শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৪০ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর আদালতে পূর্বে নিয়োগকৃত আইন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রদান করে নতুনভাবে শতাধিক আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে রাজশাহী জেলা, মহানগরের দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতে রাষ্ট্র পক্ষের আইন কর্মকর্তা নিয়োগে ব্যাপক আমল পরিবর্তন এসেছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত এসব আইন কর্মকর্তা তাদের নতুন কর্মস্থলে কাজ শুরু করেছেন বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে। তবে নতুনভাবে শতাধিক আইন কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে একতরফাভাবে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে বলে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক সিনিয়র আইনজীবী। তাদের দাবী, সরকার দলীয় ব্যানারে থাকার কারণে অনেক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাহীন জুনিয়রদেরকে এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে।
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রেরিত আদেশে রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেনের পরিবর্তে নিয়োগ পেয়েছেন এ্যাড. মোজাফফর হোসেন। আর রাজশাহী মেট্রোপলিটন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাড. আবদুস সালামের পরিবর্তে নিয়োগ পেয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম।
সেই সাথে জননিরাপত্তা দমন ট্রাইব্যুনালে বিশেষ পিপি হিসেবে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান মিঠু, বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের পিপি হিসেবে অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন খান। তবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি পদ অপরিবর্তিত থাকায় পূর্বের ন্যয় এই পদে পুন: নিয়োগ পেয়েছেন অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু। আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-০১ এর বিশেষ পিপি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অ্যাডভোকেট রাশেদুন নবী আহসানসহ ৯৪ জন।
এদিকে রাজশাহী জেলা জিপি (সরকারী কৌশুলী) অ্যাডভোকেট রবিউল হক কাকর-এর স্থলে নিয়োগ পেয়েছেন অ্যাডভোকেট মঞ্জুর জামান মুকুল। অতিরিক্ত সরকারী কৌশুলী হিসেবে অ্যাডভোকেট সুনির্মল সাহাসহ ১২জন এই পদে বিভিন্ন আদালতে নিয়োগ পেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগ (জিপি/জিপি) শাখা’র সহকারী সচিব মো: আব্দুছ ছালাম মন্ডল স্বাক্ষরিত সলিসিটর/জিপি-পিপি(রাজশাহী)-২৯/২০০৯-২০ নং স্মারকে এই নিয়োগের আদেশটি রাজশাহীর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট-এর কাছে প্রেরণ করা হয়। একই সাথে এ আদেশটি অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়।
মন্ত্রনালয় কতৃক প্রেরিত আদেশে উল্লেখ করা হয়, নবনিযুক্ত আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সততা সম্পর্কে রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জেলার দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালত সমূহে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফৌজদারী কার্যবিধি আইন ১৮৯৮ এর ৪৯২ ধারা এবং এল আর ম্যানুয়েল ১৯৬০ এর ২ নম্বর অধ্যায়ের ৯ ও ২৭(১৭) বিধির ক্ষমতাবলে তাদের সাময়িকভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর পূর্বে নিয়োগকৃত সকল আইন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত এসব আইন কর্মকর্তাগণ গত বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহীর নবনিযুক্ত সরকারী কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মুঞ্জুর জামান মুকুল বলেন, এ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ১৩ বছর পূর্বে আসা দরকার ছিলো। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে প্রকৃত ত্যাগিরা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থান পেয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। জেলা প্রশাসন এবং সরকারী কৌঁসুলি মিলে আমরা নতুন উদ্যোমে কাজ করবো।
তবে নতুনভাবে শতাধিক আইন কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে একতরফাভাবে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে বলে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক সিনিয়র আইনজীবী। তাদের দাবী, সরকার দলীয় ব্যানারে থাকার কারণে অনেক জুনিয়রকে এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে। ফলে সঠিক বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের বিড়ম্বনায় পড়ার ঝুঁকি বেড়ে গেল। এমন গুরুত্বপূর্ণ সীদ্ধান্তগ্রহণের আগে আরো যাচায় বাছায় প্রয়োজন ছিল। তারা বলেন, এখনো সুযোগ আছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাহীনদের বাদ দেয়ার বিষয়টি সুবিবেচনা করার জন্য নীতি নির্ধারকদের প্রতি অনুরোধ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব সিনিয়র আইনজীবী।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ‘নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ফলে এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।’
নিয়োগ প্রাপ্ত সকলেই দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন কী না প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমি এখনো দায়িত্ব বুঝে নেই নি। অনেকেই বুঝে নিয়েছে। তবে আমি দায়িত্ব বুঝে না নিলেও নতুন কর্মস্থলে কাজ শুরু করেছি।’ সূত্র : এফএনএস। আজকের তানোর