রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:০৬ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মহানগরীর ৫৫২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এতদিন নিয়মিত ভাতা পেতেন। পেয়েছেন সরকার ঘোষিত সব সুযোগ-সুবিধা। তাদের সন্তান-সন্ততি নাতি-নাতনিরাও চাকরি সুবিধা নিয়েছেন।
এই ৫৫২ জনের মধ্যে ১৬০ জনের বিষয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকার সুপারিশ বা স্বীকৃতি ছিল না। যাচাই-বাছাই শেষে এই ১৬০ জনের মধ্যে মাত্র ৩৪ জনের নাম গেজেটভুক্ত করার সুপারিশ হয়েছে। বাদ পড়েছেন ১১০ জন। আটজনের বিষয়ে কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়নি।
আর বাকি আটজনের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত না হলেও কমিটি তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি জামুকার ওপর ছেড়ে দিয়েছে। ফলে সর্বশেষ ৩৪ জন চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছেন; যাদের নাম চূড়ান্তভাবে গেজেটে উঠবে।
গত ৬ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত চার সদস্যের কমিটি জামুকার সুপারিশে সন্দিগ্ধ ১৬০ জনের বিষয়ে এ কার্যক্রম পরিচালনা করে। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাচাই-বাছাই কার্যকালে জামুকা থেকে প্রেরিত সন্দেহভাজন ১৬০ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম যাচাই-বাছাইয়ে সংশ্লিষ্টদের নোটিশ পাঠানো হয়। নাম-ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্যাবলী ছাড়াও যুদ্ধকালীন সেক্টর, সাব-সেক্টর, মুক্তিবার্তায় নাম থাকা, অতীতে তালিকাভুক্তি, কমান্ড এলাকা, ক্যাপ্টেন, সহযোদ্ধার নামসহ ৩৩ ধরনের প্রমাণসহ তাদের কমিটির সামনে হাজির হয়ে সেসব প্রমাণপত্র উপস্থাপনের জন্য বলা হয়। জানা গেছে, নোটিশ পেলেও ২৬ জন ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা কমিটির সামনে হাজির হননি।
এদিকে ১৬০ জনের মধ্যে ৮৪ জনের উপস্থাপিত তথ্যাবলী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রমাণক হিসেবে যথেষ্ট বিবেচিত না হওয়ায় তাদের নাম বাদ পড়েছে। এছাড়া নোটিশ পেলেও ২৬ জন কমিটির কাছে আবেদনসহ কোনো প্রমাণই হাজির করেননি। আটজনের বিষয়ে কমিটির সদস্যরা একমত হননি।
ফলে তাদের নামও সুপারিশ তালিকায় যায়নি। বাকি আরও আটজনের বিষয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। শুধুমাত্র ৩৪ জনের নাম গেজেটভুক্তির চূড়ান্ত সুপারিশ দিয়ে জামুকাতে পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে সরাসরি বাদ পড়েছেন ১১০ জন।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলা এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমান। বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল ও এস মনিরুল ইসলাম চৌধুরী কমিটির অপর দুই সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। চার সদস্যের কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেছেন এডিসি শরিফুল হক।
যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ৩৩ ধরনের প্রমাণক চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে জামুকার সুপারিশও প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী মহানগরীর ৫৫২ জন ভাতাভোগীর মধ্যে ১৬০ জনের ব্যাপারে জামুকার সুপারিশ ছিল না। সে কারণে তাদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়।
তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে মঙ্গলবার জামুকাতে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। ১৬০ জনের মধ্যে ৮৪ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রমাণক হাজির করতে পারেননি। এই ৮৪ জন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন- এমন প্রমাণ পায়নি কমিটি। আর ২৬ জন কমিটির সামনে হাজিরই হননি। ফলে মোট ১১০ জনের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে পরবর্তীতে তাদের ভাতা অব্যাহত রাখা বা না রাখা ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে জামুকাই সিদ্ধান্ত নেবেন। আর ১৬ জন সন্দেহভাজন হিসেবে থেকে গেছেন।
এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবেদন নামঞ্জুর হওয়াদের মধ্যে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নানও আছেন। তালিকায় তার ক্রমিক নম্বর-৮৫। আবেদন বাতিলের তালিকায় আরও আছেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা অ্যাডভোকেট কামরুল মুনীর, যিনি রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতিও ছিলেন।
এছাড়া বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, নূর মোহাম্মদ পেনু, অ্যাডভোকেট অঙ্কুর সেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র রেজাউন নবী দুদু প্রমুখ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রমাণপত্র হাজির করতে পারেননি।
মুক্তিযোদ্ধার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি নূর কুতুব উল আলম মান্নান বলেন, এখন বাতিল হয়ে গেলে কী করব। আমি তো মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক কাজ করেছি। ২০০৬ সালের দিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছি। তখন থেকেই ভাতা পাচ্ছি। এ বিষয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই।
যাচাই-বাছাইকালে নগরীর যে আটজনের ব্যাপারে কমিটির সব সদস্য একমত হননি বা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়নি তারা হলেন- মৃত নজিবর রহমান, মৃত হিসাব উদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক, বদরুল আলম, আবদুল আজীজ, মজিবুর রহমান, মৃত মোয়াজ্জেম হোসেন এবং সারওয়ার-ই-কামাল স্বপন।
যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ শরিফুল হক বুধবার বলেন, যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন মঙ্গলবার জামুকায় পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জামুকা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গ্রহণ করবে বলেও জানান তিনি। সূত্র : যুগান্তর