শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৫৪ pm
নজরুল ইসলাম বাচ্চু, চারঘাট : রাজশাহীর চারঘাটে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে কৃষি জমিতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি জৈব সার ও কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ, প্রকল্প প্রদর্শনী, ইউনিয়ন ও ব্লক পর্যায়ে মাঠ দিবস ও কৃষক সমাবেশে জমির গুনগত মান রক্ষায় জৈব সারের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত বিষয়াদী কৃষকদের মাঝে প্রচারনা চালানো হয়।
জৈব সার ব্যবহারের ফলে ফসলে উৎপাদন ও গুনগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কৃষিজমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা খন্দকার ফিরোজ মাহমুদ। এতে করে একদিকে যেমন খরচ কমছে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের সহস্রাধিক কৃষক প্রশিক্ষণ নিয়ে জৈব সার ও জৈব কীটনাশক উৎপাদন করছে এবং নিজ নিজ জমিতে প্রয়োজন অনুযায়ী তা প্রয়োগ করছে। গোবর ও কেচোঁ দিয়ে তৈরি করছেন ভার্মিকম্পোষ্ট, গোবর, খৈল ও কাঠের গুড়া দিয়ে তৈরি করছে কুইক কম্পোষ্ট এবং মেহেগনি ফলের বীজ, নিমগাছের পাতা সংগ্রহন করে, তা দিয়ে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে কীটনাশক তেল তৈরি করছে। এরপর এই তেল স্প্রে মেশিনের পানির সঙ্গে মিশিয়ে ফসলে রাসয়নিক কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন। ঝিকরা গ্রামের কৃষক খোরশেদুল বলেন, কৃষি জমিতে পোকা ও ইদুর দমনে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি এই কীটনাশক খুবই উপকারী এবং কৃষিবিভাগ বলছে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে এই তেল বেশ কাজ দিচ্ছে।
সরদহ ইউনিয়নের ঝিকরা উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক মামুন আলী জানান, পোকামাকড়েরর পাশাপাশি ইদুঁর ফসলের ব্যপক ক্ষতি করে। তাই উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে আমি জমিতে জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ব্যবহার শুরু করেছি। জমিতে রাসায়নিক কীটনাশক ছিটানোর সময় অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। নাক-মুখ বন্ধ রাখতে হয়। নইলে স্বাস্থের ক্ষতি হয়। কিন্তু জৈব কীটনাশক ব্যবহারে এসব সমস্যা হয় না। তাছাড়া জৈব কীটনাশক ব্যবহারে উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেছে। নিজের জমিতে ব্যবহারের পরে উদ্বৃত্ত জৈব সার আমরা কেজি প্রতি ১২-১৫ টাকা দরে অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রয় করি।
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এমন জৈব সার ও কীটনাশক তৈরিতে কৃষকদের সহযোগীতা করছেন উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থানাপাড়া সোয়ালোজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি। সংগঠনের নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান আলী বলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন হলেও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে জমিতে জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া উপায় নাই। সরকারী প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সংস্থার সাসটেইনেবুল এগ্রিকালচার প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার কৃষকদের রাসয়নিক কীটনাশকের বিকল্প ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা বিকল্প জৈব সার ও কীটনাশক তৈরি প্রশিক্ষন গ্রহন করে নিজ নিজ জায়গায় জৈব সার উৎপাদন করছে এবং জমিতে ব্যবহার করছে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফন নাহার বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্নতা অর্জনের পর এখন সরকারীভাবে নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে ফসলে কিভাবে রাসয়নিক সার ও কীটনাশকের বিকল্প ঔষুধ বের করা যায় সেজন্যে আমরা কিছু পরিকল্পনা গ্রহন করেছি। জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের বিনা মূল্যে ভার্মিকম্পোষ্ট সার বিতরন করছি এবং প্রশিক্ষনের মাধ্যমে জৈব সার তৈরি ও জমিতে প্রয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করছি। ফলে কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ও পোকা দমনে একদিকে যেমন খরচ কমছে অপর দিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষক। পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করছে কৃষকরা। আজকের তানোর