মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৩৯ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্জিত শিক্ষার প্রয়োগ করতে না পারলে সে শিক্ষা আসলে কোনো কাজে আসে না। সেই শিক্ষা দিয়ে আমি হয়তো উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারব। কিন্তু সেই শিক্ষাকে সঠিকভাবে জীবনে প্রয়োগ করে আমি এগিয়ে যেতে পারব না। সেই কারণে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা একটা বড় পরিবর্তন নিয়ে আসছি। যেখানে শিক্ষার্থীরা একটি আনন্দময় পরিবেশের মধ্যে পড়বে।
শিক্ষাটাই হবে আনন্দময়। তারা পড়ে পড়ে শিখবে। খেলাধুলার মধ্যে শিখবে। সামাজিক কর্মকা-ে শিখবে এবং শিক্ষাটা কেবলমাত্র বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকবে না। প্রকল্প করে করে তারা নানা কিছু শিখবে।’ বৃহস্পতিবার (২ জুন) দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর খড়খড়ি বাইপাসে অবস্থিত বেসরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদের পক্ষে সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শ্রেণিকক্ষে বই পড়িয়ে পড়িয়ে বাস্তব দক্ষতা হয় না। অর্জিত শিক্ষাগুলোর বাস্তবতা কাজের মধ্য দিয়ে বা চর্চার মধ্য দিয়ে হয়। তাই আমরা দেশের প্রাথমিক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এরমধ্যে দিয়ে অর্জিত শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আর ঘাটতি থাকবে না। তারা সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে। আর এভাবে যখন শিখবে, তখন সেই শিক্ষাটাকে তারা আত্মস্থ করতে পারবে। তখন আর ভুলে যাওয়ার কোনো বিষয় থাকবে না। আজকে সারা বিশ্ব ‘সফট স্কিল’র কথা বলছে। আমি শুধু পড়াশোনা শিখলাম, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করলাম, আমি কারিগরি বা প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করলাম, সেটাও যথেষ্ট নয়। তার সঙ্গে আরও কিছু দক্ষতা, আরও কিছু মূল্যবোধের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা অনেক কিছুই বলি কিন্তু যাকে বলি তাকে তার মতো করে বোঝাতে পারলাম কিনা তা জানি না। আমাদের যোগাযোগের এ দক্ষতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকে না। এজন্য কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে হবে, সুক্ষভাবে চিন্তা করার দক্ষতা থাকতে হবে, সমস্যা নিরূপণ করা এবং সমাধানের করার দক্ষতা, সহযোগিতামূলক কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার দক্ষতা, নেতৃত্বের দক্ষতা এমন আরও অনেক দক্ষতা আছে যা আমাদের শিক্ষার্থীদের অর্জন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের ঈঙ্গিত দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের কেবল ডিগ্রি দিয়ে, গ্র্যাজুয়েট করে ছেড়ে দিলেই হবে না। তাদের কর্মদক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। যেন তারা এখান থেকে বেরিয়ে দেশ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের জন্য সম্পদে পরিণত হয়। তারা যেন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে যেতে পারে। সরকার সেই লক্ষ্যে নতুন এক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের কাজ করছে। আমরা শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত ও মুখস্থ বিদ্যা থেকে বের করে সৃষ্টিশীল শিক্ষায় সুদক্ষ করতে চাই। বঙ্গবন্ধু কন্যা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছেন। এখন তিনি সামনের দিনে এ বাংলাদেশকে এক ‘উদ্ভাবনী বাংলাদেশ’ হিসেবে দেখতে চান।
সরকার ২০১০ সালের শিক্ষানীতি সংশোধন, পরিমার্জন ও সংযোজনের কাজ করছে উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বয়সের যেসব জায়গায় বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করছি। পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও এ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষাকে জোর দিতে হবে। কারণ ইংরেজি কেবল শিক্ষা নয়, এটি একটি হাতিয়ার। এর সঙ্গে আইসিটি পড়াতে হবে। তবে যেই বিষয়ই পড়ুক না কেন আমি সবাইকে সব বিষয়ের সঙ্গে অবশ্যই সাহিত্য ও দর্শন পড়াতে বলব। কারণ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আর একজন মানুষের মধ্যে যদি সাহিত্যবোধ সঞ্চারিত না হয়, সাহিত্য যে জীবনবোধ তৈরি করে সেটি যদি সঞ্চারিত না হয়, দর্শনবোধ তৈরি না হয়- তাহলে তার পক্ষে প্রকৃত মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। খুব বেশি পড়তে হবে তা নয়, কিন্তু এগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার কেবল একটি ছাপানো পুস্তিকা নয়। এ নির্বাচনী ইশতেহার শুধু নির্বাচনের জন্যও নয়। এটি জনগণের সঙ্গে, ভোটারের সঙ্গে, আওয়ামী লীগের একটি চুক্তি। জনগণ আওয়ামী লীগকে ম্যান্ডেট দিলে ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে। আর জনগণ তার সুফল পায়। আজকের বাংলাদেশ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধু কন্যার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার করেছিলেন। এখন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছি। তিনি এখন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিণত করতে চান। আমরা তা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তাই এ পদ্মা সেতু কেবল পদ্মা সেতু নয়- এটি আমাদের আত্মমর্যাদা-আত্মবিশ্বাসের প্রতীক, আমাদের বিজয়ের প্রতীক। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিক ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিল আফরোজ বেগম ও ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর সাইদুর রহমান খান, মাগুরা-১ আসন আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ওসমান গণি তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ৯টি বিভাগের সাড়ে ৩ হাজারের বেশি গ্র্যাজুয়েট অংশ নেন। এ সময় এসব গ্র্যাজুয়েটদের আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় দুজন শিক্ষার্থীকে ‘চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ ও নয়জন শিক্ষার্থীকে ‘ভাইস-চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ দেওয়া করা হয়। সমাবর্তন সভাপতি ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দিপু মনি তাদের হাতে এ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন। আজকের তানোর