রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৩৭ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর : খাতা কলমে জনবল থাকলেও বাস্তবে মহা সিন্ডিকেটে মহা সংকটে রাজশাহীর তানোর হাসপাতালটি। ডাক্তার কর্মচারী সবাই আছে, শুধু নেই উপস্থিতি। আবার প্রতি মাসেই বেতন তুলছেন ঠিকই। এতই সংকট যে বিভিন্ন স্বাস্থ্য-উপকেন্দ্রের কর্মরত চিকিৎসক কমিউনিটি স্বাস্থ্য উপসহকারী কর্মকর্তা (সেকমো) দের দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।
অনিয়ম ভাবে তালন্দ বাজারের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (সেকমো) মিজানুর রহমান উপজেলা হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে দেদারসে দেখছেন রোগী বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে । অথচ সেখানে মেডিকেলের কর্মরত ডাক্তার দিবেন চিকিৎসা। কিন্তু কোম্পানির কট্রাকের ঔষধ বিক্রি করতেই স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের কর্মকর্তা (সেকমো) দের দিয়ে বানিজ্য করছেন মেডিকেল কর্মকর্তা বলেও অহরহ অভিযোগ । ফলে মেডিকেলের অনিয়ম দুর্নীতি দূর করতে এবং ডাক্তারদের উপস্হিতি হওয়ার জন্য স্হানীয় সাংসদসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২২ জুন বুধবার হাসপাতালের মুল গেটের পুর্বদিকে ইমার্জেন্সির ঘর ও বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন অনেক রোগী। ছিল একাধিক ঔষধ বিক্রয় কর্মীরা। এমনকি অনেক রোগীও বিক্রয় কর্মীদের ডাক্তার মনে করে রোগের কথা বলতেও দেখা যায়। প্রায় কক্ষে অবাধে বিচরণ বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয় কর্মীদের।
উপজেলার তালন্দ স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের কর্মকর্তা (সেকমো) মিজান ইমারজেন্সিতে বসে একে একে রোগী ডাকছেন আর প্রেসক্রিপশন লিখে দিচ্ছেন।
সেখান থেকে ভারপ্রাপ্ত টিএইচও ডা: আব্দুল হাকিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তালন্দ স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে রোগী আসেন না এবং হাসপাতালে ডাক্তারের প্রচুর সঙ্কট। মুলত এজন্যই কর্মকর্তা ডাক্তার বার্নাবাস হাসদার অনুমতিক্রমে মিজান চিকিৎসা দিচ্ছেন। শুধু মিজান নয় স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে যারা আছেন তাদের সবাইকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে বলেছেন।
মিজান এখানে চিকিৎসা দিলে তালন্দ স্বাস্থ্য কেন্দ্রেকে চিকিৎসা দিবেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সেটা আমাদের বিষয় বলে দম্ভোক্তিও প্রকাশ করেন তিনি। মেডিকেলে যেসব ঔষধ আছে দেওয়া হয় না কি কারনে প্রশ্ন করা হলে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমি কি সব ব্যাপারে আপনাকে তথ্য দিতে বাধ্য। কে বলেছে। একজন কর্মকর্তার ভাষায় যদি এমন হয় তাহলে সেবার কি অবস্থা হবে।
উপজেলার তালন্দ স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের কর্মকর্তা ( সেকমো) মিজানুর রহমান জানান, ওই কেন্দ্রে বসার পরিবেশ নেই। রোগীরাও আসতে চায়না। আপনি না থাকলে রোগী কিভাবে আসবে আর ইমার্জেন্সিতে কিভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারি এবং টিএইচও স্যারের নির্দেশে। তাছাড়া আমি কেন চিকিৎসা দিব। সরকার আপনাকে তালন্দ স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের জন্য চাকুরী দিয়েছেন, আর সরকার আপনাকে ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি দিবে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, আমার কাছে অর্ডারের কাগজ আছে। আপনি কি ইমার্জেন্সিতে এভাবে চিকিৎসা দিতে পারেন জানতে চাইলে আবারো বলেন, নির্দেশ মোতাবেক কাজ করছি বলে এড়িয়ে যান।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের কর্মকর্তা বা সেকমোদের মেডিকেলে এসে চিকিৎসা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তালন্দ স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের সেকমো মিজান ইমারজেন্সিতে মেডিকেল কর্মকর্তা কিভাবে আদেশ বা অর্ডার করতে পারেন কি না এমন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, আমি এখনি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। পুনরায় সেকমো মিজানকে বিষয়টি বলা হলে তিনি দম্ভক্তি প্রকাশ করে বলেন, আমি তো বললাম সরকারি অর্ডার আছে বলে এড়িয়ে যান তিনি।
জানা গেছে, উপজেলা হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। অথচ নীতিমালা লঙ্খন করে উপজেলার তালন্দ, কামারগাঁ, চৌরখৈর, মুন্ডুমালা ও মাদারিপুরসহ ৫টি ইউপি স্বাস্থ্য-উপকেন্দ্রের কর্মরত চিকিৎসক কমিউনিটি স্বাস্থ্য উপসহকারী কর্মকর্তাদের (সেকমো) উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে এসে আউটডোরেে চিকিৎসা দেওয়াচ্ছেন টিএইচও । আবার হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ থাকার পরেও রোগীদের দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র এন্টাসিড ও প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ লিখে রোগীদের কিনতে বাধ্য করছেন বলেও অহরহ অভিযোগ। এমনকি পার্শ্ববর্তী ক্লিনিক গুলোতেও মেডিকেলর ঔষধ চুরি করে বিক্রি করা হয়।
এদিকে ৫টি স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের ৫ জন কর্মকর্তা বা সেকমোদের হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেওয়ার কারনে তালন্দ, চোরখৈর, কামারগাঁ, মুন্ডুমালা ও মাদারিপুর কেন্দ্রগুলো এক প্রকার অকেজো হয়ে পড়েছে । এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এমনিতে রোগী আসতে চাই না। এসেও লাভ হয় না। কারণ দিনের পর দিন ঘুরেফিরেও দারিদ্র্য অসহায় জনগোষ্ঠীরা কোনই চিকিৎসা সেবা পাই না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোতলায় ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা এক ভুক্তভোগির পরিবার জানান, হাসপাতালের রোগীর বিছানায় ব্যবহৃত চাদর ও বালিসের কভারগুলো ময়লাযুক্ত দূর্গন্ধেভরা রয়েছে। সেই সাথে প্রচুর চার পোকা। রোগীর খাবার অত্যান্ত নিম্নমানের। ওয়ার্ড নার্সরা কক্ষ বন্ধ করে ভিতরে সামাজিক যোগাযোগের আড্ডায় মরিয়া।।
প্রয়োজনে রোগীর অভিভাবকরা নার্সদের ডাকলেও ভেতর থেকে কোন আওয়াজ বের না হলেও খারাপ ভাবে কথা বলেন এবং ধমকও দেন। এছাড়া হাসপাতাল থেকে সরকারি ওষুধ আর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা রোগীদের দেয়া হয় না যা সরেজমিনে তদন্ত করলেই দূর্নীতির ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠবে বলে মনে করেন খোঁদ মেডিকেলের কর্মকর্তা কর্মচারী থেকে শুরু করে সচেতন মহল। আজকের তানোর