শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৩০ am

সংবাদ শিরোনাম ::
মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য কোথাও বসাতে না পেরে বিক্রি করলেন ভাঙারির দোকানে রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই : আনন্দবাজারকে জামায়াতের আমির আগামী তিন মৌসুমের জন্য আইপিএলে যে ১৩ ক্রিকেটারের নাম দিল বিসিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ থামিয়ে রাখেননি অভিনেত্রী হিনা খান নগরীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১ জন গ্রেপ্তার তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাঁচার রোধে হট্টগোল মারপিট দুর্গাপুরে হোজা নদী পুন:খনন ও দখলমুক্ত দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলিপি রাজশাহীতে সমন্বয়ক পেটানোর ব্যাখ্যা দিল মহানগর ছাত্রদল আঘাতের দাগে সম্পর্কের রূপান্তর ! রাজু আহমেদ তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না নগরীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত আগামী ২৯ নভেম্বর খুলছে রাজশাহী সুগার মিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে স্মরণসভা রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১১ বাগমারা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেবের ইন্তেকাল তানোরে মসজিদের এসি অফিসার্স ক্লাবে, ইমামের অর্থ আত্নসাৎ প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তানোরে বিএনপির কর্মীসভা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮ জন গ্রেপ্তার লীজকৃত পুকুর দখল, মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ
সিলেটের সর্বগ্রাসী বন্যা এবং মানবিকতার হাত : ইয়াহিয়া নয়ন

সিলেটের সর্বগ্রাসী বন্যা এবং মানবিকতার হাত : ইয়াহিয়া নয়ন

এমন বন্যা সিলেটবাসী আগে দেখেননি। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বন্যার পানিতে ডুবে গেছে সিলেট নগরীর পথঘাট-লোকালয়। কোথাও পানি ছুঁয়েছে কোমর পর্যন্ত। এটি চলতি মৌসুমের তৃতীয় দফা বন্যা। একের পর এক বন্যায় বিপর্যস্ত এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। দুই জেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। সেই সাথে নতুন করে ডুবতে শুরু করেছে হবিগঞ্জ জেলা।

নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে উঁচু স্থান, স্কুল বা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ। কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে বানভাসি মানুষ। একদিনে বন্যার এমন ভয়াবহ রূপ আগে দেখেননি সিলেটবাসী। হতভম্ব ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষ। অবাক হয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।

বানভাসি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সেনা, নৌবাহিনী কাজ করছে দুর্গত এলাকায়। স্থানীয় প্রশাসনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি যথেষ্ট নাজুক। এ অবস্থায় মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বন্যা থেকে বাঁচতে।

বানভাসি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সেনা, নৌবাহিনী কাজ করছে দুর্গত এলাকায়। স্থানীয় প্রশাসনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি যথেষ্ট নাজুক। এ অবস্থায় মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বন্যা থেকে বাঁচতে।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিকে বলা হয় মেঘের রাজ্য। এখানে রয়েছে উঁচু পাহাড়, ঝরনা আর সবুজ প্রকৃতি। সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের জন্য বিশ্বের বিখ্যাত স্থান এটি। সিলেটের তামাবিল বর্ডার পেরোলেই মেঘালয় রাজ্য। একসময় প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড বলা হতো চেরাপুঞ্জিকে।

এই পর্যটন স্থানটির রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। তৎকালীন বিট্রিশশাসিত ভারতে পাহাড়ি এলাকায় নগর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল ব্রিটিশ কর্মকর্তারা। ১৮২৪ সালে প্রথম বার্মা যুদ্ধের পর ব্রিটিশ চেয়েছিল উত্তর-পূর্ব ভারতে নিজেদের পছন্দের একটা জায়গা বেছে নিতে। ব্রিটিশ কর্মকর্তা ডেভিড স্কট সরেজমিনে পরিভ্রমণের সময় চেরাপুঞ্জিতে হাজির হন।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকার একটি চেরাপুঞ্জিসহ ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে গত তিনদিনে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যা গত ২৭ বছরের মধ্যে তিনদিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, সিলেট সংলগ্ন মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৯৭২ মিলিমিটার। একই রাজ্যের শিলংয়ে ১০১, আসামের গৌহাটিতে ৪২ আর ধুব্রিতে ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হয়েছে ৬৭৪ মিলিমিটার। প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট ঢল ভাটিতে থাকা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলকে ডুবিয়ে দিয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, ঢলের পানি কেন সিলেট থেকে দ্রুত সরে দক্ষিণে নেমে যাচ্ছে না? পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত কেন হচ্ছে? সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়াবহতা দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করেছে কোন কারণে?

