মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৪৪ pm
ডেস্ক রির্পোট : দেশের সর্ববৃহৎ দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে এক যৌনকর্মীর সম্প্রতি ‘এইচআইভি এইডস’ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য যৌনরোগে আক্রান্তের সংখ্যাও দিনদিন বাড়ছে। এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে পল্লীর যৌনকর্মীসহ হাজার হাজার মানুষ।
সরজমিন আলাপকালে কয়েকজন যৌনকর্মী জানান, দেশের বৃহত্তম এ যৌনপল্লিতে আমরা প্রায় দেড় হাজারের অধিক যৌনকর্মী বসবাস করছি। আমাদের শিশু, ভালবাসার লোক ও বয়স্ক মহিলা রয়েছে আরও প্রায় ৩ হাজার। আমরা বর্তমানে চিকিৎসা, ওষুধ নিয়ে খুবই সমস্যায় আছি। এতে করে সিফিলিস, গনোরিয়া, হার্পিসসহ মরণঘাতি এইচআইভি এইডস সংক্রমণসহ চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছি।
কারণ হিসেবে তারা বলেন, এতদিন পায়াক্ট বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা আমাদের বিনামূল্যে কনডম, ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিল। পাশাপাশি নিয়মিত উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে আমাদেরকে রোগ-বালাইসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাউন্সেলিং করতো। নিয়মিত এইচআইভি এইডস পরীক্ষা করতো। বর্তমানে তাদের এ কাজগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা এ ধরনের সেবা হতে বঞ্চিত রয়েছি।
এ ব্যাপারে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন অবহেলিত মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফরিদা পারভীন বলেন, যৌনপল্লির মেয়ে ও তাদের সংস্পর্শে থাকা লোকজন মরণব্যাধী এইডস এবং সিফিলিস, গনোরিয়া, হার্পিসসহ বিভিন্ন জটিল যৌনরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাইরে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এ জন্য পল্লীতেই হাতের কাছে তাদের জন্য সরকারি বা বেসরকারিভাবে সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবামূলক কর্মসূচি চালু থাকা দরকার।
বেসরকারি সংস্থা পায়াক্ট বাংলাদেশ এর দৌলতদিয়া অফিসের ব্যবস্থাপক মজিবুর রাহমান জুয়েল বলেন, যৌনপল্লির ১৬ জন শিশু নিয়ে একটি সেফ হোম, কুশাহাটা দূর্গম চরে শিক্ষা প্রোগ্রাম এবং যৌনকর্মীদের নিয়ে এসটিআই (যৌনরোগ) এইচআইভি প্রতিরোধে তারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছিলেন। এর মধ্যে যৌনকর্মীদের নিয়ে এসটিআই এইচআইভি প্রতিরোধ প্রকল্পটির মেয়াদ গত মে মাসে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অর্থায়ন করতো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যৌনপল্লির যৌনকর্মীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। আমরা মেয়েদের ফ্রি কনডম বিতরণ, কনডম প্রদর্শন, যৌনরোগের চিকিৎসা, সাধারণ রোগের চিকিৎসা, ওষুধ বিতরণ, এইচআইভি পরীক্ষাসহ মোট ২৩টি সেবা প্রদান করতাম সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এতদিন প্রতিমাসে যৌনকর্মীদের মাঝে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কনডম ফ্রি বিতরণ করেছি। এছাড়া এসটিআই এইচআইভি প্রতিরোধ প্রকল্প দুইজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম কাউন্সিলর দিয়ে নিয়মিত এসটিআই (যৌনরোগ) সিফিলিস, গনোরিয়া, হার্পিসসহ এইচআইভি এইডস পরীক্ষা ও ফ্রি চিকিৎসা সেবা দেয়া হতো। গত ২ বছরে এ কাজের মাধ্যমে ৪ হাজার ১৫১ জন যৌনজীবীকে এসটিআই চিকিৎসা সেবা প্রদান ও দেড় হাজার যৌনকর্মীকে এইচআইভি এইডস পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি একজন যৌনকর্মীর এইডস শনাক্ত হয়েছে। আমরা কিছুদিন তাকে আমাদের তত্ত্বাবধানে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও অন্যান্য ভরণপোষণ দিয়েছি। বর্তমানে তাকে আর কোনো ধরনের সেবা দিতে পারছি না। সে যদি নিয়মিত কনডম ব্যবহার না করে তাহলে আরও অনেকেই তার মাধ্যমে এইডসে আক্রান্ত হতে পারেন। শুনেছি তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। আসলে তিনি কোথায় আছেন, কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন তা সঠিকভাবে জানি না। তার ভাইরাল লোড নামক একটি পরীক্ষা করানো অতীব জরুরি।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ আমিরুল হক শামীম বলেন, যৌনপল্লির বাসিন্দারা সব সময়ই মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। তাই তাদের কাছাকাছি থেকে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান ও কাউন্সেলিং করা দরকার। যে কাজটা এতদিন পায়াক্ট বাংলাদেশ করে আসছিল। তাদের কাজগুলো অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও অতীব প্রয়োজনীয় ছিল। এটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পল্লীবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি আবারো বেড়ে গেছে। তাছাড়া এখানে একজন এইডস রোগীও নাকি শনাক্ত হয়েছে।
বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। আমি শিগগিরই এ বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে অবগত করবো। সূত্র : যুগান্তর