছে। চানাখাঁরপুল এলাকায় এসে দেখা গেল, সারি সারি চামড়াবাহী ট্রাক পোস্তার দিকে যাচ্ছে।

পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে।

ট্রাক থেকে কোরবানির চামড়া নামাচ্ছেন শ্রমিকেরা। আজ রোববার রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে

ট্রাক থেকে কোরবানির চামড়া নামাচ্ছেন শ্রমিকেরা। আজ রোববার রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে

বেলা তিনটা থেকে প্রথম আলোর একজন প্রতিবেদক ছিলেন রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০ জন ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ ট্যানারি, আবার কেউ আড়তদারদের হয়ে চামড়া কিনছেন। ধানমন্ডি, মিরপুর, তেজগাঁও, রামপুরা, কেরানীগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসার শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা সেখানে কোরবানির চামড়া বিক্রি করতে নিয়ে আসছিলেন।

তেজগাঁও এলাকা থেকে ১২টি গরুর চামড়া নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ী মনির হোসেন। তিনি জানালেন, ছোট আকারের চামড়া ২৫০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। আর মাঝারি আকারের চামড়া ৬৫০ টাকা করে বিক্রি করতে পেরেছেন। আর পৌনে দুই লাখ টাকা দামের একটি গরুর চামড়া ৭০০ টাকায় কিনে ওই দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

মনির হোসেন বললেন, কোরবানিদাতারা এবার কম দামে চামড়া ছাড়তে চাননি। কিন্তু বিক্রি করতে এসে খুব বেশি দাম পাননি। কিছু চামড়ায় কোনো লাভ হয়নি। আর কিছু চামড়ায় সামান্য লাভ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার একটু ভালো দাম পেলেও তা আশানুরূপ হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হাজারীবাগের সাবেক ট্যানারি এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, অল্প কয়েকজন ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন। সেখানে অধিকাংশ গরুর চামড়া ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকায়।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াতউল্লাহ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় চলতি বছর গরুর চামড়ার দাম ভালো। বিক্রেতারা ভালো দাম পাচ্ছেন। চলতি বছর ট্যানারিগুলো ১ কোটি ২০ লাখের মতো চামড়া সংগ্রহ করতে পারবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। সূত্র : প্রথম আলো

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.