এ বিষয়ে পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মত, চার কারণে এবার ভয়াবহ বন্যায় নাজেহাল অবস্থা সিলেটের। সেগুলো হলো- নদীর নাব্য সংকট, হাওরে অপরিকল্পিত বাঁধ ও স্লুইসগেট নির্মাণ, হাওর বিল ঝিল ভরাট, নির্বিচারে পাহাড়-টিলা কাটা।

তবে সমাধানের পথও আছে। সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদী খনন করা এবং সিলেট নগরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত প্রাকৃতিক ছড়াগুলো দখলমুক্ত করে খনন করা। এভাবেই পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ নিশ্চিত হবে। সবচেয়ে বেশি জরুরি কালনী নদী খনন। কারণ সিলেটের বিশাল এলাকার পানি বয়ে যায় শুধু এই কালনী নদী দিয়ে।

এ বিষয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বলেন, ‘সিলেট থেকে পানি বের করে দেওয়ার একমাত্র উপায় নদী খনন। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সঠিক নকশা ও পদ্ধতিতে সিলেটের নদীগুলো খনন করে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা বাড়ানো প্রয়োজন।

পাশাপাশি নির্বিচারে সিলেটে পাহাড়-টিলা কাটা, পুকুর ভরাট থামানো উচিত। বিশেষ করে সিলেট এলাকার পানি বের হওয়ার জন্য যে একটামাত্র পথ আছে-অর্থাৎ কালনী নদী সেটাকে খনন করলেই দ্রুত বন্যার পানি সরে যেতে পারবে। প্রয়োজনে কিছু সংযোগ খাল যদি তৈরি করা যায়, তাহলেও পানি দ্রুত বের হবে।’

এটা আমরা সবাই বুঝতে পারছি যে, নির্বিচারে হাওর ও বিল ভরাট করায় পানি ধারণক্ষমতা অনেক কমে গেছে। তাই মুষলধারে বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ধারণ করতে পারছে না সেগুলো। উপচে পড়ছে, আর প্লাবিত করছে শহর-গ্রাম।

পানি ধরে রাখা আমাদের অসংখ্য হাওর, বিল বা জলাধারগুলো সরকারি-বেসরকারিভাবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ কাজ আগে বন্ধ করতে হবে। এদিকে প্রথম দফা বন্যার পর দ্বিতীয় দফা বন্যার আশঙ্কা নানাভাবে প্রকাশ করা হলেও সে বন্যা মোকাবিলায় সরকারি কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। মানুষকে আগেই সতর্ক করা উচিত ছিল। দায়িত্বশীল মহল থেকে মানুষকে সতর্ক করা হলে এখন সিলেটের মানুষকে এমন দুরবস্থার মুখোমুখি হতে হতো না। এই ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

উঁচু পাহাড়ি এলাকা মেঘালয়ে বৃষ্টিপাতের কারণে যে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়, তার সব পানিই চলে আসে সিলেটে। সেই ঢলে আসা পাহাড়ি বালু-মাটি-পলি জমতে জমতে নদ-নদীগুলো প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। এতে নদীগুলো ক্রমে সংকীর্ণ ও ভরাট হয়েছে। পাশাপাশি যেখানে সেখানে স্লুইসগেট ও অবকাঠামো নির্মাণের কারণেও নদীর প্রবাহপথ আরও বেশি সংকুচিত হয়েছে।

যে কারণে এবারের বন্যার এতো ভয়াবহতা। এ রকম পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে সিলেটের নদ-নদীগুলোর নাব্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নদী দখলমুক্ত করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। বিল-ঝিল, হাওর-বাঁওড় ও জলাধার খনন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এমন বড় বড় ঢল যে বছর বছর আসবে না তার নিশ্চয়তা কি?

আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই প্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নিতে হবে। গড়িমসি করলে বিপদ বাড়বে। লেখক: সাংবাদিক।  সূত্র : জাগোনিউজ

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.