শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:০৮ pm
আর কে রতন, বিশেষ প্রতিবেদক : বিস্তীর্ণ জলাশয়। সবুজের মধ্যে সাদা, হালকা গোলাপি আর বেগুনির মিশ্রণে ফুটে আছে রাশি রাশি অগ্রণিত ফুল। দেখে মনে হচ্ছে শিল্পীর তুলিতে আঁকা এ যেনো কোনো নজরকাঁড়া দৃশ্য।রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের দুই দু-ধারে অবস্থিত জলাশয়ে অপরূপ রুপের এই দৃষ্টিস্থাপন করেছে কচুরিপানার ফুল কাগান। অযত্নে ফোটা হাজার হাজার ফুলের কোনো সুবাস না ছড়ালেও এর নান্দনিক রূপে মুগ্ধ সড়কে চলাচল করা যানবাহনের পথচারি।
স্থানীয় লোকজন জানান, মহাসড়কের দুপাশের দীর্ঘ জলাশয় বছর তিনেক আগেও পরিষ্কার ছিল। স্বচ্ছ পানিতে মাছ চাষ করা হতো। দিনে দিনে বিস্তীর্ণ এ জলাশয় কচুরিপানায় ভরে ওঠে। এরপর ফুল ফুটতে শুরু করে। তবে গত বছরও একসঙ্গে এত ফুল দেখা যায়নি। এবার চৈত্রের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কচুরিপানার ফুল ফুটতে শুরু করে। কয়েক দিনের মধ্যে পুরো জলাশয় ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। মনোরম হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ফুলের শোভা দেখতে কিংবা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে ছবি তুলতে জলাশয়ের কাছে ভিড় জমায় অনেক প্রকৃতিপ্রেমী লোকজন।
সরেজমিনে দেখা যায়, যেন ফুলের চাদরে ঢেকে আছে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের দুপাশের জলাশয়গুলো। কেউ কেউ মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি থামিয়ে জলাশয়ের পাশে দাঁড়িয়ে একটু উপভোগ করে নিচ্ছেন এ সৌন্দর্য। অনেক সৌখিন আলোকচিত্রী ক্যামেরা বন্দী করছেন এ মনোরম দৃশ্য। যাঁর ক্যামেরা নেই, তিনি মুঠোফোনেই ধরে রাখছেন এ ভালো লাগা।
মোহনপুরের প্রকৃতিপ্রেমী আলোকচিত্র শিল্পী আজিজুল হক বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে ছবি তোলা ও আঁকার কাজ করে থাকি। বহু রকম ফুলেরও ছবিিআমি তুলিছি। কিন্তু একসঙ্গে কচুরিপানার এত ফুল দেখে সত্যি আমি মুগ্ধ। তাই খবর পেয়ে ছুটে এসেছি এই জলাশয়গুলোর মনোমুগ্ধকর অপরুপ দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করতে। মান্দা উপজেলার কানিজ আক্তার বলেন, ‘কচুরিপানাকে এত দিন আগাছা বলেই জানতাম। কিন্তু সেই কচুরিপানার ফুলে যে এত মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি হতে পারে, তা এখানে না এলে বুঝতাম না।’
রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী মো. গোলাম হোসেন বলেন, কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করে, যা ৩০ বছর পরও অঙ্কুরোদ্গম হতে পারে। পানি পেলে কচুরিপানার ফুল প্রায় সারা বছরই ফোটে। তবে বেশি দিন স্থায়ী হয় না। নাজুক এ ফুল কাণ্ড থেকে আলাদা করলে খুব দ্রুতই নুয়ে পড়ে। তাই এ ফুল জলাশয়ে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণই মুগ্ধতা ছড়ায়। গ্রামাঞ্চলে এই কচুরিপানা ফুলটিকে অনেকে ‘হেনা’ বলে ডাকেন। কিছু এলাকায় এটি ‘কস্তুরি’ ফুল নামেও পরিচিত। এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকায়। এরা মূলত স্রোতহীন স্বাদু পানিতে জন্মায়। মুক্তভাবে ভাসমান বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদের মধ্যে এই কচুরিপানা অন্যতম। সবুজ পাতাবিশিষ্ট এই কচুরিপানা পানির ওপরে এক মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।
রাজশাহী সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী ড.অধ্যাপক শাহ মোঃ মাহবুব আলম বলেন, কচুরিপানা একটি জলজ উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম water hyacinths। বৈজ্ঞানিক নাম:Eichhornia crassipes । সাতটি প্রজাতি আছে এবং এরা মিলে আইকরনিয়া গণটি গঠন করেছে। কচুরিপানা মুক্তভাবে ভাসমান বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা।
পুরু, চকচকে এবং ডিম্বাকৃতির পাতাবিশিষ্ট কচুরিপানা পানির উপরিপৃষ্ঠের ওপর ১ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর কাণ্ড থেকে দীর্ঘ, তন্তুময়, বহুধাবিভক্ত মূল বের হয়, যার রং বেগুনি-কালো। একটি পুষ্পবৃন্ত থেকে ৮-১৫ টি আকর্ষণীয় ৬ পাঁপড়ি বিশিষ্ট ফুলের থোকা তৈরি হয়। নদীর জলে ভাসমান কচুরিপানা কচুরিপানা খুবই দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করে যা ৩০ বছর পরও অঙ্কুরোদগম ঘটাতে পারে। সবচেয়ে পরিচিত কচুরিপানা Eichhornia crassipes রাতারাতি বংশবৃদ্ধি করে এবং প্রায় দু’ সপ্তাহে দ্বিগুণ হয়ে যায়। কচুরিপানা দক্ষিণ পাকিস্তানের সিন্ধের প্রাদেশিক ফুল। আজকের তানোর