শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৫৫ am

সংবাদ শিরোনাম ::
মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য কোথাও বসাতে না পেরে বিক্রি করলেন ভাঙারির দোকানে রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই : আনন্দবাজারকে জামায়াতের আমির আগামী তিন মৌসুমের জন্য আইপিএলে যে ১৩ ক্রিকেটারের নাম দিল বিসিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ থামিয়ে রাখেননি অভিনেত্রী হিনা খান নগরীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১ জন গ্রেপ্তার তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাঁচার রোধে হট্টগোল মারপিট দুর্গাপুরে হোজা নদী পুন:খনন ও দখলমুক্ত দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলিপি রাজশাহীতে সমন্বয়ক পেটানোর ব্যাখ্যা দিল মহানগর ছাত্রদল আঘাতের দাগে সম্পর্কের রূপান্তর ! রাজু আহমেদ তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না নগরীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত আগামী ২৯ নভেম্বর খুলছে রাজশাহী সুগার মিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে স্মরণসভা রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১১ বাগমারা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেবের ইন্তেকাল তানোরে মসজিদের এসি অফিসার্স ক্লাবে, ইমামের অর্থ আত্নসাৎ প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তানোরে বিএনপির কর্মীসভা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮ জন গ্রেপ্তার লীজকৃত পুকুর দখল, মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ
স্বদেশপ্রেম ও স্বদেশী চেতনা ছিল যার অস্থিমজ্জায় : তারাপদ আচার্য্য

