যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা, তাতে এ সময় নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি করা কিংবা আগের চুক্তিটাকে (উদাহরণস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত ও পরে বাতিল করা কম্প্রিহেন্সিভ অ্যান্ড প্রগ্রেসিভ অ্যাগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্সপ্যাসিফিক অ্যাগ্রিমেন্ট (সিপিটিটিপি) পুরোদমে বাস্তবায়ন করার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এ ঘটনাকে পুরোপুরি খারাপ সংবাদ হিসেবে পাঠ করা ঠিক হবে না।
প্রকৃতপক্ষে ১২টি দেশের পৃথক প্রয়োজন বিবেচনায় আইপিইএফের মতো একটি শিথিল চুক্তির প্রস্তাব যথার্থ। উদাহরণস্বরূপ, তাইওয়ানের প্রসঙ্গটি ধরা যাক। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে আইপিইএফ জোটে তাইওয়ানকে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানায়নি। চুক্তির প্রস্তাবের ক্ষেত্রে নমনীয়তা থাকায় তাইওয়ানের মতো জটিল ইস্যুটাকে আত্তীকরণ করা সম্ভব হয়েছে।
বাইডেন যখন নিরাপত্তা থেকে এশিয়ার বাজারের দিকে নজর ঘোরাচ্ছেন, তখন চীন বিপরীত পথে হাঁটতে শুরু করেছে। তারা অর্থনীতি থেকে নিরাপত্তার দিকে ঝুঁকছে। চীনের মহাপরিকল্পনায় দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক আধিপত্য ছিল কেন্দ্রীয় বিষয়।
সর্বোপরি, বাইডেনের এ সফর এশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে প্রধানটি হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এশিয়ার গুরুত্ব রয়েছে। আবার ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া থেকে সাময়িক সময়ের জন্য ইউরোপের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই গুরুত্বটা নিরাপত্তা ও অর্থনীতি দুই ইস্যুতেই বুঝতে হবে। প্রকৃতপক্ষে আইপিইএফ জোট গঠনের ঘোষণার মধ্য আর যে বিষয় এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, সেটি হলো কোয়াড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র পরিপূর্ণভাবে সন্তুষ্ট নয়। এর কারণ হচ্ছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত প্রতিযোগিতার মধ্যে অর্থনীতি ও নিরাপত্তা—দুটিই ভূরাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।
বাইডেন যখন নিরাপত্তা থেকে এশিয়ার বাজারের দিকে নজর ঘোরাচ্ছেন, তখন চীন বিপরীত পথে হাঁটতে শুরু করেছে। তারা অর্থনীতি থেকে নিরাপত্তার দিকে ঝুঁকছে। চীনের মহাপরিকল্পনায় দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক আধিপত্য ছিল কেন্দ্রীয় বিষয়। চীন প্রধানত সারা বিশ্বের কারখানা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছিল। একই সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রধান একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল চীন। কয়েক দশক ধরে চীন তাদের বিশাল অর্থনীতির সুযোগে অনেকগুলো দেশের প্রধান ব্যবসায়ী অংশীদারে পরিণত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে চীনের সীমান্তবর্তী দেশগুলোর ক্ষেত্রে, সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী না হয়েও মূল প্রভাব সৃষ্টিকারী হয়ে উঠেছে চীন।
অন্যভাবে বলা যায়, বিশ্বে চীনের শক্তি অর্থনৈতিক শক্তির ওপর ভর করেই গড়ে উঠেছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমলে অর্থনৈতিক আধিপত্যের নীতির সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও যুক্ত হয়েছে। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ন্যাটো সম্প্রসারণের চেষ্টা হিসেবে কোয়াড গঠনের উদ্যোগ নিলে তার প্রতিক্রিয়ায় চীন নিরাপত্তাকে নিজেদের নীতির অংশ করে নিয়েছে।
এ বিবেচনায়, সম্প্রতি বিওএও ফোরামে সি চিন পিং চীনের বৈশ্বিক নিরাপত্তাবিষয়ক উদ্যোগগুলো ঘোষণা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় জোট গঠনে সির অভিপ্রায়ও আমরা সেখানে বুঝতে পেরেছি। উদীয়মান অর্থনীতির জোট ব্রিকসের সম্প্রসারণের ঘোষণাও একই উদ্দেশ্য থেকেই এসেছে।
সবকিছু দেখে এটা পরিষ্কার, বাইডেন এবং সি একে অপরকে ধরে ফেলার জন্য যা যা করার তা-ই করছেন। কিন্তু দুই দেশের ক্ষেত্রেই আগে তারা যা করত, তার সম্পূর্ণ বিপরীত কাজটা করতে হচ্ছে। শুধু নিরাপত্তা নয়, সহযোগী দেশগুলোকে এখন অনেক বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়ার কথা বলতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। চীনের ক্ষেত্রে বিপরীতটা সত্য। আর এটাই এখন ঘটছে। এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত। সূত্র : প্রথমআলো,