মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৪৩ pm
ডেস্ক রির্পোট : পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির গল্প সাজিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ বাস্তবায়নে সে সময় সরকারের এক মন্ত্রী ও উপদেষ্টা দুদদকে তদবিরও করেছিল। দেশি-বিদেশি চাপে মামলা করতে হয় দুদককে। গ্রেফতার করা হয় সেতু সচিবসহ ২ জনকে।
জালিয়াত প্রতিষ্ঠানকে পদ্মা সেতুর কাজ পাইয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়াই একের পর এক দুর্নীতির গল্প সাজাতে থাকে বিশ্বব্যাংক। কথিত দুর্নীতির তদন্তে নিজেদের টিমও পাঠায় বাংলাদেশে।
জড়িতদের ছুটিতে পাঠানো, দুদকের বিশেষজ্ঞ টিম গঠন, তদন্তের অগ্রগতি জানানো এবং তাদের সুপারিশ নেয়ার তিন দফা প্রস্তাব দেয় বিশ্বব্যাংক। যদিও এমন প্রস্তাবের আগেই তদন্তে টিম গঠন করে দুদক। তবে অভিযোগ প্রমাণের আগে ছুটিতে পাঠানো, তদন্তে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ নেয়ার প্রস্তাবটি সাংঘর্ষিক হওয়ায় নাকচ করে দেয় দুদক।
দুদকের এই অবস্থানের মধ্যেই পদ্মায় বিশ্বব্যাংকে ফেরাতে সরকারের একজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টা তাদের প্রস্তাব মেনে নিতে দুদকে তদবির করেন। সে সময়ের দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে ডেকে মন্ত্রী আবুল হোসেনকে গ্রেফতার, তার ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পরামর্শ দেন। এতে হতবাক হন দুদক কমিশনার।
সাবেক দুর্নীতি দমন কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত সাহেব ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী একদিন সকালে আমাকে ডাকেন। তারা বলেন, দুদককে কিছুটা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। এর জন্যই আপনাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চায়। আমি বললাম আমাদের তো একজন কমিশনার ও একজন চেয়ারম্যান আছে। তাদের সঙ্গে আগে আলোচনা করেন। তখন তারা বলে তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে তারা আমার কথা বলেছেন যে, তিনি আইনের দিকটা দেখেন তার সঙ্গেই আপনারা কথা বলেন। আমি বললাম আপনারা কী চান। তখন তারা বললো বিশ্বব্যাংক টিম আসার আগে আবুল হোসেনকে মামলা করে আসামি করতে হবে। সেই সঙ্গে আবুল হোসেনের যে ফার্ম আছে সেটাতে অভিযান চালিয়ে ওদের সব কাগজপত্র জব্দ করতে হবে। আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে এসে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ওরা এটা দেখতে পেলেই টাকাটা দিয়ে দেবে।
বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ এবং সরকারের একটি মহলের চাপে পদত্যাগে বাধ্য হন আবুল হোসেন। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয় অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে। গ্রেফতার হন সেতু সচিব ও প্রকল্প পরিচালক।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের কথায় অনেক কিছু হচ্ছে। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব গেছে, তারপরে অনেক কিছু ভেতরে ভেতরে সরকারকে অ্যাকশনে যেতে হয়েছে। এর কারণ, বিশ্বব্যাংক বলছে আমরা টাকা দিব। আর সরকারও মনে মনে ভাবছে দিলে ভালো তাই সরকার কিছু শর্তও পূরণ করেছে। পরে দেখা গেল যা করা হয়েছে এগুলো ঠিক না এবং দেখা গেছে, তারা এসব কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতই ছিল না।
দুদকের সাবেক এই কমিশনার আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের ধরণ এবং প্রস্তাব দেখেই তারা নিশ্চিত হন এই দুর্নীতির অভিযোগের অন্তরালে রয়েছে পদ্মা সেতু বিরোধী দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র।
সাবেক এই কমিশনার বলেন, তারা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং সেই প্রভাবে শেষ দিনের পদ্মা সেতুর অর্থায়নের চুক্তিটি বাতিল করে। সূত্র : এফএনএস