স্বদেশপ্রেম ও স্বদেশী চেতনা ছিল যার অস্থিমজ্জায় : তারাপদ আচার্য্য

ভাষা আন্দোলনের কালজয়ী গানের রচয়িতা, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবী, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি আমাদের গর্ব বাংলাদেশের গর্ব। তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বাংলাদেশ প্রগতিশীল, সৃজনশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন অগ্রপথিককে হারাল। তার একুশের অমর সেই গান বাঙালি জাতিকে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তির আন্দোলনে অসীম সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছিল। যে গান দেশের সর্বস্তরের মানুষকে প্রাণিত করে। একটি জাতির জীবনে এমন কিছু গান, কবিতা, বাণী থাকে যা বিশেষ মুহূর্ত, দিবস বা মাসের মাহাত্ম্য ঘোষণা করে সগৌরবে।
এ সব গান, কবিতা, বাণীগুলোকে বলা যায় টনিক বা সঞ্জীবনী। যা মানুষের হৃদয়কে চাঙ্গা করে, মানুষকে আলোড়িত, শিহরিত, অনুরণিত করে। মানুষকে মনে করিয়ে দেয় তার শেকড়ের কথা। এ গান, কবিতা, বাণীগুলো কালের পরিক্রমায় মানুষের জীবনযাত্রা তথা সংস্কৃতির সঙ্গে এমনভাবে মিশে যায় যে এই বিশেষ টনিক বা সঞ্জীবনী ছাড়া মনে হবে ওই বিশেষ মুহূর্ত, দিবস বা মাসটিই আসেনি। তেমনই একটি কবিতা বা গান হলো- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।’??গানটি প্রথম প্রকাশিত হয় একটি লিফলেটে। সেখানে একুশের গান শিরোনামে কবিতা আকারে ছাপা হয়েছিল। ১৯৫৩ সালে একুশে সংকলনে এটি স্থান পায়। তৎকালীন সরকার সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করে।
ঢাকা কলেজের কিছু ছাত্র কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার স্থাপনের চেষ্টা করার সময় গানটি গেয়েছিল। এ কারণে তাদের কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ গানটি এখন শুধু বাংলাদেশ বা বাংলা ভাষার মানুষই নয়, সারা বিশ্বের মানুষও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। কারণ একুশে ফেব্রম্নয়ারি এখন সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আর এই গানটি বর্তমানে হিন্দি, মালয়, ইংরেজি, ফরাসি, সুইডিশ, জাপানিসহ ১২টি ভাষায় গাওয়া হয়। এ গানটিতে গভীর বেদনা লুকায়িত রয়েছে। রয়েছে সত্য ইতিহাস, রয়েছে অন্যায় ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে জেগে ওঠার আহ্বান। গানটিতে মহান ভাষা আন্দোলনে আত্মাহুতি দানকারী শহীদদের ত্যাগ, মহিমার কথা ফুটে উঠেছে ভিন্ন রকম এক কাব্যিক দ্যোতনায়।
বরেণ্য এ সাংবাদিকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘আবদুল গাফ্?ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ প্রগতিশীল, সৃজনশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন অগ্রপথিককে হারাল। তার একুশের অমর সেই গান বাঙালি জাতিকে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তির আন্দোলনে অসীম সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছিল। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্ট। লেখনীর মাধ্যমে তিনি আজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কাজ করে গেছেন।’ শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তার মেধা-কর্ম ও লেখনীতে এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছেন। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক মননকে ধারণ করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে সমর্থন করে জাতির সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত সাপ্তাহিক জয় বাংলা পত্রিকায় বিভিন্ন লেখালেখির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। পরে তিনি প্রবাসে থেকেও তার লেখনীর মাধ্যমে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন।’ বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর বরেণ্য সাংবাদিক, কলাম লেখক, কবি ও গীতিকার আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বাংলাদেশের একজন অতুলনীয় অভিভাবক ছিলেন। বাংলাদেশের যে কোনো সংকটে তিনি নির্ভীকভাবে এগিয়ে এসেছেন। তার মহাপ্রয়াণে বাংলাদেশ একজন প্রকৃত অভিভাবক হারালেন, এই ক্ষতি অপূরণীয়।
উল্লেখ্য, ৮৭ বছর বয়সি গাফ্ফার চৌধুরী ১৯৭৪ সাল থেকে ব্রিটেনে বসবাস করছিলেন। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু দিন ধরে হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। বলা দরকার, বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা বাঁক বদলের সাক্ষী গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন একাত্তরে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয় বাংলার নির্বাহী সম্পাদক। ১৯৭৪ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করলেও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে তার কলম সোচ্চার ছিল সবসময়। প্রবাসে থেকেও ঢাকার পত্রিকাগুলোতে তিনি যেমন রাজনৈতিক ধারাভাষ্য আর সমকালীন বিষয় নিয়ে একের পর এক নিবন্ধ লিখে গেছেন, তেমনি লিখেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, স্মৃতিকথা ও প্রবন্ধ।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া গ্রামে। ছাত্রজীবনে লেখালেখিতে হাতেখড়ি হয়েছিল তার। ১৯৪৯ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সম্পাদিত মাসিক সওগাত পত্রিকায় তার গল্প প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’। এ ছাড়া তার সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি ছাত্রজীবনে। ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকাকালে যোগ দেন দৈনিক ইনসাফ পত্রিকায়। ১৯৫১ সালে যোগ দেন খায়রুল কবীর সম্পাদিত দৈনিক সংবাদের বার্তা বিভাগে। ১৯৫৬ সালে যোগ দেন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেফাকে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলমযোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। জয় বাংলা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মডারেটরের ভূমিকাও পালন করেন। স্বাধীনতার পর ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জনপদের প্রধান সম্পাদক ছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে লন্ডনে পাড়ি জমান। ১৯৭৬ সালে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সেখানে ‘বাংলার ডাক’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ‘সাপ্তাহিক জাগরণ’ পত্রিকায়ও কিছু দিন কাজ করেন। পরে তিনি ‘নতুন দিন’ ও ‘পূর্বদেশ’ পত্রিকা বের করেন। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ইউনেস্কো পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি তার কাজের মধ্যদিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার অবদান কখনো ভুলে যাওয়ার নয়। তার লেখনীতে উদ্দীপ্ত হবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রস্থানে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো, তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। এ দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততা বেশ উজ্জ্বল।
তিনি জীবনের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় সবসময় বহন করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য ভালোবাসা। সম্পৃক্ত হয়েছেন বহুবিদ জাগরণী কর্মকান্ডে। ঐতিহ্যের মূল ভিত্তিতে থেকে তিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতি সাধনায় ব্যাপৃত ছিলেন। তিনি চিন্তা-নায়ক, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ধারক, পরামর্শদাতা ও পথপ্রদর্শক। তার সান্নিধ্যে উদ্দীপিত উজ্জীবিত হয়েছেন অনেকেই।
স্বদেশপ্রেম স্বদেশী-চেতনা ছিল যার অস্থি-মজ্জায়। তিনি আজ দূর আকাশে মিলিয়ে গেছেন। তিনি তার জীবন ও কর্মের মধ্যদিয়ে যে অবদান রেখে গেছেন তা স্মরণীয় ও অক্ষয় হয়ে থাকবে। এই গুণী ও আলোকিত মানুষটির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে জানাই গভীর সমবেদনা। [ তারাপদ আচার্য : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক ]

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.