রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৫৩ am
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক’ (আইপিইএফ) জোটে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছে বাংলাদেশ। যদিও কবে নাগাদ যোগ দেবে তা নিশ্চিত নয়।
এ ব্যাপারে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত নানা দিক পর্যালোচনা করছে ঢাকা। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এই জোটে যোগ দিতে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও দেওয়া হয়নি। তবে জোটে নেওয়ার আগ্রহ আছে তাদের।
আইপিইফের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার সুযোগ নেয়নি বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশকে এই বলয়ে অন্তর্ভুক্ত করার ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু ঢাকার অনেকটা ভাবলেশহীন প্রতিক্রিয়ার কারণে শেষ পর্র্যন্ত বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে ১৩ জাতির জোটের ঘোষণা দেন বাইডেন। কেউ কেউ মনে করেন, বিশ্ব অর্থনীতির ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণকারী দেশগুলোর জোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করা ঢাকার ভুল সিদ্ধান্ত।
জানতে চাইলে ঢাকার উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আইপিইএফের চারটি নীতিগত স্তম্ভের দুটির সঙ্গে কাজ করার কথা চিন্তা করছে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব করা ঠিক হবে না। আমরা অনেক ক্ষেত্রে সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে অনুধাবন করি যে, বিষয়টা ঠিক হয়নি’।
তিনি আরও জানান যে, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশন’ (জেসিসি) বৈঠক করতে ভারত সফরে গেলে নয়াদিল্লির তরফ থেকেও বাংলাদেশকে আইপিইএফে যোগদান করার জন্যে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, অনেকে মনে করে, বাংলাদেশ চীনের দিকে বেশি ঝুঁকে আছে।
আইপিইএফের ভিত্তি হলো চারটি নীতিস্তম্ভ। এগুলো হলো-এক. অবাধ ও স্থিতিস্থাপক বাণিজ্য, দুই. স্থিতিশীল সরবরাহ চেইন, তিন. অবকাঠামো, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি এবং ডিকার্বোনাইজেশন, চার. কর এবং দুর্নীতি দমন।
বাংলাদেশের তরফে দুটি নীতিস্তম্ভের বিষয়ে বিশদ জানতে চাওয়া হয়েছে। এই দুটি নীতিস্তম্ভ হলো, এক. স্থিতিশীল সরবরাহ চেইন, দুই. অবকাঠামো, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও ডিকার্বোনাইজেশন।
ঢাকার আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব না দিলেও বাংলাদেশকে আইপিইএফে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ আছে।
বাংলাদেশ আইপিইএফে যোগদানের বিষয়ে চীনের আপত্তি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে চীন অনানুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ আইপিএফে যোগ দেবে কিনা। ঢাকার তরফে জানানো হয়েছে যে, বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যালোচনা চলছে।
বাইডেন ক্ষমতায় যাওয়ার পর এশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) গঠন করেন। তার আওতায় প্রথমে গঠন করা হয় চার দেশের সামরিক জোট কোয়াড। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান কোয়াডের সদস্য।
অনেকে মনে করেন, এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবিলায় এই জোট গঠন করা হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ কোয়াডে যোগ দিতে আগ্রহ দেখায়নি। তাছাড়া, চীনের তরফে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয় যে, কোয়াডে যোগ দিলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, আইপিইএফের অধীনে অর্থনৈতিক সহযোগিতায় কোনো আপত্তি নেই।
যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সহযোগিতার জোট আইপিইএফ গঠনের প্রাক্কালে বাংলাদেশকে বিষয়টি নিয়ে ব্রিফ করেছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশকে এই জোটে দেখতে চায় তার প্রাথমিক তালিকায় বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঢাকার তরফে তখন বলা হয় যে, বাজার সুবিধা দেওয়া হলে বাংলাদেশ এই জোটে যোগ দিতে আগ্রহী। কিন্তু এই জোটে বাজার সুবিধার কোনো সুযোগ না রাখায় ঢাকার আগ্রহে ভাটা পড়ে।
আইপিইএফ গঠনের চূড়ান্ত পর্যায়ে বাংলাদেশকে ডাকেনি যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার আগে ৬ মে দেশগুলোর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশকে ডাকা হয়নি। বাংলাদেশের পরিবর্তে ব্রুনাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
জো বাইডেন ২৩ মে টোকিওতে কোয়াড সম্মেলনের সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে পাশে রেখে বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে ১৩ জাতির আইপিইএফ ঘোষণা করেন। জোটের অন্য নেতারাও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন। আইপিইএফে যে ১৩ দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলো হলো-যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম। সূত্র : পদ্মাটাইমস